<p>ষাটের দশকের শুরুতে ব্রিটিশ অস্ট্রেলিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জন বল্টন মহাকাশে দুটি অত্যন্ত শক্তিশালী রেডিও উৎসের সন্ধান পেয়েছিলেন।‌ এগুলোকে রেডিও টেলিস্কোপে শনাক্ত করা গেলেও, অপটিক্যাল টেলিস্কোপে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এদের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না। এসব বিস্ময়কর বস্তুর নামকরণ করা হলো, কোয়াসি স্টেলার রেডিও সোর্স (Quasi Stellar Radio Source), সংক্ষিপ্ত নাম, কোয়াসার। </p> <p>পরবর্তী দুই দশকে এ রকম আরো বেশ কিছু কোয়াসার শনাক্ত করা সম্ভব হলেও, এসব রহস্যময় রেডিও তরঙ্গের উৎস সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন এসব মহাজাগতিক বস্তুর অবস্থান পৃথিবী থেকে কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। এই অচিন্তনীয় বিশাল দূরত্বের জন্য কোয়াসারগুলোকে রেডিও টেলিস্কোপে শনাক্ত করা গেলেও,‌ অপটিক্যাল টেলিস্কোপে এদের দেখা যাচ্ছিল না। পরবর্তী সময়ে অবশ্য হাবল স্পেস টেলিস্কোপ‌ ব্যবহার করে গ্রভিটেশনাল লেন্সিং পদ্ধতিতে কোয়াসারের বেশ কিছু ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। </p> <p>রেডিও টেলিস্কোপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দূরবর্তী কোয়াসারের সন্ধান পাওয়া গেছে পৃথিবী থেকে ১৩.০৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। বিগ ব্যাংয়ের পর মহাবিশ্বের বয়স তখন ছিল মাত্র ৭৭০ মিলিয়ন বছর। অর্থাৎ কোয়াসারের দেখা পাওয়া গেছে মহাবিশ্বের একেবারে আদি লগ্নে। মহাবিশ্বের প্রাথমিক পর্যায়ে গ্যালাক্সিগুলো যখন সবেমাত্র গঠিত হচ্ছিল, তখনই কোয়াসারগুলোর উদ্ভব হয়েছিল। মহাবিশ্ব তখন ছিল খুবই অশান্ত। প্রকৃতপক্ষে রেডিও বিকিরণের দিক থেকে কোয়াসার মহাবিশ্বের উজ্জ্বলতম বস্তু। এদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে বেশ কিছু নবীন গ্যালাক্সির কেন্দ্রে। </p> <p>জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কোয়াসার সৃষ্টির ক্ষেত্রে আদি মহাবিশ্বের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। নবগঠিত গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত এসব ব্ল্যাকহোলের ভর সূর্যের চেয়ে কয়েক শ মিলিয়ন থেকে কয়েক বিলিয়ন গুণ বেশি। এসব দানব আকৃতির ব্ল্যাকহোল তার চারপাশের হাইড্রোজেন গ্যাস এবং অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুকণাকে গ্রাস করে নেয়। এর ফলে ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজনের বাইরে উত্তপ্ত প্লাজমার একটি পরিবৃদ্ধি চক্র (accretion disk) সৃষ্টি হয়।</p> <p>আমরা জানি, প্রবল মহাকর্ষ বলের প্রভাবে ব্ল্যাকহোল থেকে কোন ধরনের বিকিরণ বের হতে পারে না। সে জন্য ব্ল্যাকহোল অন্ধকারে ঢাকা পড়ে থাকে, একে দেখা যায় না। কিন্তু ব্ল্যাকহোলের চারপাশের পরিবৃদ্ধি চক্রে অবস্থিত বস্তুকণা, বিশেষত ইলেকট্রন, ব্ল্যাকহোলে বিলীন হওয়ার আগে প্রবল মহাকর্ষের প্রভাবে অতি উজ্জ্বল এবং তীব্র বিকিরণের সৃষ্টি করে। এই বিকিরণ রেডিও তরঙ্গ এবং এক্স-রে আকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক বিলিয়ন বছর পর এই অতি উজ্জ্বল বিকিরণ কোয়াসার হিসেবে পৃথিবীর রেডিও দুরবিনে এসে ধরা পড়েছে। মূলত কোয়াসার হলো মহাবিশ্বের প্রাথমিক যুগের অবস্থা, যখন মহাবিশ্ব বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি অশান্ত ছিল। রেডিও টেলিস্কোপে এ পর্যন্ত প্রায় হাজার দুয়েক কোয়াসারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলোকে পরীক্ষা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা সম্বন্ধে জানতে পারছেন। </p> <p>সূত্র: স্পেস ডট কম</p>