<p>ভয় পেলে হাত-পা কাঁপার পেছনে রয়েছে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, যা মূলত আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের কাজ। ভীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে শরীরের ‘ফাইট-অর-ফ্লাইট প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এটি আমাদের প্রাচীনকাল থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিকাশিত একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা।</p> <p>ভয়ের অনুভূতি আসার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের একটি অংশ অ্যামিগডালা নামক অংশ সক্রিয় হয়। মস্তিষ্কের এই অংশ আমাদের আবেগ, বিশেষ করে ভয় ও উত্তেজনার নিয়ন্ত্রণ করে। অ্যামিগডালা কোনো ভয়ের হুমকি শনাক্ত করে, তখন এটি মস্তিষ্কের অন্য অংশে সংকেত পাঠায়।</p> <p>এই সংকেতের ফলে আমাদের অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড থেকে দ্রুতগতিতে অ্যাড্রিনালিন নামক হরমোন নিঃসরণ শুরু হয়। অ্যাড্রিনালিন শরীরকে একটি শক্তিশালী অবস্থায় নিয়ে যায় যাতে আমরা ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে দ্রুত পালাতে পারি অথবা প্রতিরোধ করতে পারি।</p> <p>অ্যাড্রিনালিনের প্রভাবে আমাদের হৃৎপিণ্ডের গতি দ্রুত বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ বাড়ে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে দ্রুত রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে, বিশেষত পেশিগুলোতে।</p> <p>বেশি রক্ত প্রবাহ এবং তীব্র উত্তেজনার কারণে আমাদের পেশিগুলো অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়। ফলে হাত-পায়ে কাঁপুনি ধরায়। এই কাঁপুনির মাধ্যমে শরীর নিজেকে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করে, যাতে দ্রুত সাড়া দিতে সক্ষম হয়।</p> <p>হাত-পা কাঁপা মূলত শরীরের ফাইট-অর-ফ্লাইট প্রতিক্রিয়ার অংশ, যা আমাদের শারীরিকভাবে সাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করে। পেশি শক্ত হয়ে যায় এবং শরীর দ্রুত কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকে। এই প্রতিক্রিয়া আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবন রক্ষায় সহায়তা করেছিল যখন তারা প্রাকৃতিক শত্রুদের মুখোমুখি হত।</p> <p>ভয় পেলে শরীরের কাঁপুনি খুবই স্বাভাবিক, তবে কিছু কৌশল অনুসরণ করলে এটি কমানো সম্ভব। গভীরভাবে দম নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন, শরীরকে শান্ত করতে পারবেন। ভয় পেলে মনে সাহস জোগাতে ইতিবাচক চিন্তা করতে পারেন। পেশি ধীরে ধীরে শিথিল করে শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে পারেন।</p> <p>মোটকথা হলো, ভয় পেলে শরীরের এই প্রতিক্রিয়াগুলো প্রাকৃতিক এবং মানব শরীরের সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য।</p>