<p>এক ধরনের ছোট কুমিরের চামড়ার তৈরি হ্যান্ডব্যাগ, সুগন্ধির শিশি, নানা ধরনের থালা ও চায়ের কাপ, ঝাপসা হয়ে যাওয়া হাতে লেখা চিঠি, দামি শ্যাম্পেনের বোতল, কী নেই গোপন সংগ্রহটিতে! তালিকা অনুযায়ী নমুনার সংখ্যা পাক্কা সাড়ে পাঁচ হাজার। আর এই ভিন্ন ধরনের সামগ্রীগুলো সবই এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত নৌদুর্ঘটনার শিকার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরের এক গোপন স্থানে গুদামজাত করা হয়েছে টাইটানিক থেকে এ পর্যন্ত উদ্ধার করা মূল্যবান প্রত্নবস্তুগুলো। বিবিসিকে সংগ্রহগুলো ঘুরে দেখে কিছু সামগ্রীর পেছনের কাহিনি আবিষ্কার করার এক বিরল সুযোগ দেওয়া হয়েছিল সম্প্রতি।</p> <p>সাগরের প্রায় আড়াই মাইল নিচ থেকে নিদর্শনগুলো উদ্ধার করেছে আরএমএস টাইটানিক ইনকরপোরেটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আরএমএস টাইটানিকের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক টোমাসিনা রে জানালেন, হ্যান্ডব্যাগটির মালিক ছিলেন মারিয়ান মিনওয়েল নামের একজন তৃতীয় শ্রেণির যাত্রী। মেয়েদের হ্যাট বানানো ছিল তাঁর পেশা। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সদ্যোবিধবা হওয়া মেয়ের সঙ্গে মিলিত হতে যাচ্ছিলেন ৬৩ বছর বয়সী মিনওয়েল।</p> <p>তাঁর ব্যাগটি গভীর সাগরের নোনা পানির মধ্যে এত দিন থেকেও অক্ষত আছে। ব্যাগের ভেতরের ছোট কিছু জিনিসও সংরক্ষিত আছে মোটের ওপর ভালোভাবেই। এর মধ্যে রয়েছে একটি চিঠি ও এক নারীর বিবর্ণ হয়ে যাওয়া ছবি। চিঠিটি ছিল মিনওয়েলের লন্ডনের বাড়িওয়ালার রেফারেন্স।</p> <p>এতে বলা হয়, ‘মিজ মিনওয়েল বরাবরই একজন ভালো ভাড়াটে ছিলেন। ভাড়া দিতে কখনোই দেরি করেননি তিনি।’ ছিল মেডিক্যাল পরিদর্শন কার্ড। সে আমলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ইচ্ছুক তৃতীয় শ্রেণির জাহাজযাত্রীদের প্রমাণ করতে হতো যে তাদের সংক্রামক রোগ নেই।</p> <p>মারিয়ান মিনওয়েলের ভাগ্য নিতান্ত মন্দই বলতে হবে। হোয়াইট স্টার লাইন কম্পানিরই আরেক জাহাজ ম্যাজেস্টিকের টিকিট কেটেছিলেন তিনি। কিন্তু ম্যাজেস্টিকের যাত্রা বাতিল হওয়ায় বুকিং কার্ডে এর নাম কেটে দিয়ে মারিয়ানকে টাইটানিকে পাঠানো হয়েছিল। পরিণামে প্রাণ হারানো এক হাজার ৫০০ জন আরোহীর তালিকায় নাম ওঠে তাঁর।</p> <p>সংগ্রহশালায় একটি প্লাস্টিকের পাত্রে রাখা হয়েছে সুগন্ধি বেচা অ্যাডলফ সালফেল্ডের সঙ্গে থাকা কিছু ছোট কাচের শিশি। বিবিসির সাংবাদিক বলেন, শিশিগুলোর মুখ খুললে এই এত দিন পরও তীব্র মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রী সালফেল্ড টাইটানিকের বেঁচে যাওয়া ৭০০ জনের একজন।</p> <p>টাইটানিক ১৯১২ সালে তার প্রথম সমুদ্রযাত্রায় ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সময় হিমশৈলে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। জাহাজটিতে সেই সময়ের হিসাবে খুবই উন্নত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। কোনোভাবেই এটি ডুববে না—এ ঘোষণা দিয়ে মালিক কম্পানি স্টারলাইন আলোড়ন তুলেছিল।</p> <p>টোমাসিনা রে জাহাজের পুরু স্টিলের পাতগুলোকে জোড়া দেওয়া কিছু রিভিটও দেখান বিবিসিকে। এ রকম ৩০ লাখের বেশি রিভিট ব্যবহার করা হয়েছিল টাইটানিকের কাঠামোতে। জাহাজটি ডোবার পর কেউ কেউ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের তত্ত্ব দিয়েছিল। রিভিটগুলো পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এগুলোর মধ্যে স্ল্যাগের ঘনত্ব বেশি। স্ল্যাগ কাচের মতো একটি উপাদান, যা প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় হয়তো রিভিটগুলোকে বেশি ভঙ্গুর করে তুলেছিল।</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>