<p>নবাব সিরাজউদ্দৌলার মতো বাংলার আরেক নবাব মীর কাসিম চেষ্টা করেছিলেন বাংলা-বিহার-ওড়িশাকে ইংরেজদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য। পলাশীর যুদ্ধের আট বছর পর শেষ চেষ্টা হিসেবে বক্সার যুদ্ধ করেন সেই সময়কার বাংলার নবাব মীর কাসিম। সেই যুদ্ধে তিনি জয়ী হলে বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস হয়তো অন্যরকম হতো। এই নবাব বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার চেয়ে বেশি সময় (১৭৬০-১৭৬৩ সাল) বাংলার সিংহাসনে আসীন ছিলেন। </p> <p>১৭৬০ সালের ২০ অক্টোবর শ্বশুর মীরজাফরকে অপসারণ করে তাঁরই জামাতা মীর কাসিমকে মুর্শিদাবাদের মসনদে বসায় ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি। সুদক্ষ ও উচ্চাভিলাষী মীর কাসিম প্রথম সুযোগেই নিজের অবস্থান পোক্ত করায় উদ্যোগী ছিলেন। ইংরেজ সেনাবাহিনীর ব্যয় নির্বাহের জন্য বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রামের রাজস্ব তুলে দিয়েছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির হাতে।</p> <p>মীর কাসিম ভেবেছিলেন, যেহেতু তিনি ইংরেজ কম্পানি ও কর্মকর্তাদের প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তাঁকে সিংহাসনে বসানোর ঋণ শোধ করেন, কম্পানির উচিত তাঁকে স্বাধীনভাবে বাংলা শাসন করতে দেওয়া। কিন্তু কম্পানির তেমন কোনো অভিপ্রায় ছিল না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। তবে নবাবের চতুরতায় এবং কলকাতা কাউন্সিলে দলাদলির কারণে তিন বছর পর্যন্ত যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।</p> <p>এই সময়ের মধ্যে নানা কৌশলে নিজেকে গোছানোর চেষ্টা করতে থাকেন মীর কাসিম। মোগল বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমের স্বীকৃতি-সনদ লাভ করেন।</p> <p>অবশেষে ১৭৬৩ সালের গ্রীষ্মকালে নবাব বাহিনীর সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ বাধে। কাটোয়া, মুর্শিদাবাদ, গিরিয়া, সুটি, উদয়নালা ও মুঙ্গেরে নবাব বাহিনীর সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নবাব পাটনায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে অযোধ্যায়। অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং তখনকার রাজ্যহারা মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন। তিন নেতা ত্রিপক্ষীয় শক্তিসংঘ গঠন করে ইংরেজদের হাত থেকে বাংলাকে পুনরুদ্ধারে সংকল্পবদ্ধ হন। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে শরৎকালে আবার যুদ্ধ শুরু হয়। ২২ অক্টোবর বক্সার নামক স্থানে চূড়ান্ত যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং ইংরেজ বাহিনী জয়লাভ করে। পরাজিত মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ইংরেজদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেন। সুজাউদ্দৌলা রোহিলাখণ্ডে ফিরে যান এবং অযোধ্যা ইংরেজদের পদানত হয়। মীর কাসিম নিরুদ্দেশ হন এবং ১৭৭৭ সালে দিল্লির কাছে কোনো এক স্থানে তাঁর মৃত্যু হয়।</p> <p><strong>রিদওয়ান আক্রাম</strong></p> <p> </p> <p>[আরো বিস্তারিত জানতে বাংলাপিডিয়া ও পত্রপত্রিকায় মীর কাসিমের সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো।]</p>