<p style="text-align:justify">শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের আইএফআইসি ব্যাংককে অনেকেই সালমান এফ রহমানের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক মনে করে। কিন্তু ব্যাংকটিতে তাঁর বিনিয়োগের পরিমাণ মোট শেয়ারের ২ শতাংশ। অন্যদিকে, ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৩২.৭৫ শতাংশ শেয়ার সরকারের। অর্থাৎ ব্যাংকটি বর্তমানে সরকারি বিনিয়োগনির্ভর।</p> <p style="text-align:justify">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সালমান এফ রহমান বেসরকারি ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের বেশির ভাগই সরকারের বিনিয়োগে বাধ্য করেছেন। পাশাপাশি বেনামে নিজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় পাঁচ হাজার ২১৮ কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণখেলাপি হলে ব্যাংকও দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, পাবলিক লিমিটেড কম্পানির মালিকানা বা অংশীদারি শেয়ারসংখ্যার ওপর নির্ভর করে। শেয়ারসংখ্যার স্থির মূল্যের ওপর ভিত্তি করে কম্পানির পরিশোধিত মূলধন নির্ণয় করা হয়। শেয়ারবাজারে প্রতিটি শেয়ারে স্থির মূল্য বা ফেস ভ্যালু ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো কম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন হয়।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়মানুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানিগুলোর ৩০ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে থাকতে হয়। বাকি শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারী, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও অন্য প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেন। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার হাতে রাখতে হয়। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমোদন ছাড়া উদ্যোক্তাদের হাতে থাকা ২ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করা যায় না।</p> <p style="text-align:justify">ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৩১ জুলাই ২০২৪ শেষে আইএফআইসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালক শেয়ার ছিল ৬.০৪ শতাংশ। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩২.৭৫ শতাংশ সরকারের, ২১.১১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের, ০.৬৪ শতাংশ বিদেশি ও ৩৯.৪৬ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ছিল।</p> <p style="text-align:justify">৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক পদে রয়েছে সাতজন। এর মধ্যে সরকার নির্বাচিত পরিচালক তিনজন, যাঁরা ৩২.৭৫ শতাংশ শেয়ারের প্রতিনিধিত্ব করছেন। স্বাধীন পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, যাঁর হাতে কোনো শেয়ার নেই।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে ২ শতাংশ শেয়ার নিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন সালমান এফ রহমান, ২.১১ শতাংশ শেয়ার নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান। অ্যাসেস ফ্যাশনস লিমিটেড ঋণখেলাপি হওয়ায় তিনি পদ হারিয়েছেন। এ ছাড়া ২.০৩ শতাংশ শেয়ার নিয়ে পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন এ আর এম নাজমুস সাকিব। তিনি ট্রেড নেক্সট ইন্টারন্যাশনালের মনোনীত পরিচালক।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সালমান এফ রহমান আইএফআইসি ব্যাংক থেকে শ্রীপুর টাউনশিপ প্রতিষ্ঠানের নামে নন-ফান্ডেড এক হাজার ২০ কোটি টাকা, সানস্টার বিজনেসের নামে ৬১৫ কোটি, ফারেস্ট বিজনেসের নামে ৬১৪ কোটি, কসমস কমোডিটিস লিমিটেডের নামে ৬১২ কোটি, অ্যাপোলো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ৪৫৫ কোটি, আল্ট্রন ট্রেডিং লিমিটেডের নামে ৪৪৯ কোটি, নর্থস্টোন কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নামে ৪২১ কোটি, আলফা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের নামে ৫৬৯ কোটি ও অ্যাবসলিউট কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নামে ৪৬৩ কোটি টাকার ঋণ নেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই বেনামি।</p>