<p>একটি আদর্শ সমাজ ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। ইসলাম সমাজ ও রাষ্ট্রে সুশাসন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার হকদারের কাছে প্রত্যর্পণ করতে। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকাজ পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দেন তা কত উত্কৃষ্ট! আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)</p> <p><strong>ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পুরস্কার</strong></p> <p>যারা সুবিচার করবে এবং সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে, তাদের জন্য ইসলাম নানা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। যার কয়েকটি হলো—</p> <p>১. নুরের মিম্বারে উপবিষ্ট করা : ন্যায়বিচারকারী পরকালে আল্লাহর পাশে নুরের মিম্বারে উপবিষ্ট থাকবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সুবিচারক লোক আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর ডান হাতের দিকে নুরের মিম্বারের ওপর উপবিষ্ট থাকবে। যারা তাদের বিচারকার্যে, পরিবারে ও দায়িত্বভুক্ত বিষয়ে ইনসাফ রক্ষা করে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৩৭৯)</p> <p>২. আল্লাহর ছায়ায় স্থান দান : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন সাত ব্যক্তিকে তাঁর ছায়ায় স্থান দান করবেন, যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। (১) সুবিচারক শাসক, (২) সেই যুবক, যে আল্লাহর ইবাদতে বর্ধিত হয়েছে, (৩) সেই ব্যক্তি, যে নিভৃতে আল্লাহকে স্মরণ করে অশ্রু বিসর্জন করে, (৪) সেই ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে, (৫) সেই দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর জন্য একে অন্যকে ভালোবাসে, (৬) সেই ব্যক্তি, যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত রূপসী নারী নিজের দিকে ডাকে আর সে বলে, (৭) আমি আল্লাহ তাআলাকে ভয় করি; আর সেই ব্যক্তি যে সাদকা করে এমন গোপনে যে তার বাঁ হাত জানে না তার ডান হাত কী করছে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৩৮০)</p> <p>৩. দ্বিগুণ প্রতিদান : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো শাসক তার আদেশ জারি করে ইনসাফের সঙ্গে এবং তা সুষ্ঠু হয়, তার জন্য দুটি প্রতিদান রয়েছে। আর যে ইজতিহাদ করে আদেশ জারি করে, আর তা ভুল সাব্যস্ত হয়, তার জন্য একটি প্রতিদান রয়েছে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৩৮১)</p> <p>৪. ইনসাফকারীর পরিবারের জন্য দোয়া : ইনসাফকারীর সন্তান ও পরিবারের জন্য মহানবী (সা.) দোয়া করেছেন। শুরাইহ ইবনে হানি (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, একদিন তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হলেন। তখন তিনি শুনতে পেলেন, লোকেরা তাঁকে হানি আবুল হাকাম বলে ডাকছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন, আল্লাহ তাআলা বিচারক, তিনিই আদেশ দাতা। কিন্তু লোকেরা তোমাকে আবুল হাকাম বলে কেন? তিনি বললেন, আমার গোত্রের লোক যখন কোনো ব্যাপারে কলহ করে, তখন তারা আমার কাছে বিচার প্রার্থী হয়; আর আমি যে রায় দিই, তারা তা মেনে নেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এর চেয়ে ভালো কাজ আর হতে পারে? আচ্ছা তোমার কয়টি সন্তান? তিনি বললেন, আমার ছেলে—শুরাইহ, আবদুল্লাহ ও মুসলিম। তিনি বললেন, এদের মধ্যে বড় কে? হানি বললেন, শুরাইহ! তিনি বললেন, তবে তুমি আবু শুরাইহ! পরে তিনি তাঁর ছেলেদের জন্য দোয়া করলেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৩৮৭)</p> <p><strong>সুশাসন পরিহারের শাস্তি</strong></p> <p>ইনসাফ ও সুশাসনের পরিহার হলো জুলুম বা অবিচার করা। আল্লাহ বান্দার জন্য জুলুম হারাম করেছেন। মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘হে মুমিনরা! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে। কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার করবে, এটা আল্লাহভীতির নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করবে, তোমরা যা করো নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮)</p> <p>হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ আরো বলেন, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব, তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)</p> <p>আল্লাহ আমাদের দেশ ও সমাজে সুবিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাওফিক দিন। আমিন।</p>