<p>ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ শাখা ও এপিবিএন-এর যৌথ টিম। তাদের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিরাপত্তাকর্মী ও কয়েত এয়ারওয়েজের বুকিং সহকারী রয়েছেন।</p> <p>গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চক্রের দুই হোতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও মোহাম্মদ কবির হোসেন। অপর তিনজন হলেন- জানে আলম, সাব্বির মিয়া ও সম্রাট সওদাগর। তাদের কাছ থেকে তিনটি পাসপোর্ট, তিনটি জাল ভিসা, চারটি জাতীয় পরিচয়পত্র, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের বিশেষ কার্ড, চারটি ভিসা কার্ড, পাঁচটি মোবাইল ফোন, তিনটি ই-টিকেট, ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা সংশ্লিষ্ট ছয় পাতা জাল ডকুমেন্ট, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নগদ ১৬ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। </p> <p>আজ বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবিতে নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পড়ে পড়ে লাখ লাখ টাকা খোয়াচ্ছে সাধারণ মানুষ। আমরা অনেকবারই বলেছি। টুরিস্ট ভিসায় সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে লোক পাঠানোর নামে অভিনব প্রতারণা হচ্ছে খোদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। সুযোগ বুঝে টুরিস্ট ভিসায় অথবা ভুয়া ভিসায় বাংলাদেশ থেকে প্রাচ্য, মধ্যপ্রাচ্য ও সেনজেনভুক্ত বিভিন্ন দেশে ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে গত দেড় বছরে আড়াই শতাধিক মানুষকে অবৈধ পন্থায় পাঠানো হয়েছে। ধরা পড়ে তাদের অনেককে পাঠানো হয়েছে শূন্য হাতে, কেউ জেল খেটেছেন, কেউ এখনো রয়েছেন জেলেই।’</p> <p>ডিবি জানায়, সর্বশেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টার্মিনাল-২ এলাকা থেকে এই চক্রের দুই হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতের নির্দেশে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে তাদের। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৩ যাত্রী স্বীকার করেছে, ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা দালালদেরকে দিয়ে এই অবৈধ পথে ফ্রান্স, ইতালি এবং গ্রিসে যাচ্ছিলেন তারা। দুই হোতার বক্তব্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশ বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারো কারো এই চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।</p> <p>গ্রেপ্তারকৃতদের উদ্ধৃতি দিয়ে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘অবৈধভাবে বিদেশে লোক পাঠাতে এখন নতুন পন্থা অবলম্বন করছে দালাল চক্রের সদস্যরা। তারা বাংলাদেশ বিমানের নিরাপত্তাকর্মী, কুয়েত এয়ারওয়েজের বুকিং সহকারী, কিছু জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান ও ট্রাভেল এজেন্সিসহ দক্ষ কম্পিউটার অপারেটর মিলে শক্তিশালী একটি চক্র গড়ে তুলেছে। যারা টুরিস্ট ভিসার কথা বলে সেনজেন ভিসাভুক্ত দেশে কোনো রকম পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এরপর পৌঁছে গেলে আর ফেরত আসতে হবে না এই বলে কারো কারো কাছ থেকে ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।’</p> <p>ডিবি জানায়,  চক্রটির কাজ হচ্ছে, নানান কৌশলে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক লোকজনকে বিমানবন্দরে কোনো রকমে ঢুকিয়ে দেওয়া। ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট করে দেয় তাদের। এরপর ইউরোপিয়ান কোনো দেশের যাবার জন্য সে টিকিট পেয়ে বিমানবন্দরে ঢোকে। বোর্ডিং আনতে গেলে তারা বাংলাদেশ বিমানের সিকিউরিটি ম্যান ও কুয়েত এয়ারওয়েজের বুকিং সহকারী তখন দেখে। তারা তো বায়াস্ট। তারা বলে সব ঠিক আছে। ইমিগ্রেশনেও চেক করা হয় না। বিদেশগামী ভুক্তভোগীরা কিছু না বুঝে ভুয়া বোর্ডিং কার্ড নিয়ে বিমানে উঠে চলে যায়।</p> <p>ডিবি প্রধান বলেন, ‘এভাবে ফাস্ট ডেস্টিনেশন বাংলাদেশ থেকে তারা উড়াল দিলেও অনেক সময় তারা মধ্যবর্তী স্থানে ট্রানজিট পয়েন্টে আটক হয়, কখনো সর্বশেষ ফ্রান্স, জার্মান অথবা ইউরোপের ডেস্টিনেশনেও গিয়ে আটক হন। কারণ এসব জায়গায় চেক করতে গিয়ে দেখে ভুয়া। তখন কাউকে দেশে পাঠায়। কাউকে কাউকে জেলে পাঠায়। যারা জেলে যায় তারা পরবর্তীতে কেউ কেউ কাজও পেয়ে যায়। চক্রের সদস্যরা এই সুযোগটি  নিয়ে তাদের বুঝায়, মামলা করে জেল থেকে ছুটে বের হতে পারবেন।’</p> <p>এই প্রতারণায় জড়িত কিছু জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান, ট্রাভেলস এজেন্সি, এয়ারলাইনস ও কম্পিউটার অপারেটর মিলে এসব করছে জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়ে অসাধু চক্রের খপ্পরে পড়ে যারা বিদেশে যাচ্ছে তারা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমরা বার বার বলছি, সাবধান করছি। জালিয়াতি বা প্রতারণার খপ্পরে পড়ছি কি-না তা চেক করার জায়গা তো আছে। আমরা চেক করলে, ভেরিফিকেশন করলেই তো বোঝা যায়।’</p> <p>বিমান বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জড়িত-সন্দেহ ডিবির এই কাজে যারা জড়িত তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ‘এয়ারলাইন্সের সিনিয়র কর্মকর্তা, সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার, সুপারভাইজাররা জড়িত থাকতে পারে বলে তথ্য পেয়েছি। তারা যদি জড়িতই না থাকবে, তাহলে এয়ারলাইন্সের সিনিয়র কর্মকর্তারা কিভাবে অনায়াশে বোর্ডিং পাশ দিয়ে দেয়। তাদের সম্পর্কে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। অবৈধ লোকদের ব্যাপারে তারা কেন কঠোর হয় না, টিকিট বোর্ডিং পেয়ে যাচ্ছে, বিদেশেও চলে যাচ্ছে।’</p> <p>গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘পুরো চক্র মিলে আড়াই শ মানুষকে তারা খপ্পরে বা প্রলোভনে ফেলে টুরিস্ট ভিসায় পাঠিয়েছে। যাদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপনের পর দেশে ফিরে এসেছে। কেউ এখনো জেল খাটছে। এই চক্রের সদস্যরা বিমান বাংলাদেশের নিয়োগের প্রশ্নফাঁস থেকে শুরু করে অনেক কিছুর ব্যাপারে জড়িত থাকতে পারে। আমরা এর তদন্ত করেছি।’</p>