<p><strong>আরও যত দুর্ঘটনা</strong><br /> কার্নাভানের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই অভিশাপ গুজবের ভিত মজবুত হয়েছিল, কিন্তু তারও আগে আরেকটি দুর্ঘটনা অভিশাপের ব্যাপারটা সামনে নিয়ে আসে। কার্টারের একটা হলুদ রঙের ক্যানারি পাখি ছিল। কার্টার যখন কার্নাভান ও অন্যদের নিয়ে সমাধিতে প্রবেশ করছেন, তখন ক্যানারিটা সঙ্গে ছিল না।  সেখান থেকে ফিরেই কার্টার ক্যানারির খোঁজ করেন। কিন্তু পাওয়া যায় না কোথাও। তখন একজন শ্রমিক বলে, একটা গোখরা সাপ এসে ক্যানারিটাকে খেয়ে ফেলেছে। এখানেও দুইয়ে দুইয়ে চার করার লোকের অভাব হয়নি। ফারাওদের সুরক্ষার প্রতিক ছিল গোখরা সাপ। এমনকী তুতেনখামেনের মমির ওপরে যে বর্মটা ছিল, সেটাতেও ছিল একটা সোনার গোখরা সাপের মুর্তি। তখন অভিশাপে বিশ্বাসী শ্রমিকেরা বলতে লাগল, ক্যানারি পাখিটা তুতেনখামেনের মমিটার হদিস পাইয়ে দিয়েছিল কার্টারকে, তাই ফারাওদের রক্ষাকারী গোখরা এসে সেটাকে খেয়ে ফেলেছে।</p> <p>সবচেয়ে আজব ঘটনাটা ঘটে লন্ডনে। যেদিন কার্নারভান মারা যান, সেদিনই তার পোষা কুকুরটা মারা যায়, হাজার মাইল দূরে তার লন্ডনের বাড়িতে। কুকুরটা নাকি অদৃশ্য কিছুর পেছনে ছুটছিল। তারপর হঠাৎ বিকট শব্দে আর্তচিৎকার করে মারা যায়।</p> <p>অভিশাপের শেষ এখানেই নয়, এরপর আরেক প্রত্নতাত্ত্বিক আর্থার ম্যাক, যিনি এই সমাধি আবিষ্কারে কার্টারকে সহযোগিতা করেছেন, তিনি একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন হোটেল রুমে। ডাক্তার ডাকা হয়, খনন টিমের ডাক্তারও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু দুই চিকিৎসককে হতভম্ব করে কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান ম্যাক। <br /> কার্নাভানের মৃত্যুর খবর শুনে তার এক কাছের বন্ধু শিল্পপতি জুয়েল উড লন্ডন থেকে মিসর আসেন। তিনিও গিয়েছিলেন সমাধির ভেতরটা দেখতে। দেশে ফেরার পথে জ্বরে আক্রান্ত হন এবং কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যান তিনি।</p> <p>তুতেনখামেনের মমি পরীক্ষা করতে লন্ডন থেকে মিসরে এসেছিলেন রেডিওলজিস্ট আর্চিবোল্ড ডগলাস বে। মমিটাকে এক্স-রে করেন তিনি। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফিরে যান লন্ডনে। পৌঁছনোর পর পরই মারা যান তিনি।</p> <p>তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারের চার মাসের মধ্যে হঠাৎ মারা যান কার্নারভানের পার্সোনাল সেক্রেটরি রিচার্ড ব্যাথেল। বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে ব্যাথেলের বাবা লর্ড ওয়েস্টবেরি আত্মহত্যা করেন। এর আগে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন। বেথেল সমাধি থেকে কিছু জিনিস নিয়ে রেখেছিলেন নিজের বাড়িতে। এসব ওয়েস্টবেরিকে অপ্রকৃতিস্থ করে তোলে। তিনি আসলে ফারাওদের অভিশাপের কথা জানতেন। তাই বাড়িতে থাকা ওইসব জিনিস দেখে বিড়বিড় করে বলতেন, ‘এসব অভিশপ্ত, এই অসহ্য জিনিসগুলো সহ্য করতে পারছি না। আমি এসবের থেকে মুক্তি চাই। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে তিনিও সাত তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। তার লাশবাহী ভ্যানের ধাক্কায়, আট বছরের এক শিশু মারা যায়।</p> <p>তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারের পর মার্কিন সরকারের এক রেল কর্তা এসেছিলেন সেটা দেখতে। তার নাম জর্জ গোল্ড। সমধি পরিদর্শনের সময় তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। কিছুদিন পর তাঁরও মৃত্যু হয়। একই দশা হয় দক্ষিণ আফ্রিকান ধনকুবের উলফ জোয়েলের। তিনি বড্ড শখ করে এসেছিলেন তুতেনখামেনের সমাধি দেখতে। তবে ফিরে গিয়ে বেশিদিন বাঁচেননি। ঘরের সিঁড়ি থেকে পড়ে যান, মাথায় আঘাত পেয়ে স্ট্রোক করেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনিও মারা যান। মারা যান একজন সরকারি কর্তাও, গভর্নর জেনারেল স্যার লি স্ট্যাক। পরে তিনি আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। সেটা দেশে ফেরার আগেই, মিসরের রাজধানী কায়রোতে।</p> <p>তুতেনখামেনের সমাধির ছবি তুলেছেন যারা, তারাও বাঁচেননি ফারাওয়ের অভিশাপের রোষ থেকে। মিসরের সেই সময়ের যুবরাজ আলি কামেল ফাহমি নিজের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেছিলেন। কয়েক মাসের মধ্যে নিজের স্ত্রীর গুলিতে নিহত হন তিনি। তুতেনখামেনের সমাধির ছবি তুলেছিলেন ফ্র্যাঙ্ক র্যালে নামে আরেকজন ফটোগ্রাফার। পরে তিনি অন্ধ হয়ে যান, খুব করুণভাবে তার মৃত্যু হয়।</p> <p>লর্ড কার্নারভনের মৃত্যুর পর তার ভাই অব্রে হারবার্ট মারা যান। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সমাধি আবিষ্কারের সময় কার্টারের সঙ্গে ছিলেন ইনভেলিন হোয়াইট নামের আরেক ব্রিটিশ গবেষক। চারপাশের ক্রমাগত মৃত্যুতে তিনি বিষণ্ণতায় ভুগতে শুরু করেন। ১৯২৪ সালে তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।</p> <p>যত দিন যায়, সমাধি আবাষ্কারকদের মৃত্যুর মিছিল তত বড় হয়। এসব ঘটনাকে সাদা চোখে অভিশাপ ছাড়া আর কী বলবে সাধারণ মানুষ?<br /> কিন্তু গল্পের পেছনেও গল্প থাকে। পেছনের সেই গল্পের ভেতরেই লুকিয়ে থাকে আসল বৈজ্ঞানিক কারণ। তুতেনখামেনের মমির আবিষ্কারের পর ঘটে যাওয়া প্রতিটা অস্বাভাবিক ঘটনার পেছনেই বৈজ্ঞানিক কারণ লুকিয়ে আছে। সেই কারণ আর ব্যাখ্যা শুনলে আপনিও বুঝবেন কত বড় গুজবের জাল বিস্তার করা হয়েছিল। চার হাজার বছর আগে মারা যাওয়া এক কিশোর সম্রাটের মৃত্যুকে ঘিরে।</p> <p>চলবে...</p> <p>আগের পর্ব:</p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/02/06/1361221">ফারাও তুতেনখামেনের অভিশাপ ১</a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/02/06/1361221">ফারাও তুতেনখামেনের অভিশাপ </a><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/02/07/1361555">২</a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/02/06/1361221">ফারাও তুতেনখামেনের অভিশাপ </a>৩</p>