<article> <p style="text-align: justify;">প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশ ছাড়া অন্য দেশ নিয়ে নানা কিসিমের প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার অন্যতম ‘বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন’। এমন প্রতিবেদনে শুধু মানবাধিকারের বিষয় নয়, ‘গণতন্ত্র’, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোও স্থান পায়। যেসব দেশের কথা এই প্রতিবেদনে স্থান পায়, তার প্রায় কোনোটিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাপকাঠিতে পাস নম্বর পায় না। প্রায় সব ক্ষেত্রেই গেল গেল রব।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">অথচ বিশ্বে যে কয়টি দেশে এই বিষয়গুলো সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ, তার একেবারে শীর্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই স্থানটি তাদের দখলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। এই একটি দেশ, যাদের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা আছে অন্য দেশের সরকারের কার্যকলাপ তাদের পছন্দ না হলে সেই দেশের সরকারকে উত্খাতের বা সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করার। দেশটি দেশে দেশে তাদের অর্থায়নে তাঁবেদার সংগঠন লালন-পালন করে, যারা চাহিবামাত্র নিজ দেশের যত রকমের অসত্য, অর্ধসত্য বা বানোয়াট তথ্য দিয়ে তাদের নিয়মিত সহায়তা করে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বর্তমানে বাংলাদেশে এমন সংস্থার সংখ্যা কমপক্ষে অর্ধডজন। ব্যক্তি আছেন কয়েক ডজন।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="কিসিমের প্রতিবেদন " height="383" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/04.April/28-04-2024/mk/kk-6-2024-04-28-01a.jpg" width="400" />এখন একটু দেখা যাক, যে যুক্তরাষ্ট্র সারা দুনিয়ায় ‘মানবাধিকার’, ‘গণতন্ত্র’ আর ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতার’ কথা বলে নিয়মিত হৈচৈ ফেলে দেয়, সেই যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে কী হচ্ছে। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের পেটে জোরপূর্বক ইউরোপ থেকে নিয়ে আসা ধর্মান্ধ জায়নবাদী ইহুদিদের জন্য ইসরায়েল নামক একটি জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র সৃষ্টি করার পর সেই অঞ্চলে বিরামহীনভাবে গণহত্যা আর তার আদি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ চলছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এই জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রটি সৃষ্টির পেছনে ছিল জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন আর ফরাসিদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। উসমানীয় খিলাফত অবসানের পর তেলসমৃদ্ধ এই আরব অঞ্চলে পশ্চিমা শক্তিগুলোর প্রয়োজন ছিল একটি শক্তিশালী খুঁটি, যাকে ব্যবহার করে তারা আরবভূমির প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট করতে পারে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য ইসরায়েল। সেই থেকে এখানে এই পরাশক্তিগুলোর প্রত্যক্ষ মদদে ফিলিস্তিনে চলছে নির্বিচারে গণহত্যা। বর্তমান গণহত্যার শুরু গত অক্টোবর মাসে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সেই গণহত্যাকেও মদদ দেওয়ার জন্য মার্কিন কংগ্রেস সম্প্রতি ইসরায়েলের জন্য ২৩ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। সেই যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশসহ অন্য দেশের মানবাধিকার নিয়ে জেরবার।</p> <p style="text-align: justify;">দেশে দেশে যখনই মানবতা পদদলিত হয়েছে, তখনই বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিবেকবান মানুষ তার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। এই প্রতিবাদে সব সময় তরুণসমাজ নেতৃত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশে মার্কিন মদদে যখন একাত্তরে গণহত্যা চলছিল, তখন বিশ্বে তো বটেই খোদ পাকিস্তানেও একটি মহল তার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। সেটি হয়তো খুবই ছোট ছিল। তাদের কেউ কেউ কারাগারে গিয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে সারা বিশ্বে তরুণরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায় এমন এক বিক্ষোভ চলাকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশ গুলি চালালে দুজন ছাত্র নিহত ও চারজন আহত হয়। প্রতিবাদে উত্তেজিত ছাত্ররা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থিত মার্কিন তথ্য কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করে। তারও আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্ররা ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধ করার দাবিতে সেই দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমুল ছাত্র আন্দোলন শুরু করে। মার্কিন সেনারা যখন ভিতেনামের গেরিলাদের হাতে প্রচণ্ড মার খাচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম যুদ্ধকে ছড়িয়ে দিতে পাশের দেশ কম্বোডিয়ায় ঢুকে কোনো কারণ ছাড়া গণহত্যা শুরু করে। ১৯৭০ সালের ৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তলবে আধাসামরিক বাহিনী ন্যাশনাল গার্ড এসে ছাত্রদের ওপর গুলি চালালে দুজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়। এসব ঘটনা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।</p> <p style="text-align: justify;">ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলছে তীব্র ছাত্র আন্দোলন। এতে যোগ দিয়েছেন ফিলিস্তিনে গণহত্যাবিরোধী শিক্ষকরাও। শুরুটা দেশটির একেবারে প্রথম কাতারের কুলীন বিশ্ববিদ্যালয় নামে খ্যাত নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফিলিস্তিনে মর্কিন মদদে গণহত্যা বন্ধ করার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস দখল করে সেখানে তাঁবু খাটিয়েছে। সেই বিক্ষোভ দমনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকার সিদ্ধান্ত নিলে এর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ওয়াক আউট করেন। পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে পুলিশ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যায়। হার্ভার্ড, বোস্টন, এমআইটি, টেক্সাসসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া তাদের সমাবর্তন বাতিল করেছে। এই আন্দোলনে জায়নবাদবিরোধী ইহুদিসহ অন্য ধর্মাবলম্বীরাও অংশ নিচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিক্ষোভ দমনে আধাসামরিক বাহিনী তলব করার চিন্তা করছে। সার্বিক বিচারে মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে যে এই আন্দোলন সত্তরের দশকের ভিয়েতনামের পক্ষের আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন মার্কিন করপোরেশন ঘোষণা করেছে, এই বিক্ষোভ যদি থামানো না হয়, তাহলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেবে।</p> <p style="text-align: justify;">অনেকেই হয়তো জানেন না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব কুলীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বড় বড় মার্কিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অর্থে চলে। যারা এই অর্থায়ন করে, তারা প্রায় সবাই ইসরায়েলের গণহত্যার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ মদদদাতা। তাদের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র ও সরঞ্জাম প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের এই ঘোষণায় মার্কিন সরকার সরাসরি সমর্থন দিয়েছে। অন্যদিকে দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা মিলে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে সমাবেশ করে দাবি করছেন সব আরবকে হত্যা করতে হবে। এমনটা ঘটছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষাকর্তা দেশটিতে। অন্যদিকে সেই দেশের গণমাধ্যমের ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তারা ‘গণহত্যা’, ‘এথনিক ক্লিনজিং’ বা ‘অধিকৃত অঞ্চল’ শব্দগুলো ব্যবহার করতে পারবে না। সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের তথাকথিত বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলে বাংলাদেশে নাকি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। ধাপ্পাবাজিরও একটা সীমা থাকে!</p> <p style="text-align: justify;">সোমালিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ইলহান ওমর যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে রিপাবলিকান দল থেকে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কংগ্রেসে প্রথম মুসলমান সদস্য। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইলহান কংগ্রেসে (যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ) ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দখলদারি বন্ধের দাবিতে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এই ‘অপরাধে’ তাঁকে  পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটিসহ সব কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। তাঁর কন্যা ইসরা হিরসিকে কয়েক দিন আগে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুধু গ্রেপ্তারই করা হয়নি, তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীনিবাস থেকেও বের করে দেওয়া হয়েছে। কারা বলে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই!</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য দেশের মধ্যে মার্কিন অর্থায়নে লালিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অভাব নেই। নিয়মিত এসব গোষ্ঠী তাদের বিদেশি প্রভুদের বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তিকর অসত্য, অর্ধসত্য, বানোয়াট তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হলে তাৎক্ষণিকভাবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাঁদের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে ‘সব গেল’ বলে চিৎকার শুরু করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলা তাদের ‘নৈতিক’ দায়িত্ব। কারণ তারা এখনো মনে করে, বিশ্বের সব কিছুতেই মোড়লিপনা করা তাদের জন্মগত অধিকার, যদিও তাদের সেই কল্পিত অধিকার এখন ক্ষয়িষ্ণু। ষাট-সত্তরের দশকের ঠাণ্ডা লড়াইয়ের বিশ্ব আর বর্তমান বিশ্ব এক নয়।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। একাত্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল বাধার মুখে এই দেশটির জন্ম। ৫৩ বছর ধরে দেশটির নানা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করেছে বা করার চেষ্টা করেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তারা তাদের মতো করে বাংলাদেশের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে তাদের পছন্দের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টায় সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছিল। তাদের সর্বতোভাবে সহায়তা করেছিল এ দেশে তাদের লালিত তাঁবেদার গোষ্ঠী। সেই চেষ্টায় তারা সফল হয়নি, এর একমাত্র কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা। তবে সেই চেষ্টা এখনো চলমান। তাদের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনগণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনে অক্ষম। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের ওপর গুরুতর এবং অযৌক্তিক বিধি-নিষেধ রয়েছে।’ প্রতিবেদনের এই অংশের কোনো ব্যাখ্যা নেই। তারা সম্ভবত প্রত্যাশা করে, নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে তাদের পছন্দের কোনো অপশক্তি ক্ষমতায় আসুক।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশ তো মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী চলে না। এ দেশে একটি সংবিধান আছে, যা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দানকারী ৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা। বাংলাদেশে নির্বাচন কিভাবে হবে, তা সেই সংবিধানে উল্লেখ করা আছে। এ দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সব মিত্র রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী দাবি করছিল, নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে; সংসদ ও নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিতে হবে। এমন ব্যবস্থা বিশ্বে কোন দেশে আছে? আর কয় মাস পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট, প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের কোনো কোনো আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন সামনে রেখে কি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পদ্যতাগ করবেন বা প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দেওয়া হবে বা তাদের কার্যকলাপ স্থগিত করা হবে? কোনোটিই হবে না। কারণ মার্ির্কন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান তা অনুমোদন করে না। এই নির্বাচন পরিচালনা করবে বাইডেন প্রশাসন। অন্যদিকে বাইডেনকে যিনি চ্যালেঞ্জ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেই রিপালিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়মিত আদালতের কাঠগড়ায় নানা ফৌজদারি মামলার কারণে দাঁড়াতে হচ্ছে। কই বাংলাদেশ বা বিশ্বের অন্য কোনো দেশ তো এ নিয়ে কোনো কথা বলছে না। আসলে বিশ্ব বুঝে গেছে, যা জো বাইডেন, তা ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতার পালাবদল হলেও তাঁদের অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অযাচিত হস্তক্ষেপ নীতির কোনো পরিবর্তন হয় না।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশে বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশের রাষ্ট্রদূত বা প্রতিনিধি আছেন। এ দেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মতো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে এত দৌড়ঝাঁপ করতে কাউকে দেখা যায় না। তাঁর এজেন্ডার কোনো কমতি নেই। কয়েক দিন আগে তিনি চট্টগ্রামে গিয়ে বলে এলেন ‘সমৃদ্ধি শুধু মেগাপ্রকল্পে নয়, নাগরিক স্বাধীনতায়ও থাকতে হবে’। তিনি ভুলে গেছেন যে এই বাংলাদেশেই সরকারের অনুমতি নিয়ে সরকার উত্খাতের আন্দোলন করা যায়, প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেওয়া যায়, রাজনৈতিক জমায়েতের সুযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করা যায়, রোগী বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্সে আগুন দেওয়া বা দেশে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়। একান্ত আলাপচারিতায় একজন পশ্চিমা কূটনৈতিক আমাকে নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, দেশে সরকার উত্খাতের নামে যা হচ্ছে, তার অর্থায়ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তাঁর এই বক্তব্যের সত্য-মিথ্যা যাচাই করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে যখন দেশটির বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন বলে ‘নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে সক্ষম নয় জনগণ’, তখন তো ওই কূটনীতিকের কথার কিছুটা হলেও সত্যতা পাওয়া যায়।</p> <p style="text-align: justify;">বিশ্বের প্রায় সব দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বতঃপ্রণোদিত বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করলেও বাংলাদেশের সরকারবিরোধী মহল এতে বেশ খুশি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী কোনো রাখডাক না করেই বলে ফেলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের মনের কথাই বলেছে’। গত ৫০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রান্ত পররাষ্ট্রনীতি বিশ্বে তাদের অবস্থা নড়বড়ে করে দিয়েছে। অথচ থমাস জেফারসন আর আব্রাহাম লিংকনের এই দেশটি একটু বাস্তবমুখী চেষ্টা করলে বিশ্বের অনেক সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে পারত। আর ভুললে চলবে না, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতিতে চলে। কোনো দেশের মানবাধিকারের বিষয়টি শতভাগ নির্ভেজাল, তা কেউ দাবি করে না। বাংলাদেশেও না। তা সংশোধন করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশের। আর যুক্তরাষ্ট্রের মনে রাখা উচিত, এই অঞ্চলে বাংলাদেশ তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু রাষ্ট্র হতে পারে, যদি দেশটি সব কিছুতেই অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করে।</p> <p style="text-align: justify;"><b>লেখক : বিশ্লেষক</b> ও গবেষক</p> </article>