<p>আফগানিস্তানজুড়ে ধারণার চেয়ে দ্রুতগতিতে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তি, এমন মন্তব্য করেছেন শীর্ষ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সিনেটে আর্মড সার্ভিস কমিটির শুনানিকালে গত বুধবার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা আফগানিস্তানের আজকের পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তিকে দায়ী করেন।</p> <p>২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ও তালেবানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে এ বছর মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। তবে শর্ত হিসেবে বলা হয়, তালেবান অবশ্যই আফগান সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে নেবে। বাস্তবে সেই শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে গত মে মাস থেকে দেশজুড়ে অভিযান শুরু করে তালেবান। ধারাবাহিকভাবে এগোতে থাকা তালেবান গত ১৫ আগস্ট বিনা যুদ্ধে কাবুলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এ মাসের শুরুতে সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার কাজে হাত দেয় তালেবান।</p> <p>মার্কিন সিনেটের আর্মড সার্ভিস কমিটি গত মঙ্গলবার থেকে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করলে আফগানিস্তান ইস্যুতে নানা কথা উঠে আসে। এদিন জেনারেল মার্ক মিলি ও জেনারেল ফ্রাংক ম্যাকেঞ্জি কমিটিতে রিপাবলিকান সিনেটরদের জানান, আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে আড়াই হাজার সেনার ছোট একটি দল রেখে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই পরামর্শ আমলে না নিয়ে সব সেনা সরিয়ে নেন।</p> <p>তালেবান এখনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী—এমন মন্তব্য করে গত মঙ্গলবার জেনারেল মিলি আরো বলেন, তালেবানের ক্ষমতা দখলের কারণে সন্ত্রাসী হামলা থেকে আমেরিকানদের রক্ষা করা কঠিন। তালেবান এখনো আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি, এমন মন্তব্যও করেন তিনি।</p> <p>এর প্রতিক্রিয়ায় তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের কোনো দেশ তাদের হুমকিতে নেই।’ তিনি আরো বলেন, আফগানিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পাদিত দোহা চুক্তিতে তালেবান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নেতিবাচক মন্তব্য না করে বিশ্বাঙ্গনের গণতন্ত্র ও সহযোগিতার সম্পর্ক বেছে নেওয়া উচিত।</p> <p>মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে শোরগোল ফেলে দেয়। এ অবস্থায় সিনেট কমিটির দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান ম্যাকেঞ্জি বলেন, দোহা চুক্তি আফগান সরকারের ওপর শক্তিশালী মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলতে পেরেছিল। আফগান সরকার বুঝতে পেরেছিল যে নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যেই তাদের দেওয়া সব সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। ওই চুক্তি মার্কিন বাহিনীর ওপরও ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন তিনি। ম্যাকেঞ্জি বলেন, দোহা চুক্তির পর গত এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সেনা কমানোর যে ঘোষণা দেন, তা ছিল কফিনে ঠোকা শেষ পেরেক।</p> <p>ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, দোহা চুক্তি তালেবানকে শক্তিশালী হতে সহায়তা করেছে। দোহা চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারিত হয়। এ কারণে তালেবান যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর জন্য হুমকি হয়ে ওঠা আল-কায়েদাকে প্রতিরোধ করার সুযোগ পেয়েছে। চুক্তি অনুসারে তালেবানের ওপর মার্কিন বিমান হামলা বন্ধের সিদ্ধান্ত তালেবানকে আরো শক্তিশালী করেছে। তালেবান আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা বাড়িয়েছে। সাপ্তাহিক হিসাবে তালেবানের হামলায় আফগানদের মৃত্যু বেড়ে যায়। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।</p>