<p>স্টিভ জবস আর স্টিভ ওয়াজনিয়াক অ্যাপল প্রতিষ্ঠা করার পর বড় বড় লোকেরা এতে বিনিয়োগ করলেন। বাইরে থেকে লোক এনে অ্যাপলের প্রেসিডেন্ট পদে বসানো হলো। আর জবস চিন্তা করলেন এর সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে। তিনি সেকেলে ধাতব কেস ঝেড়ে ফেলে প্ল্যাস্টিকের কেস ব্যবহার করলেন। তাঁর রুচিবোধ আর বন্ধু স্টিভ ওজনিয়াকের মেধার সমন্বয়ে বিপ্লব ঘটে গেল পার্সোনাল কম্পিউটারের দুনিয়ায়। অ্যাপল টু’র বিক্রি গিয়ে দাঁড়ালো ১১ কোটি ৭০ ডলারে!<br /> তখন আরও বড় বড় কোম্পানি পাখির চোখ করেছে অ্যাপলের দিকে। বিনিয়োগ করতে চায় এই কোম্পানিতে। সে দৌঁড়ে ছিল জেরক্স। হ্যাঁ, এক নামেই যার পরিচয়—এমন কিছু পণ্য বাজারে এসেছে যুগে যুগে। বাংলাদেশে একসময় গ্লোব বললেই মশার কয়েল বুঝত মানুষ, এখন যেমন মেরিল বললে পেট্টোলিয়াম জেলিকে বোঝে, সেকালে ফটোকপি বলতে মানুষ বুঝত জেরক্সকেই। কারণ জেরক্সের ফটোকপি মেশিন নাম করেছিল জগৎজুড়ে। তাই ফটোকপি না বলে লোকে বলত ‘জেরক্স কপি’। </p> <p>সেই জেরক্স তখন অনেক বড় কোম্পানি। তারাও পার্সোনাল কম্পিউটার তৈরি করেছে;বিপ্লবটা করেছে তাতে মাউস যোগ করে। কিন্তু এরচেয়েও আরেকটা বড় বিপ্লব ছিল। সেটাই বদলে দেয় কম্পিউটার উইন্ডোর ধারণাটা। এর আগে কম্পিউটারের মনিটরে ফোল্ডার আর ডকুমেন্ট শো করত না। জেরক্সের ইঞ্জিনিয়ররা এমন কিছু সফটওয়ার বানালেন, সেগুলোর সাহায্যে ডিসপ্লেতে ফোল্ডার আর ডকুমেন্ট শো করানো যেত। সেইসব ফোল্ডার কিংবা ডকুমেন্টে মাউস পয়েন্টার রেখে ক্লিক করলেই সেগুলো ওপেন করানো যেত। আরেকটা ব্যবস্থাও তাঁরা করেছিলেন, সেটাই স্টিভ জবসকে সবচেয়ে বেশি নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেটা হলো কম্পিউটারে একসঙ্গে দুটো উইন্ডো খুলে দুটো আলাদা কাজ একইসঙ্গে করা।</p> <p>১৯৭৯ সাল। জেরক্স কোম্পানির কর্তারা চাইলেন অ্যাপলে কিছু টাকা বিনিয়োগ করতে। কিন্তু স্টিভ একটা শর্ত বেঁধে দিলেন—যদি জেরক্স তাঁদের সব প্রযুক্তি স্টিভকে দেখায়, তবেই তিনি জেরক্সকে অ্যাপলে ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার সুযোগ দেবেন। জেরক্সের কর্তরা রাজি হলেন। কিন্তু সেটা ছিল জেরক্সের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত আর স্টিভ জবসের জীবনের সেরা সুযোগ। স্টিভ জেরক্সের কম্পিউটার দেখলেন, অবাক হয়ে গেলেন তাঁদের গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস সিস্টেম দেখে, যে সিস্টেমে একই সঙ্গে একাধিক উইন্ডো খুলতে পারে।</p> <p>জবস শেষমেশ জেরক্সকে অ্যাপলে বিনিয়োগ করতে দেননি। তার বদলে নিজেদের ইঞ্জিনিয়ারকে বলেছিলেন জেরক্সের মতো একাধিক উইন্ডোর একটা সিস্টেম তারা তৈরি করতে পারবে কি-না। হ্যাঁ, অ্যাপলের ইঞ্জিনিয়াররা সেটা পেরেছিলেন। আরও উন্নত করেছিলেন গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস সিস্টেম। অ্যাপলের পরবর্তী ভার্সনের কম্পিউটার একসাথে শুধু দুটি নয়, কয়েকটি উইন্ডো খুলে কাজ করতে পারত। মাউসও অনেক আধুনিক করে তুলেছিলেন স্টিভ। অনেকগুলো বাটনের বদলে দুটি বাটনে নিয়ে এসেছিলেন মাউসকে।</p> <p>সূত্র: স্টিভ জবস, ওয়াল্টার আইজ্যাকসন এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফির জিনিয়াস সিরিজ<br />  </p>