<p>কারাগারে থাকা অবস্থায় নিজের জীবনের আত্মশুদ্ধি উপলব্ধি করার জন্য মোটিভেশন প্রগ্রাম ও কারাগার থেকে বেরিয়ে যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে সেজন্য কারা অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।</p> <p>‘রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ’। এই স্লোগান সামনে রেখে দেশের কারাগারের ভেতর বিভিন্ন পণ্য তৈরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বন্দিদের নানা কাজকর্ম শেখান কারা কর্তৃপক্ষ। বিশ্বে উন্নতমানের কারাগারগুলোতে বন্দিদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধাসহ কাউন্সেলিং ও মোটিভেশনের মাধ্যমে মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলা হয়। আধুনিক ব্যবস্থাপনায় কারাগার এখন একটি সংশোধনী প্রতিষ্ঠান।</p> <p>আলোর পথ দেখানোর অংশ হিসেবে বন্দিরা কারাগারে বসেই প্রশিক্ষণের পর কাজকর্মের আয় দিয়ে কারাগারের ভেতর যেমন নিজে চাহিদা মিটাতে পারে তেমনই পারে তার পরিবারকেও সহযোগিতা করতে। শুধু কারাগারেই নয়, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কারাগারের  প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে করতে পারে উপার্জন। হতে পারে একজন সফল ব্যবসায়ী।</p> <p>বন্দিদের জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) ভেতরে উৎপাদন শাখায় রয়েছে একটি পোশাক কারখানা। সেখানে কাজ করেন ২৫০ থেকে ৩০০ বন্দি। বন্দিদের এসব তৈরি করা পোশাক রপ্তানি হয় দেশ-বিদেশে।</p> <p>মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সমস্ত কারাগারগুলোকেও সংশোধনাগারে পরিণত করার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে কারা মহাপরিদর্শকের তত্ত্বাবধানে দেশের ৬৮টি কারাগারে জোরেশোরে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নিরক্ষর বন্দিদের সাক্ষরতা জ্ঞানসহ প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মূল্যায়ন পরীক্ষা নিয়ে তাদের সনদ প্রদান করা হচ্ছে। কারাগারের ভেতরে বন্দিদের বিভিন্ন পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেমন পোশাক, বেনারসি ও জামদানি শাড়ি, জুতা তৈরি, শো-পিস বানানোর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কম্পিউটার চালানো শেখানো হয়। একইসঙ্গে টেলিভিশন, রেডিও, রেফ্রিজারেটর, ফ্যান, এয়ারকন্ডিশন মেরামতসহ বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি সার্ভিসিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বন্দিদের জন্য কারাগারে মাদকবিরোধী মোটিভেশন, ধর্মীয় মোটিভেশন, মেডিটেশন ও গণশিক্ষার ব্যবস্থা আছে। যাতে কারাগার থেকে বন্দিরা মুক্তি পেয়ে হতাশায় না ভোগেন। এ সকল বন্দিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আমাদের দক্ষ প্রশিক্ষক এবং বন্দিদের মধ্যেও অনেকের বিভিন্ন কাজের দক্ষতা থাকে তাদের মাধ্যমেই আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।</p> <p>তিনি আরো বলেন, বন্দিরা এ প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তির পর তারা নিজেরাই যেন কাজ করে খেতে পারেন। পাশাপাশি তারা মুক্তির পর আবার যেন অপরাধের দিকে ধাবিত না হন, সে বিষয়ে তাদের মানসিকভাবে গড়ে তোলা হয়। এমন অনেক বন্দি আছেন, কারাগারে থেকে নানা কাজের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাইরে বের হয়ে তারা নিজেরাই ছোটখাটো কারখানা দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। আগের অপরাধ তারা ভুলে গিয়ে নতুন জীবন গড়ে তুলেছেন।  </p> <p>সুভাষ কুমার ঘোষ আরো বলেন, কারাগারের ভেতরে উৎপাদন শাখায় ছোটখাট একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। সেখানে ২৫০ থেকে ৩০০ বন্দি কাজ করে থাকেন। আমাদের দেশে যেসব বিদেশি বায়ার আছে, আমরা তাদের কাছ থেকে পণ্য তৈরির করার জন্য সাব-কন্ট্রাক নিয়ে থাকি। পরে আমাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বন্দিদের মাধ্যমে সেগুলো তৈরি করে দেই। আমাদের কারাগারে তৈরি পোশাক দেশ ও দেশের বাইরেও যায় বলেও জানান তিনি। আর এখান থেকে যে আয় হয় তা অর্ধেক পায় বন্দিরা আর অর্ধেক থাকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে।</p> <p>তিনি আরো বলেন, কারাগারে বন্দিদের ছয় মাস অন্তর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে এসব বন্দিদের আবার সনদ প্রদান করা হয়। প্রতি ব্যাচে প্রায় ১০০ থেকে ১৩০ জন বন্দি প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। প্রশিক্ষণ শেষে যারা কৃতকার্য হয় তাদের মধ্যে দেওয়া হয় সনদ। পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে কারাগার হস্তান্তর হওয়ার পর ১ হাজার ৬৪২ বন্দিকে প্রশিক্ষণ শেষে সনদ প্রদান করা হয়েছে। বন্দিদের নিরাপদ আটক নিশ্চিত করা, কারাগারের কঠোর নিরাপত্তা ও বন্দিদের মাঝে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, বন্দিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা, যথাযথভাবে তাদের বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা এবং আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিশ্চিত করা এবং একজন সুনাগরিক হিসেবে সমাজে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।</p>