<p><strong>স্তন ক্যান্সার কী?</strong></p> <p>দেহের অন্যান্য স্থানের মতো স্তনে অস্বাভাবিক কোষ বাড়ার কারণে কোনো চাকা বা পিণ্ডের সৃষ্টি হলে তাকে টিউমার বলে। বিনা প্রয়োজনে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন থেকেই মূলত এর সৃষ্টি। স্তনে টিউমার দুই ধরনের হয়। বিনাইন টিউমার, যা ক্ষতিকারক নয়। এটা উৎপত্তিস্থলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। দূরের বা কাছের অন্য কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে  না। আরেকটা হচ্ছে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যা আগ্রাসী বা ক্ষতিকর। এই টিউমার উৎপত্তিস্থলের সীমানা ছাড়িয়ে আশপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা গ্রন্থি আক্রান্ত করে, এমনকি রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে দূরের কোনো অঙ্গে আঘাত হানতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print Version Online/print /2021/10.October/23-10-2021/kalerkantho-da-1a.jpg" style="float:left; height:1200px; margin:12px; width:341px" />স্তনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই ক্যান্সার</strong></p> <p>স্তন ক্যান্সার সাধারণত স্তনের দুধ বাহিত নালিতে হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য টিস্যু থেকেও শুরু হতে পারে। একটি পিণ্ড বা চাকা হিসেবেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি প্রথম ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে বড় হয়ে শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। স্তনের সঙ্গে কাছাকাছি বগলতলার লসিকা গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ডগুলোর খুবই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকায় এগুলোতে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে।</p> <p> </p> <p><strong>স্তন ক্যান্সারের ব্যাপ্তিকাল</strong></p> <p>সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের নারীদের মধ্যেও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। প্রতিবছর বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ১৪ হাজার এবং মারা যান প্রায় সাড়ে ছয় হাজার।</p> <p> </p> <p><strong>ঝুঁকি বা রিক্স ফ্যাক্টর</strong></p> <p>জেন্ডার বা লিঙ্গ : পুরুষেরও স্তন ক্যান্সার হতে পারে। তবে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা শতগুণ বেশি।</p> <p>বয়স : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। পশ্চিমা বিশ্বে সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পর ঝুঁকি বেশি বাড়ে। তবে অজানা কারণে আমাদের দেশে ৪০ বছরের পরই বেশি দেখা যায়।</p> <p>জিনগত : বিআরসিএ-১ ও ২ নামের জিনের অস্বাভাবিক মিউটেশন ৫ থেকে ১০ শতাংশ দায়ী স্তন ক্যান্সারের জন্য।</p> <p>বংশগত : কারো পরিবারের কোনো নিকটাত্মীয় যেমন মা, খালা, বড় বোন বা মেয়ে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকলে তাঁরও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।</p> <p>পিরিয়ড/মাসিক : ১২ বছর বয়সের আগে যেসব নারীর পিরিয়ড শুরু হয় এবং ৫০ বছর বয়সের পর পিরিয়ড বন্ধ হয়, তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।</p> <p><strong>পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি</strong></p> <p>সন্তান সংখ্যা : নিঃসন্তান নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।</p> <p>বেশি বয়সে সন্তান ধারণ : ৩০ বছর বয়সের পর বিয়ে এবং প্রথম সন্তানের মা হওয়া স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।</p> <p>ব্রেস্ট ফিডিং না করানো : সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানোর অভ্যাস স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।</p> <p>খাদ্যাভ্যাস : শাক-সবজি ও ফলমূল কম খেয়ে চর্বি ও প্রাণিজ আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খেলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।</p> <p>ওজন : অতিরিক্ত ওজন এবং কায়িক পরিশ্রমের অনভ্যাস এর ঝুঁকি বাড়ায়।</p> <p>এ ছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে—তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, তামাকজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার, স্তনে কোনো অস্বাভাবিকতা থাকা ইত্যাদি।</p> <p> </p> <p><strong>পরীক্ষা</strong></p> <p>দুটি উপায়ে প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়। কোনো লক্ষণ টের পেলে জরুরিভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো উচিত। আবার যাঁদের মধ্যে লক্ষণ নেই কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে তাঁদের মধ্য থেকে রোগী শনাক্ত করা উচিত।</p> <p> </p> <p><strong>লক্ষণ</strong></p> <p>♦ স্তনে চাকা বা পিণ্ড</p> <p>♦ নিপল বা বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া, অসমান বা বাঁকা হওয়া</p> <p>♦ নিপল দিয়ে অস্বাভাবিক রস বা রক্তক্ষরণ হওয়া</p> <p>♦ চামড়ার রং বা চেহারায় পরিবর্তন</p> <p>♦ বগলতলায় পিণ্ড বা চাকা।</p> <p> </p> <p><strong>স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং</strong></p> <p>যাঁদের লক্ষণ দেখা দেয়নি কিন্তু ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি, সহজ কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে তাঁদের মধ্য থেকে রোগী খুঁজে বের করার নাম ক্যান্সার স্ক্রিনিং। স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং করার প্রধানত তিনটি পদ্ধতি রয়েছে।</p> <p> </p> <p>♦ মেমোগ্রাম বা বিশেষ ধরনের এক্স-রে। এর সাহায্যে স্তনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে।</p> <p>♦ ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন বা চিকিৎসক দিয়ে স্তন পরীক্ষা।</p> <p>♦ সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন বা নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা।</p> <p> </p> <p><strong>মেমোগ্রাম</strong></p> <p>উন্নত দেশে স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ে প্রধানত মেমোগ্রামকে বেছে নেওয়া হয়। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের এক, দুই বা তিন বছর পর পর নিয়মিত এই পরীক্ষা করা হয়। এটি একটি বিশেষ ধরনের এক্স-রে, যার মাধ্যমে স্তনে খুব ছোট চাকা বা অন্যান্য অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে। এই পদ্ধতি তুলনামূলক ব্যয়বহুল এবং খুব সহজলভ্য নয় বলে উন্নয়নশীল দেশে অন্য পদ্ধতিগুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়।</p> <p> </p> <p><strong>ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন</strong></p> <p>চিকিৎসক বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে স্তন পরীক্ষা করাকে ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন বলে। চিকিৎসক স্তন ও বগলতলায় কোনো চাকা বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন আছে কি না তা  সুনির্দিষ্ট নিয়মে সযত্নে পরীক্ষা করে দেখেন।</p> <p> </p> <p><strong>নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা</strong></p> <p>একজন নারী নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করবেন। মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে যদি নিয়মিত নিজের স্তন ভালোভাবে পরীক্ষা করেন তাহলে যেকোনো ধরনের অসামঞ্জস্য বা পরিবর্তন নিজেই প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করতে পারবেন।</p> <p> </p> <p><strong>কিছু পরামর্শ</strong></p> <p>♦ ২০ বছর বয়স থেকে সারা জীবন প্রতি মাসে একবার নিজের স্তন পরীক্ষা করুন।</p> <p>♦ অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন আপনার কাছে ধরা পড়লে চিকিৎসক বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে স্তন পরীক্ষা করান।</p> <p>♦ চিকিৎসক যদি কোনো চাকা বা পিণ্ড বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন শনাক্ত করেন, তাহলে তাঁর পরামর্শে মেমোগ্রাম, স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম বা অন্য পরীক্ষাগুলো করানো উচিত।</p> <p> </p> <p>মনে রাখবেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে স্তন ক্যান্সার নিরাময়ের সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।</p>