<p style="text-align: justify;">আসন্ন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরই তিন নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তাদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। এই নির্বাচন ঘিরে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। আগে এমন বিভক্তি থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতাকর্মীরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত ছিলেন। ওই নির্বাচনে দলের একটি পক্ষ সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল এবং অপর পক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কামাল আজাদের পক্ষে কাজ করেন। </p> <p style="text-align: justify;">এ অবস্থায় কয়েক মাস অতিবাহিত হতে না হতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে নিয়ে এবার ত্রিমুখী অবস্থানে রয়েছে দলটি। প্রকাশ্যে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় এবং আওয়ামী লীগের প্রতি গ্রুপ থেকে একজন করে প্রার্থী হওয়ায় নেতাকর্মীরা কার পক্ষে কিভাবে কাজ করবেন, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। প্রচারে তারা কোন দিকে কিভাবে অবস্থান নেবেন, তার কোনো কূলকিনারাও পাচ্ছেন না। এতে করে নেতাকর্মীদের মাঝে দূরত্ব যেমন বাড়ছে, তেমনি দলীয় কোন্দলের বলি হওয়ার ভয়ে অনেক নেতাকর্মীই রয়েছে নিশ্চুপ। </p> <p style="text-align: justify;">তারা নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতির ভাবনায় দিশাহারা। এ পরিস্থিতিকে এক ‘মহাবিপদ’ বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। যে কারণে প্রার্থীদের প্রচার কার্যক্রমেও প্রাণ পাচ্ছে না। প্রার্থীদের গত কয়েক দিনের প্রচার-প্রচারণা পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে একান্তে আলাপ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। </p> <p style="text-align: justify;">আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোট পাঁচজন। এর মধ্যে একজন স্বতন্ত্র ও একজন বিএনপি সমর্থিত হলেও বাকি তিনজনই আওয়ামী লীগ সমর্থিত পদধারী নেতৃত্বস্থানীয় নেতা। </p> <p style="text-align: justify;">আনারস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ। তিনি সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলের বড় ভাই। তিনি শহিদুল ইসলাম বকুলের পক্ষের প্রার্থী। দোয়াত কলম প্রতীকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন নির্বাচন করছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং দীর্ঘদিনের দায়িত্বে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুসকে নিয়ে তার পক্ষে কাজ করছেন। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক উভয়েই বর্তমান সংসদ সদস্যের (স্বতন্ত্র) সমর্থকদের সঙ্গে নির্বাচন করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। এমনকি সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তারা একসঙ্গেই কাজ করেছেন। তবে এই উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে তারা পৃথক হয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।<br /> অপরদিকে শালিক প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আসলাম উদ্দিন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমানকে নিয়ে কাজ করছেন।</p> <p style="text-align: justify;">জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং দীর্ঘদিনের দায়িত্বে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলেও ছায়াশক্তির মতো আমাদের এমপির প্রভাব রয়েছে এই নির্বাচনে। নির্বাচনে স্থানীয় এমপির পরোক্ষ প্রভাব দলে বিভক্তি সৃষ্টির অন্যতম আরো একটি কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি। এমপি সাহেব সরাসরি মাঠে না থাকলেও তিনি বা তার সমর্থকরা মাঠে শালিক প্রতীকের আসলাম উদ্দিনের পক্ষে কাজ করছেন। </p> <p style="text-align: justify;">তিনি আরো বলেন, আবুল হোসেন আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের দুঃসময়ে রাজপথে ছিলেন, এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা ও ওকালতি পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি একজন ত্যাগী নেতা। তাই আমরা তাকে যোগ্য প্রার্থী মনে করে সমর্থন দিয়েছি। </p> <p style="text-align: justify;">উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু বলেন, দলীয়ভাবে নির্বাচন যেহেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, তাই যে যার মতো নির্বাচন করতে পারে। আর রাজনীতিতে গ্রুপিং থাকবেই। কিন্তু প্রকাশ্যে এত বিভক্তি কোথাও নেই। এটি দলের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের পক্ষ সমর্থন করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরিফুল ইসলামের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন বলেও জানান। </p> <p style="text-align: justify;">উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হওয়ার পর থেকে তিনি তার সমর্থকদের নিয়ে আছেন। বাকিরা যার যার আলাদা সমর্থকদের নিয়ে আছেন। এই গ্রুপিংয়ের কারণে দল সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে তিনি শালিক প্রতীকের আসলাম উদ্দিনের পক্ষে কাজ করছেন বলেও জানান। </p> <p style="text-align: justify;">উপজেলা নির্বাচনে ছায়াশক্তির মতো কাজ করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নাই।</p>