<p>নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহারের অপরাধে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট দুই হাজার ৫১৬টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এই পাঁচ বছরে চার হাজার ২০৭টি মামলায় ছয় কোটি ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।</p> <p>মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এসব তথ্য জানান।</p> <p>জবরদখল করা বনভূমি উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশের মোট আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এলাকায় বনভূমি রয়েছে। বন অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দেশের বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জবরদখল করা বনভূমি উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বনভূমি জবরদখলের বিপরীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনে পাঠানো উচ্ছেদ প্রস্তাব সাত হাজার ৩৭৬টি, জেলা প্রশাসনের রুজু করা উচ্ছেদ মামলা ১৩টি, নিম্ন আদালতে দেওয়ানি মামলা ৮৫২টি, উচ্চ আদালতে রিট মামলা ১২২টি, উচ্চ আদালতে আপিল/মিস মামলা ৮৭টি, পিওআর মামলা সাত হাজার ৫৩২টি ও অন্যান্য ব্যবস্থায় ছয় হাজার ১৩০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।</p> <p>একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৬ হাজার ৪৭৪ দশমিক শূন্য ৭ একর জবরদখল করা বনভূমি পুনরুদ্ধার করে বনায়ন করা হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট আট হাজার ২০০ একর জবরদখল করা বনভূমি পুনরুদ্ধার করে বনায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।</p> <p>পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, সরকারের এসডিজি এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২৫) বাস্তবায়নে বন অধিদপ্তর থেকে দেশব্যাপী বনাচ্ছাদন ও বৃক্ষাচ্ছাদনের পরিমাণ ২০২৫ সালের মধ্যে যথাক্রমে ১৫ দশমিক ২ এবং ২৪ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এ পরিকল্পনার আওতায় শালবনের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারে সাত হাজার ২২০ হেক্টর সমতলভূমি এবং এক লাখ ৩০ হাজার ৫৮০ হেক্টর পাহাড়ি অবক্ষয়িত বনভূমিতে বনায়ন; ৫০০ হেক্টর আগরবাগান; ১৫ হাজার কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান সৃজন এবং স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে অংশীদারত্বমূলক বন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তা ছাড়া বনায়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৪৯৮ দশমিক ৫ হেক্টর ব্লক ও এক হাজার ৭০১ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান এবং ৯ হাজার ৪০৫ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন করা হয়েছে।</p> <p>একই সংসদ সদস্যের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সাবের হোসেন জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহারের অপরাধে মোট দুই হাজার ৫১৬টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে চার হাজার ২০৭টি মামলায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে ছয় কোটি ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ টাকা। এ ছাড়া ১৭০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই হাজার ৭১ দশমিক ৩৭ মেট্রিক টন পলিথিন, দানা ও কাঁচামাল জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে নিয়মিত মামলা হয়েছে ১৬টি। জনসচেতনতা বাড়াতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।</p> <p>সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশের ওপর প্লাস্টিক পণ্যের বিরূপ প্রভাব নিয়ন্ত্রণে প্লাস্টিক পণ্যের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পচনশীল প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রচলনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সারা দেশের কঠিন বর্জ্যের সুষ্ঠু ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এরই মধ্যে সরকার কর্তৃক ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে। </p> <p>তিনি বলেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১-এ মৌলনীতি হিসেবে ফাইভ-আর পলিসি (রিফিউজি, রিডিউস, রিইউজ, রিসাইকেল ও রিকভারি পলিসি) নেওয়া হয়েছে। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ২১ জুন উপকূলীয় অঞ্চলের ১২ জেলার ৪০টি উপজেলাকে কোস্টাল এরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করে ওই এলাকায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।</p> <p>মন্ত্রী বলেন, পলিথিনের ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় সরকার এরই মধ্যে পরিবেশ বিনষ্টকারী পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন এবং ব্যবহার বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর এ বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। আইন অনুযায়ী ক্ষেত্রবিশেষ বিভিন্ন পুরুত্বের পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।<br /> তিনি আরো বলেন, পলিথিন বন্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধে অধিদপ্তরের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা। তা ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের আওতায় ২০১০ সালের জুলাই থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানা উচ্ছেদ বা কারখানার মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হচ্ছে।</p>