<p style="text-align:justify">একসময় তিনি কালোবাজারে ডলার বিক্রি করেছেন। তারপর জড়িয়ে যান সোনা চোরাচালানে। দুই হাতে অবৈধ টাকা আয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারেও লেগে পড়েন। সে চেষ্টাতেও বেশ সফল। নিজ এলাকায় দুইবারের সংসদ সদস্য তিনি। এরপর অবৈধ জমি দখলসহ বিতর্কিত আরো নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সিলেটে পানিতে ডুবে পর্যটকের মৃত্যু" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/13/1728775444-b0ef055cc25eb4476685b7662023d0b3.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সিলেটে পানিতে ডুবে পর্যটকের মৃত্যু</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/13/1434635" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এসব অভিযোগ নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লার বিরুদ্ধে। নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তিনি। তবে তাঁর রাজনৈতিক বা দলীয় তকমা থেকেও বেশি পরিচিতি ‘ডলার সিরাজ’ নামে। আশি-নব্বইয়ের দশকে রাজধানীর মতিঝিলে ব্যাংকপাড়ায় কালোবাজারে ডলার বিক্রি করতেন তিনি। ডলার বেচাকেনার পাশাপাশি জড়িয়ে যান সোনা চোরাচালানে। এসব ঘটনায় মামলার আসামিও হয়েছেন কয়েকবার।</p> <p style="text-align:justify">এক পর্যায়ে কালোবাজারির বদনাম ঘোচাতে তিনি রাজনীতিতে পা রাখেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে হয়েছেন দুইবার সংসদ সদস্য। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে নিজের আধিপত্য বিস্তারে গঠন করেছেন ‘পরিবার লীগ’।</p> <p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগের শাসনামলে সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সিরাজ মোল্লার স্ত্রী ও ভাইদের বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হলেও অজানা কারণে কোনো মামলায় আসামি করা হয়নি তাঁকে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="রোনালদোর ৯০৬তম গোলে পর্তুগালের তৃতীয় জয়" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/13/1728786494-a8d003aa17bcca898a91a8a79c633cbd.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>রোনালদোর ৯০৬তম গোলে পর্তুগালের তৃতীয় জয়</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/sport/2024/10/13/1434636" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">তা ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। সেখানে তাঁর বাড়ি রয়েছে বলে পরিবারের একাধিক সদস্য জানিয়েছে। তারা বলেছে, সিঙ্গাপুরে সিরাজের ‘সেকেন্ড হোম’ রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে </strong><strong>‘</strong><strong>পরিবার লীগ</strong><strong>’</strong><strong> গঠন</strong></p> <p style="text-align:justify">সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ওয়ান-ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। পরে বিপুল পরিমাণ অনুদান দিয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সর্বশেষ নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদে প্রথম তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ সংসদে পরাজিত হলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সিরাজ মোল্লা।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে জেলার রাজনীতিতে নিজেকে তেমন প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলেও অবৈধ টাকার জোরে শিবপুরে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ‘পরিবার লীগ’। নিজের স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলামকে বানিয়েছেন শিবপুর উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি। গত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যানও।</p> <p style="text-align:justify">নিজের আপন ছোট ভাই সামসুল ইসলাম মোল্লাকে বানিয়েছেন জেলা যুবলীগের সহসভাপতি। আরেক ছোট ভাই মাহবুবুল আলম মোল্লা তাজুলকে বানিয়েছেন শিবপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে তাজুল ইসলাম মোল্লাকে শিবপুর পৌরসভার মেয়র বানানোর পরিকল্পনা ছিল সিরাজ মোল্লার। এ কথা প্রকাশ্যে বলেছেন তিনি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আমলাদের মতো গাড়ি চান বিচারকরাও" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/13/1728773826-d23038758a5a36ff7e622114a3563744.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আমলাদের মতো গাড়ি চান বিচারকরাও</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/10/13/1434634" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify"><strong>কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে সাবেক এমপির ভাগ্নে হুমায়ুন</strong></p> <p style="text-align:justify">জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে শিবপুরে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেশি। কোনোভাবেই দমন করা যাচ্ছে না কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় উঠতি বয়সের কিশোররা সহিংসতাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় লোকজনের দাবি, মূলত অভিভাবকদের অবহেলায় ও রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় বিপথে যাচ্ছে কিশোররা।</p> <p style="text-align:justify">শিবপুরে এসব কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করেন সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লার আপন ভাগ্নে হুমায়ুন এবং শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ইভ টিজিং, বখাটেপনা, মাদক সেবন, তুচ্ছ ঘটনায় হামলা, এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধেও অংশ নিচ্ছে। এমনকি ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয় লোকজন সরবরাহ করতে। স্থানীয়ভাবে তারা অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয় না।</p> <p style="text-align:justify">আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্য মতে, কিশোর গ্যাং জেলায় সবচেয়ে বেশি শিবপুরে। সেখানে কিশোর গ্যাংয়ের সবচেয়ে বেশি সক্রিয় শিবপুর বাজার এলাকার সুমন গ্রুপ, উত্তর ধানুয়ার আলী গ্রুপ, বানিয়াদী এলাকার শওকত আলী গ্রুপ, শিবপুরের সাদ্দাম গ্রুপ।</p> <p style="text-align:justify"><strong>সিরাজ মোল্লার যত সম্পদ</strong></p> <p style="text-align:justify">সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তাঁর বার্ষিক আয় ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬২৭ টাকা। এ ছাড়া তাঁর নিজ নামে অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ১৩৯ কোটি ৮৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬৯ টাকা ও স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ১১ কোটি ৭৭ লাখ ৯২ হাজার ৯১৬ টাকার।</p> <p style="text-align:justify">তবে তাঁর প্রতিটি সম্পদের মূল্যমানে অসামঞ্জস্য রয়েছে। এর মধ্যে তাঁর স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ৯২.৭৫ শতাংশ একটি কৃষিজমির অর্জনকালীন মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৯ হাজার ৮০০ টাকা। এ ছাড়া সিরাজুল ইসলাম মোল্লা প্রাইম ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি চায়না-বাংলা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বেঙ্গল টাইগার সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বাজনাবো টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, ইউনাইটেড শিপিং লাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ছাড়া তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের সদস্য ও বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।</p> <p style="text-align:justify"><strong>যত মামলা</strong></p> <p style="text-align:justify">২০০১ সালে উচ্চ আদালতে ও ২০০৩ সালে মহানগর দায়রা জজ আদালতে সিরাজুল ইসলাম মোল্লার বিরুদ্ধে চোরাচালানের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা হয়। এর একটি মামলা হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ বিরাজমান রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগে দুটি ও ২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে এক প্রার্থীর এজেন্টকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগে মামলা করা হয়। পরে অবশ্য তিনি মামলাগুলো থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। </p> <p style="text-align:justify">শিবপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সালেক রিকাবদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটা মানুষের বৈধ উপায়ে এত টাকা উপার্জন করা এই পৃথিবীতে অসম্ভব। সিরাজ মোল্লার পরিবার কখনো সচ্ছল ছিল না। তিনি প্রথমে সোনা চোরাচালান করতেন। বিদেশ থেকে পেটে করে স্বর্ণ আনতেন। কয়েকবার মামলাও হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">তারপর তিনি ডলারের অবৈধ চোরাই ব্যবসা করে রাতারাতি টাকাওয়ালা হয়েছেন। এমনও শুনেছি, তিনি জাল ডলার ছাপিয়ে প্রতারণা করতেন। বাংলাদেশের কারো নামের আগে ডলার আছে? একমাত্র তাঁর (সিরাজ  মোল্লা) নামের আগে ডলার খেতাব। তাঁর আগের অপকর্মের তকমা সরাতেই মূলত রাজনীতিতে আসা। অবৈধ টাকা দিয়ে সব কিনে অবৈধ আওয়ামী সরকারের আমলা দলীয় নেতাকর্মীদের কিনে স্বতন্ত্র এমপি হয়েছেন।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আমাকে বলেছেন, তিনি জীবনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। তার একমাত্র কারণ তাঁর নামের আগে ‘ডলার’ আছে। এই ধরনের চোরাকারবারি, প্রতারককে কোনো দল মনোনয়ন দেবে না এটাই স্বাভাবিক।</p> <p style="text-align:justify">উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক নেতারা যদি রাজনীতি করার সুযোগ পেতেন, তাহলে আজকের হাল হতো না। ডলার সিরাজের মতো কালোবাজারি অবৈধ টাকার মালিকরা আওয়ামী লীগের কিছু হাইব্রিড নেতাকে কিনে নিয়ে রাজনীতির মাঠ দখল করে রেখেছেন তাঁদের হাতিয়ার হিসেবে।</p> <p style="text-align:justify">নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, অবৈধ টাকার কী গরম, সেটা ডলার সিরাজ মোল্লার চেয়ে বড় উদাহরণ কী হতে পারে? তিনি নিজে স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচিত হয়েছেন শুধু টাকা দিয়ে। তিনি স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলামকে প্রথমে বানিয়েছেন উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি। </p> <p style="text-align:justify">সেটাতে খায়েশ না মেটায় পরে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা দিয়ে প্রশাসন কিনে বউকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। এ ছাড়া তাঁর ছোট ভাই সামসু মোল্লাকে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ও আরেক ভাই তাজুল মোল্লাকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বানিয়েছেন। সম্প্রতি তাজুল মোল্লাকে শিবপুর পৌরসভার মেয়র বানাবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের   মানুষের জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন নষ্ট করে দিয়েছে তাঁর অবৈধ কালো টাকা।</p>