<p style="text-align: justify;">সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা। সম্প্রতি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। পাবলিক পরীক্ষায় সফলতার <img alt="দক্ষ শিক্ষক ও প্রশিক্ষণে পিছিয়ে মাদরাসা শিক্ষা" height="240" src="https://www.kalerkantho.com/_next/image?url=http%3A%2F%2Fcdn.kalerkantho.com%2Fpublic%2Fnews_images%2F2023%2F11%2F04%2F1699128908-55e6b66b383945a7efb016d5633cce1f.jpg&w=1920&q=100" style="float:left" width="400" />দিক থেকেও সবচেয়ে পিছিয়ে এসব শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রতিবছরই কমছে পাসের হার।</p> <article> <p style="text-align: justify;">যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাবে মাদরাসা শিক্ষা পিছিয়ে পড়ছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে সার্বিকভাবে পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি মানতে নারাজ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিএমই) কর্মকর্তারা।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে দেশে দাখিল (এসএসসি), আলিম (এইচএসসি), ফাজিল (অনার্স) ও কামিল (মাস্টার্স) পর্যায়ে এক লাখ ১৯ হাজার আটজন শিক্ষক কর্মরত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ৩১ হাজার ৯৬০ জন। অর্থাৎ মোট শিক্ষকের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের হার ২৬.৮৬ শতাংশ।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এ বিষয়ে ডিএমই উপপরিচালক মো. জাকির হোসাইন বলেন, আগে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক ছিল না। ফলে প্রশিক্ষণের জন্য আহ্বান করা হলে প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা একই শিক্ষককে বারবার নির্বাচন করতেন। এতে একজন শিক্ষক একাধিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এসব কারণে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের হার কম হতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে এরই মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। চলতি বছর প্রায় ছয় হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। গত তিন বছরে আইসিটি বিষয়ে ছয় হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট-বিএমটিটিআই থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর পৃথকভাবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ-এনটিআরসিএর মাধ্যমে দাখিল ও আলিম পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। মাদরাসা শিক্ষার মূল ভিত্তি ইবতেদায়ি স্তর হলেও এখানে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগে কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে মানসম্মত পাঠদানে সবচেয়ে পিছিয়ে ইবতেদায়ি স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।</p> <p style="text-align: justify;">প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন) এনএসএ-২০২২ প্রতিবেদনে সাধারণ, কারিগরি ও মাদরাসার তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক মেধা মূল্যায়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। চলতি বছর জুন মাসে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের গড় স্কোর মোট জাতীয় গড় স্কোরের নিচে অবস্থান করছে, যা অন্যান্য শিক্ষাব্যবস্থার তুলনায় সবচেয়ে নিচে। যেমন—তৃতীয় শ্রেণিতে গণিত বিষয়ে মোট গড় স্কোর ১০৪, যেখানে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের গড় স্কোর ৯৯। প্রায় একই অবস্থানে আছে এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গণিতে গড় স্কোর ১০৫।</p> <p style="text-align: justify;">ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুল হালিম বলেন, এনএসএ-২০২২-এর তুলনায় এই স্তরের মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মেধার প্রকৃত চিত্র আরো বেশি খারাপ। এই পিছিয়ে পড়ার কারণে শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করা যাবে না, শিক্ষকদের দায় নিতে হবে। তাদের শিখন-শেখানো ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। এনটিআরসিএর মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দক্ষতা যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ ছাড়া শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">ডিএমই মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাদরাসা শিক্ষার্থীরা খুব বেশি পিছিয়ে পড়েছে, এ কথা বলা যাবে না। মাদরাসা শিক্ষা মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থা। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা যা পড়ছে, আমাদের শিক্ষার্থীদের তা পড়ানো হচ্ছে। আগের তুলনায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বাড়ানো হয়েছে। নিয়মিত প্রশিক্ষণের বাইরে ব্লেন্ডেড প্রক্রিয়ার আরো বেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে আমরা বিজ্ঞান মেলা করেছি, সেখানে সারা দেশের বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে প্রজেক্ট জমা দিয়েছিল। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা, জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা ও বৈশ্বিক ধারণা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’</p> </article>