<p style="text-align: justify;">আল্লাহ তাআলার সঙ্গে বান্দার মহব্বত-ভালোবাসা, বিনয়, কাকুতি-মিনতি, নিভৃতে কথোপকথন, আস্থা ও নির্ভরতার যে সম্পর্ক তা সবচেয়ে সুন্দর করে ফুটে ওঠে নামাজের মাধ্যমে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘বান্দা তাঁর প্রতিপালকের সবচেয়ে কাছে থাকে তখন, যখন সে সিজদা করে। সুতরাং তোমরা (সিজদায়) বেশি করে দোয়া করো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৮২)</p> <p style="text-align: justify;">এটি ইসলাম ধর্মের অনন্য বৈশিষ্ট্য। বান্দা তার রবের সঙ্গে কোনো ধরনের মধ্যস্থতা ছাড়াই সরাসরি কথা বলতে পারে। যখন খুশি তখনই যোগাযোগ করতে পারে। বরের সঙ্গে নিভৃতে কথোপকথন ও যোগাযোগের বিষয়টি আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস এসেছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সঙ্গে একান্তে কথা বলে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪০৫)</p> <p style="text-align: justify;">এই হাদিস থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, নামাজ হলো রবের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। আবার এই নামাজের মধ্যে সিজদা হলো আল্লাহ তাআলার একেবারে কাছে চলে যাওয়ার মাধ্যম। নামাজ ও সিজদার এই বর্ণনাকে সামনে রেখে যদি আমরা কোরআনের একটি আয়াত নিয়ে ভাবি, তাহলে সত্যি আনন্দিত না হয়ে পারি না। আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদের কী চমৎকার পদ্ধতি বলে দিয়েছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৩)</p> <p style="text-align: justify;">এই সাহায্য প্রার্থনার বিষয় সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। যুদ্ধ থেকে শুরু করে ঘরের চুলা পর্যন্ত সব কিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং বান্দা তার জীবনের সকল প্রয়োজনে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চাইবে। সন্তানের পরীক্ষা, কন্যার বিয়ে, বাবার অসুস্থতা আর স্ত্রীর চাওয়া-পাওয়া—এমনকি ডাল-ভাতের প্রয়োজনেও সে সাহায্য চাইবে আল্লাহর কাছেই, সাহায্য চাইবে নামাজের মাধ্যমে। এই বিষয়টি আল্লাহ তাআলা আরো স্পষ্ট করে বলেছেন অন্য আয়াতে।</p> <p style="text-align: justify;">নবীজি (সা.)-কে সম্বোধন করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি আপনার পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ দিন আর নিজেও তাতে অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাকিদের জন্য।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৩২)</p> <p style="text-align: justify;">রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদমসন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য অবসর হও, আমি তোমার অন্তরকে ধনী করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। আর যদি তা না করো আমি তোমার অন্তরকে নানা ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেব আর তোমার অভাব দূর করব না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৬৬)</p> <p style="text-align: justify;">এমনকি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবারে সংকট দেখা দিলে তিনি তাঁদের নামাজের নির্দেশ দিতেন। তা ছাড়া বান্দার যেকোনো অভাব, সংকট ও সমস্যা থেকে মুক্তিলাভের জন্য ইসলামে ‘সালাতুল হাজত’ নামে আলাদা নামাজও রাখা হয়েছে, যেখানে আল্লাহর কাছে চাওয়ার সুন্দর পদ্ধতিও বলে দেওয়া হয়েছে। বান্দা কারো কাছে কোনো প্রয়োজন পড়লে উত্তমরূপে অজু করে আল্লাহর প্রশংসা ও নবীর ওপর দরুদ পড়ে দোয়া করবে। পরে তার জন্য সেটি কল্যাণকর হলে অবশ্যই এমন সমাধান হবে, যাতে কল্যাণই কল্যাণ।</p> <p style="text-align: justify;">অতএব ছোট-বড় যেকোনো সংকটে সালাতুল হাজত পড়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। সুতরাং দুনিয়ার যেকোনো সমস্যায় বান্দা নামাজ পড়ে  আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য উত্তম ব্যবস্থা করে দেবেন। তাই নামাজ হলো আল্লাহর কাছে প্রার্থনার বিশেষ মাধ্যম। মুমিন নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর সান্নিধ্য পায়। আল্লাহ তাআলা নামাজের মাধ্যমে আমাদের  জীবনের সব সমস্যা সমাধানের তাওফিক দান করুন। আমিন।</p> <p style="text-align: justify;"> </p>