<p>ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাক চাপায় মায়ের মৃত্যুর আগে জন্ম নেওয়া শিশু ফাতেমা আক্তারের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছেন হাইকোর্ট। এর জন্য সড়ক পরিবহন আইনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে আবেদন করতে বলা হয়েছে।</p> <p>শিশু ফাতেমার পরিবারের পক্ষে এক মাসের মধ্যে রিটকারী পক্ষের আইনজীবীকে এ আবেদন করতে বলেছেন আদালত। আবেদনের এক মাসের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ডকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের সে টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনে প্রয়োজনীয় ও পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের ব্যবস্থা করে দিতে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।</p> <p>গত বছর ১৬ জুলাই দুর্ঘটনার পর শিশু ফাতেমার জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কানিজ ফাতেমা। সে রিটে শিশুটির ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার রায় দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের দ্বৈত বেঞ্চ।</p> <p>আদালতে রুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুহাম্মদ রাফিউল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।</p> <p>আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আদালতের নির্দেশে গত বছর ডিসেম্বরে ট্রাস্টি বোর্ড পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। আর বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন সংস্থা থেকে অনুদানও আসে। সোনালী ব্যাংকে খোলা হিসাবে সে টাকা রাখা ছিল। সেখান থেকে পারিবারিক খরচ নির্বাহের পর এখন ওই ব্যাংক হিসাবে ১৩ লক্ষ ১১ হাজার টাকা আছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। এই টাকা দিয়েও সঞ্চয়পত্র কিনে প্রয়োজনীয় ও পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের ব্যবস্থা করে দিতে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।'</p> <p>ক্ষতিপূরণের আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, 'সড়ক পরিবহণ আইনের বিধিমালার ১৪৯(ক) বিধিতে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির আর্থিক ক্ষতিপূরণ ৫ লক্ষ টাকার কথা উল্লেখ আছে। দুর্ঘটনায় শিশু ফাতেমার মা-বাবা ও এক বোনসহ মোট মারা গেছে। তাই সে অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হবে। আদালত বলে দিয়েছেন, এ বিধানটি ধরে যেন তাদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়।' খুব শিগগিরই আবেদনটি করা হবে বলে জানান এই আইনজীবী।</p> <p>গত বছর ১৬ জুলাই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রহিমা আক্তার রত্নার চিকিৎসার জন্য ত্রিশাল উপজেলার রাইমনি গ্রামের ফকিরবাড়ির মো. জাহাঙ্গীর আলম সদরে এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে ছয় বছরের মেয়ে সানজিদাও ছিল। সদরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে সড়ক পার হওয়ার সময় ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে তিনজনেই ছিটকে রাস্তায় পড়ে যায়। এই অবস্থায় শিশু ফাতেমাকে জন্ম দিয়ে সড়কেই মারা যান রত্না। দুর্ঘটনা স্থলে স্বামী জাহাঙ্গীর ও সানজিদারও মত্যু হয়। পরদিন এ দুর্ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত খবর আদালতের নজরে এনে নবজাতকের জন্য ক্ষতিপূরণের জন্য স্বপ্রণোদিত আদেশ চান আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। আদালত আদেশ না দিয়ে আবেদন নিয়ে আসতে বলেন।</p> <p>পরে ১৮ জুলাই আইনজীবী কানিজ ফাতেমা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদন করলে ১৯ জুলাই প্রাথমিক শুনানির পর রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে শিশুটির পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে ৫ লক্ষ টাকা দিতে ট্রাস্টি বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়।</p> <p>এ ছাড়া শিশু ফাতেমার দেখভাল ও সুরক্ষায় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে একটি কমিটি ঘটনের নির্দেশ দেন আদালত। শিশুটির সার্বিক অবস্থা নিয়ে এ কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।</p> <p>এ ছাড়া শিশু ফাতেমা ও তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে এবং তার সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বিবাদিদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। আদালতের এ আদেশের পর ওই বছরের ২৯ জুলাই থেকে শিশু ফাতেমাকে রাজধানীর আজিমপুরে পুনর্বাসন কেন্দ্র ছোটমণি নিবাসের তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়। সেখানেই বেড়ে উঠছে শিশু ফাতেমা আক্তার। তার ভাই মো. এবাদুল্লাহ (৮), বোন মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌস, দাদা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও দাদী ত্রিশালে মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামে থাকেন।</p>