ডিম হলো পুষ্টিতে ভরপুর একটি খাবার। শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু ডিম কিভাবে খাওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়—ফুল বয়েল না হাফ বয়েল?
কেউ কেউ হাফ বয়েল খেতে খেতে পছন্দ করেন। কেউ কেউ আবার ফুল বয়েল না হলে খান না।
কেউ কেউ মনে করেন হাফ বয়েল ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি।
আসলেই কি তাই?
ডিমকে প্রকৃতির পুষ্টির প্যাকেজ বলা হয়। এতে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ই, বি১২, আয়রন, সেলেনিয়াম, জিংক, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
ডিম রান্না করার পদ্ধতির ওপর পুষ্টিগুণ নির্ভর করে।
রান্নার ধরনের নির্ভর করে এটা স্বাস্থ্যকর হবে না, শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
ডিম কারি, ভুনা, ভাজা ও সিদ্ধ করে খাওয়া হয়। ভুনা ও কারিতে ডিম সাধারণত ফুল সিদ্ধ হয়ে যায়। কিন্ত গোল বাঁধে সিদ্ধ ও ভাজিতে।
অথচ সিদ্ধ ও ভাজি ডিমই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
ভাজি কিংবা সিদ্ধ যেভাবেই খাই না কেন, কোনটা পুষ্টিকর তা আমরা দেখে নেব।
ফুল বয়েল ডিম হলো সম্পূর্ণ সিদ্ধ করা ডিম। এতে ডিমের সাদা অংশ এবং কুসুম পুরোপুরি শক্ত হয়ে যায়। ফুল বয়েল ডিম খেলে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে।
এটা গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ।
পুরোপুরি সিদ্ধ হয় বলে, এটা সহজে হজম হয়। পেটের সমস্যার ঝুঁকি কম থাকে। অন্যদিকে এতে প্রোটিন সম্পূর্ণ পরিমাণে পাওয়া যায়।
তবে অতিরিক্ত সিদ্ধ করা হয় বলে কিছু ভিটামিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড উচ্চ তাপে নষ্ট হতে পারে। বেশি সিদ্ধ করলে স্বাদ কমে যেতে পারে।
ডিমের রান্না পদ্ধতি এবং পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফ্রাঙ্ক বি. হু। তিনি বলেন, ‘ডিমের পুষ্টিগুণ রান্নার পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, ডিম সঠিকভাবে রান্না না করলে সালমোনেলা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।’
হালকা সিদ্ধ করা ডিমকে হাফ বয়েল বলে । এতে ডিমের সাদা অংশ কিছুটা শক্ত হয়, কিন্তু কুসুম নরম ও আধা তরল অবস্থায় থাকে।
এই পুষ্টি অটুট থাকে, কম তাপের কারণে ভিটামিন ও ওমেগা-৩ অক্ষত থাকে। হালকা কুসুম অনেকের কাছে স্বাদে বেশি আকর্ষণীয়। হাফ বয়েল ডিম কম ক্যালোরি বেশি থাকে।
তবে এর কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে। কাঁচা বা আধা কাঁচা ডিমে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া বাস করে। তাই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে উচ্চমাত্রায়। গর্ভবতী নারী ও শিশুদের হাফ বয়েল খাওয়া উচিৎ নয়।
আধা সিদ্ধ ডিম সহজপাচ্য নয়। তাই অনেকে আধা সিদ্ধ ডিম হজম করতে পারে না। তাদের ক্ষেত্রে হাফবয়েল পেটের পীড়ার কারণ হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. ব্রুস গ্রিফিন উল্লেখ করেন, ‘ডিমের কুসুমে থাকা কোলেস্টেরল নিয়ে অনেকের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও, গবেষণায় দেখা গেছে যে পরিমিত ডিম গ্রহণ বেশিরভাগ মানুষের রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। তবে, ডিমের পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সঠিকভাবে রান্না করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
কোনটা খাবেন?
আপনার শারীরিক অবস্থা, পছন্দ এবং নিরাপত্তার ওপর নির্ভর করে ফুল বা হাফ বয়েল ডিম বেছে নেওয়া উচিত। গর্ভবতী নারী, শিশু, এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষদের জন্য ফুল বয়েল নিরাপদ। যারা সালমোনেলা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে চান, তাঁদেরও ফুল বয়েল ডিম খাওয়া উচিত।
অন্যদিকে যারা পুষ্টিগুণের ক্ষতি কমাতে চান এবং ভালো স্বাদ চান, তারা হাফ বয়ের ডিম খেতে পারেন। তবে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত অর্গানিক বা পাস্তুরাইজড ডিম হাফ বয়েলও নিরাপদ।
সূত্র : ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, যুক্তরাষ্ট্র