<p style="text-align: justify;">দেশে বেসরকারি বিনিয়োগে গড়ে উঠছে তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড)। এর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় দেশীয় শিল্প গ্রুপ সিটি ও স্ট্যান্ডার্ড ইজেড ভূমি উন্নয়ন শেষে শিল্প প্লট বরাদ্দের অপেক্ষায় আছে। আর মেঘনা গ্রুপ তিনটি উন্নয়নের পর এখন চতুর্থ ইজেড গড়ছে।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা যায়, দেশীয় গ্রুপ অব কম্পানির মধ্যে মেঘনা গ্রুপ চতুর্থ ইজেডের প্রাক-যোগ্যতা সনদ ও সিটি গ্রুপ তৃতীয় ইজেডের চূড়ান্ত সনদ পেতে যাচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">একাধিক ইজেড উন্নয়ন ধারায় আছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বর্তমানে তিনটি ইজেডের উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করছে তারা। নতুন করে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের অর্থনৈতিক অঞ্চলটি চূড়ান্ত লাইসেন্স পেতে যাচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন করা ভোলা ইজেডে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে চীনের একটি কম্পানি।</p> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া ইজেড উন্নয়ন করে নতুন নতুন শিল্প স্থাপন করা হয়েছে বে ইজেড, আমান ইজেড, আব্দুল মোনেম ইজেডসহ বিভিন্ন ইজেডে।</p> <p style="text-align: justify;">বেজার তথ্য অনুযায়ী, গভর্নিং বোর্ড এরই মধ্যে ২৯টি বেসরকারি ইজেডের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ২০টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে প্রাক-যোগ্যতা সনদ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১২টি বেসরকারি ইজেড প্রতিষ্ঠায় চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়েছে। চলমান এসব বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এর মধ্যেই প্রায় চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এতে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">চূড়ান্ত সনদ পাওয়া আটটি বেসরকারি ইজেড বাণিজ্যিক উৎপাদনে রয়েছে। এসব অঞ্চলে উৎপাদনশীল, নির্মীয়মাণসহ মোট ৮৩টি শিল্প ইউনিট রয়েছে। বেসরকারি এই জোনগুলোতে উৎপাদিত সিমেন্ট, চামড়াজাত পণ্য, ভোজ্য তেল, ব্যাগ, পেপার, টিস্যু, খেলনা, বেভারেজ এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাস্তবায়নে বেসরকারি অনেক ইজেড সফল হয়েছে বলে জানায় বেজা।</p> <p style="text-align: justify;">এ বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ভূমিস্বল্পতার কারণে দেশে শিল্প স্থাপনে নিষ্কণ্টক জমি পাওয়া কঠিন। জালজালিয়াতি ও প্রতারণার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী আগে পছন্দমতো জমি পাননি। আবার যেসব জায়গায় জমি পেয়েছেন সেখানে অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেননি। বেসরকারি খাতের কম্পানিগুলো এসব বাধা অতিক্রম করে সমাধান দিতে ইজেড স্থাপনে এগিয়ে আসছে। </p> <p style="text-align: justify;">মেঘনার চতুর্থ ইজেড তিতাস</p> <p style="text-align: justify;">বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে ‘তিতাস ইকোনমিক জোন  লিমিটেড’ নামের আরো একটি ইজেড করছে মেঘনা গ্রুপ। এই জোন প্রতিষ্ঠা হলে এটি হবে মেঘনা গ্রুপের চতুর্থ ইজেড। শিগগিরই এই ইজেডের প্রাক-যোগ্যতা সনদ দিতে যাচ্ছে বেজা।  এরই মধ্যে মেঘনার দুটি ইজেড শিল্প স্থাপন প্রায় শেষ পর্যায়ে। তৃতীয় ইজেডের উন্নয়নকাজ চলছে। নতুন করে আরেকটি ইজেড স্থাপন করতে যাচ্ছে। গত ৯ নভেম্বর নতুন এই জোন স্থাপনের জন্য জমির গেজেট প্রকাশ করেছে বেজা। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বরাবর এই জোন স্থাপনের অনুমতি চেয়ে পরিকল্পনা প্রস্তাবসহ আবেদন জমা দেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল। </p> <p style="text-align: justify;">বেজা সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের চালিভাঙ্গা মৌজায় মেঘনা নদীর তীরে ১৬০.৬৯৯৬ একর জমিতে স্থাপন হবে তিতাস ইজেড। প্রস্তাবিত নতুন অঞ্চলের জন্য ২০.৪৭২৭ একর জমি সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে। বাকি ১৪০.২২৬৯ একর তিতাস ইকোনমিক জোন ও মেঘনা ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কম্পানির পরিচালক বিউটি আক্তার ও তাহমিনা আক্তারের মালিকানাধীন জমি। কম্পানিটির পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী  সময়ে তিতাস ইজেড ৪০০ একর হবে।</p> <p style="text-align: justify;">বেজা জানায়, তফসিলে প্রকাশিত জমি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। এই জোন স্থাপনে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়বদ্ধ থাকলে গেজেট প্রকাশের ২১ দিনের মধ্যে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানের কাছে মতামত দাখিল করা যাবে। এই জোন স্থাপন ও সম্প্রসারণের জন্য অনুমোদিত মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে ভূমি উন্নয়নসহ শিল্প স্থাপন করা যাবে। </p> <p style="text-align: justify;">সনদ পেলেই পূর্বগাঁওয়ে হবে শিল্প</p> <p style="text-align: justify;">সিটি গ্রুপের অধীন পূর্বগাঁও ইকোনমিক জোন চূড়ান্ত সনদ পেলেই শিল্পের বিনিয়োগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। শিগগিরই এই জোন সনদ পাবে বলে বেজা সূত্রে জানা গেছে।</p> <p style="text-align: justify;">নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯৪ একর জমির ওপর পূর্বগাঁও ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। এই জোনকে গত বছরের জুনে প্রাক-যোগ্যতা সনদ দিয়েছে বেজা। এই ইজেডে স্টিল মিলস, কেমিক্যালস এবং সিরামিক খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাক-যোগ্যতা সনদ গ্রহণকালে সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেছেন, পূর্বগাঁও ইজেড প্রতিষ্ঠায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এখানে প্রায় ১১ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। </p> <p style="text-align: justify;">সিটি গ্রুপকে ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি ইজেডের লাইসেন্স দেয় বেজা। ৭৭.৯৬ একর জমিতে এই জোনের অবকাঠামো উন্নয়নে ৭৬০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংকসহ দেশের বেসরকারি আট ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।</p> <p style="text-align: justify;">সিটি গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা পবন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, সিটি গ্রুপ তিনটি ইজেড উন্নয়ন করছে। সিটি ও হোসেনদী ইজেড দুটি চূড়ান্ত সনদ পেয়েছে। এখন চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় আছে পূর্বগাঁও ইজেড। এই জোনে দেশি-বিদেশি অনেক উদ্যোক্তা শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।</p> <p style="text-align: justify;">দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে সনদ পাচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড</p> <p style="text-align: justify;">স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের মালিকানাধীন স্ট্যান্ডার্ড গ্লোবাল ইকোনমিক জোন লিমিটেডকে শিগগিরই চূড়ান্ত সনদ দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এই জোনের প্রাক-যোগ্যতা সনদ দেয় বেজা। প্রাক-যোগ্যতাপত্র পাওয়ার পর সম্ভাব্যতা যাচাই এবং অন্যান্য শর্ত পূরণ করে চূড়ান্ত লাইসেন্সের আবেদন করেছে গ্রুপটি। </p> <p style="text-align: justify;">মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বালুয়া নদীর তীরে বড় বালুয়াকান্দি মৌজায় প্রায় ১০৮ একর জমিতে গড়ে উঠছে এই ইজেড। এই জোনের উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ ও শিল্প স্থাপনে ৭৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ এবং ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা আছে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের।</p>