<p>মঙ্গলগ্রহে পদার্পণের পর থেকে নাসার পারসিভারেন্স রোভার লাল গ্রহটিকে চষে বেড়িয়েছে। এখানে আবিস্কৃত জেজিরো ক্রেটারে পৌঁছে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে, প্রাচীন এই লেকটিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।</p> <p>সম্প্রতি এই রোভারটি মঙ্গলে বিচরণের এক পর্যায়ে কিছু আকর্ষণীয় গোলাকার পাথুরে বস্তুর সংস্পর্শে আসে। সত্যি বলতে এই জিনিসগুলো বিজ্ঞানীদের মনোযোগ আকর্ষণ করবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। </p> <p>কারণ পৃথিবীর বিভিন্ন জলাশয়ে মাইক্রোবিয়াল কমিউনিটিগুলো যে ধরণের কাঠামো তৈরি করে, সেগুলোর সাথে এই বস্তুগুলোর বেশ মিল রয়েছে। </p> <p>কিন্তু এই নমুনাগুলো লাল মঙ্গলে জীবন সৃষ্টির সংকেত জানাচ্ছে? নাকি আমরা বিষয়টি ঠিক ভাবে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছি? মঙ্গলগ্রহের ব্যাপারে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ জেজিরো ক্রেটারে সম্প্রতি প্রাপ্ত এই নমুনাগুলোর ব্যাপারে তাঁদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। </p> <p>‘মঙ্গলের মাটিতে এই ধরনের বৃত্তাকার নমুনা দেখে প্রথমে আমি ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছিল কোন লেক শুকিয়ে গেলে মাটিতে পরবর্তীতে যে ধরণের মাইক্রোবিয়ালাইট স্ট্রাকচার দেখা যায়, এই নমুনাগুলোও অনেকটা তেমনই দেখতে।’</p> <p>কথাগুলো বলছিলেন স্টিভ রুফ, তিনি অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন প্ল্যানেটারি ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে কাজ করছেন। মঙ্গলের খনিজতত্ত্ব নিয়ে পাশাপাশি কাজ করছেন স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড স্পেস এক্সপ্লোরেশনে।</p> <p>মাইক্রোবিয়ালাইট হলো পানির নিচে এক ধরনের পাথুরে স্ট্রাকচার। সেগুলো দেখতে প্রবালপ্রাচীরের মতো। আসলে এগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন অনুজীবের দেহাবশেষ দিয়ে তৈরি হয়।</p> <p>রুফ বলেন, ‘অনুমান যদি হয়, আসলেই দারুণ হবে। তবে আমি প্রয়োজনীয় সব তথ্য বিশ্লেষণ করে যতটুকু বুঝলাম, এই স্ট্রাকচারগুলোর জৈব উৎস থেকে তৈরি কিনা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। বরং না হওয়ার আশংকাই বেশি।’ </p> <p>রুফের মতে, আপনাকে মাথায় রাখতে হবে এটা মঙ্গলগ্রহ পৃথিবী নয়। এই গ্রহটিতে এখনো প্রাণ চিহ্ন বয়ে বেড়ায়, এমন কোনো নমুনার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই প্রথমেই প্রথমেই জীববৈজ্ঞানিক গবেষণার কোনো গুরুত্ব দেখছি না। বরং ভূতত্ত্ব বা জিয়লজিক্যাল এক্সপ্লানেশন নিয়ে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা উচিৎ।</p> <p>তাঁর পরামর্শ হলো, ‘যখন এ ব্যাপারে তেমন কোনো ভূতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না, তখনই কেবল আমাদের জীববিজ্ঞানের আশ্রয় নিতে হবে। এমনকি তখনো আমাদের অসাধারণ প্রমাণাদির প্রয়োজন হতে পারে, প্রাণের অস্তিত্ব দাবির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী কার্ল সাগান যেমনটা বলেছিলেন আরকি।’</p> <p>তিনি আশা করছেন, পারসিভারেন্স রোভারের সাথে সংশ্লিষ্ট গবেষক দল এই স্ট্রাকচারগুলোর বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে শীঘ্রই আমাদের বিস্তারিত জানাবেন, আসলেই অনুমানগুলো ঠিক ছিল কিনা।</p> <p>অ্যারিজোনার প্ল্যানেটারি সায়েন্স ইন্সটিটিউট অব টুকসন জ্যোষ্ঠ বিজ্ঞানীর অ্যালেক্স রডরিগেজের মতে, ‘প্রাচীন যুগে মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে—এমন কোনো নমুনা যদি সত্যিই খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে আমাদের সে বিষয়ে আরও বেশ গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।’</p> <p>ইতিমধ্যেই পারসিভারেন্সের নতুন করে চলতে শুরু করেছে, রোবট টি জেরিরো ক্রেটারের আশেপাশের বিভিন্ন নমুনা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রেখেছে। এমনও তো হতে পারে, প্রাগতৈহাসিককালে এখানে অনুজীবের বসবাস ছিল এবং হয়তো সেই নমুনা এখনো এই ক্রেটারের আশেপাশে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে!</p> <p>তবে এই ব্যাপারটিকে নিবিড়ভাবে ভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই আসলে প্রকৃত তথ্য আমাদের সামনে আসবে। সেই পর্যন্ত না হয় আমরা একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাই ভালো।</p> <p>সূত্র:<a href="https://www.space.com/perseverance-rover-search-for-life-on-mars-is-difficult"> If the Perseverance rover found evidence of life on Mars, would we recognize it?/Space.com</a></p>