<p>৭ অক্টোবর ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তখন প্রায় সব মুসলিম দেশে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে মিছিল ও প্রতিবাদ হয়েছে। মুসলিম বিশ্বের তৎপরতার কারণে তা সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ইদানীং মনে হচ্ছে, বিষয়টি গুরুত্ব হারাচ্ছে। মুসলিম সমাজে আগের সেই উদ্দীপনা ও উদ্বেগ এখন আর চোখে পড়ছে না।</p> <p><strong>ফিলিস্তিন ইস্যু জাগ্রত রাখতে হবে</strong></p> <p>মুসলিম বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র দখলদারি ও আগ্রাসনের শিকার। কিন্তু ফিলিস্তিনে শুধু ভূখণ্ডের ইস্যু নয়। বিষয়টি এমন নয় যে বহির্শত্রুরা এসে স্থানীয় অধিবাসীদের এলাকা দখল করে নিয়েছে, যদিও দখলদারি ফিলিস্তিনিদের জন্য অনেক বড় সংকট; বরং এটি বায়তুল মুকাদ্দাসের বিষয়, আমাদের প্রথম কিবলা মসজিদে আকসার বিষয়। যখন থেকে মসজিদে আকসা ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়েছে, তখন থেকেই মুসলিম জাতির ওপর তাদের প্রথম কিবলা ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মিরাজ সফরের মঞ্জিল দখলমুক্ত করা আবশ্যক হয়ে গেছে। আল্লাহ না করুন—যদি কখনো মক্কা-মদিনা দুশমনদের দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে মুহূর্তেই যেমন পুরো উম্মতে মুসলিমার ওপর তার মোকাবেলা ফরজ হয়ে যাবে, তদ্রূপ মসজিদে আকসার বিষয়টিও এমনই। এ কারণে ইস্যুটি জীবিত ও জাগ্রত রাখতে হবে।</p> <p><strong>ফিলিস্তিনিদের কর্মপন্থা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করব</strong></p> <p>দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, হামাস তাদের অবিশ্বাস্য প্রতিরোধের মাধ্যমে আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। একটি শিক্ষা হলো—হামাসের শুরুটা হয়েছে পক্ষাঘাতগ্রস্ত একজন বৃদ্ধ আলেমের মাধ্যমে, যিনি নিজে চলাফেরাও করতে পারতেন না। এমন অবস্থায় তিনি হামাসের মতো এমন একটি সুসংগঠিত সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। হামাস যে প্রথম দিন থেকেই লড়াই শুরু করে দিয়েছে তা নয়, বরং তারা দীর্ঘ সময় সদস্যদের তরবিয়তের পেছনে ব্যয় করে। এর জন্য মসজিদে-মসজিদে পাড়ায়-পাড়ায় তারা তরবিয়তি ক্যাম্প তৈরি করে। তারা এমন এমন লোক তৈরি করেছে, যাঁরা এক দিকে দ্বিনের ধারক ও সুন্নতের অনুসারী ছিলেন, অন্যদিকে তাঁরা নিয়মতান্ত্রিক লড়াইয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন।</p> <p>আজ আমরা আশ্চর্য হচ্ছি, এখন পর্যন্ত গাজায় ৩০ হাজারের বেশি মুসলমান শহীদ হয়েছে, কিন্তু কোনো একজন সাধারণ লোকের মুখে এ কথা বের হয়নি, হামাস আমাদের বিপদে ফেলেছে। জনসাধারণ সবার মুখে একটাই কথা, আমরা আল্লাহর জন্য প্রাণ উৎসর্গ করছি। এটি সহজ কোনো কথা নয়। দীর্ঘ অনেক বছরের তরবিয়তের ফলাফল, যার জন্য হামাস দীর্ঘ পরিকল্পনা করেছে। এই তরবিয়তের ফলেই আজ তাদের মধ্যে এমন দৃঢ়তা দৃশ্যমান, যার নজির খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাই আমরাও আমাদের প্রজন্মকে দ্বিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য এমন মেহনত করব, মসজিদে-মসজিদে দ্বিনি হালকা প্রতিষ্ঠা করব। তাতে নতুন প্রজন্মকে সুন্নত অনুসরণের জন্য উৎসাহ প্রদান করা হবে, আল্লাহর ভয় তাদের অন্তরে জাগ্রত করা হবে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাঁরা আল্লাহ তাআলার সাহায্যেই এ বিশাল শক্তির সঙ্গে জানবাজি রেখে দৃঢ়পদে মোকাবেলা করছেন।</p> <p><strong>ইসরায়েল সর্বগ্রাসী অজগর</strong></p> <p>এখন এমন একটি যুগসন্ধিক্ষণ চলছে, এ মুহূর্তে—আল্লাহ না করুন, যদি মুসলিম উম্মাহ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের প্রতি সহযোগিতার হাত না বাড়ায়, তাহলে স্মরণ রাখুন! ইসরাইল এমন এক অজগর, যে পুরো আরব ভূখণ্ড পেঁচিয়ে নেবে। তাদের প্ল্যানিং মদিনা মুনাওয়ারা পর্যন্ত পৌঁছা। এটি তাদের লুকানো কোনো পরিকল্পনা নয়, বরং তারা গ্রেটার ইসরায়েলের নকশাও প্রকাশ করেছে, যাতে মদিনা মুনাওয়ারাও অন্তর্ভুক্ত। শুধু তাই নয়, তারা তাদের মুদ্রার মধ্যে গ্রেটার ইসরায়েলের মানচিত্র এঁকে দিয়েছে, যার মধ্যে মদিনা মুনাওয়ারাও অন্তর্ভুক্ত। আজ যদি—আল্লাহ না করুন, এই জানবাজ স্বাধীনতাকামীরা সফল না হয় এবং ইসরায়েল বিজয়ী হয়, তাহলে কিন্তু কারো কপালেই ভালো নেই, ভূখণ্ডের সবারই দুর্দশা আছে। তাই এটি এমন এক ঐতিহাসিক যুগসন্ধিক্ষণ, এতে যেকোনো মূল্যেই স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে হবে, সাহায্য করতে হবে।</p> <p><strong>সাহায্য করা নফল হজের চেয়েও উত্তম</strong></p> <p>এ মুহূর্তে ফিলিস্তিনে যে অবস্থা বিরাজমান, আমি মনে করি, এখন সব নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম কাজ হলো তাদের সাহায্য করা। এমনকি আমার দিল তো বলছে, যেসব ভাই নফল ওমরাহ পালনে যাচ্ছেন, তাঁরা ওমরাহে যে খরচ করবেন, যদি তাঁরা ওই টাকা এদের পেছনে ব্যয় করেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ ওমরাহর চেয়েও বেশি সওয়াব পাবেন। আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.)-এর মতো যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস প্রতিবছর হজ করতেন। একবার হজে গমনকালীন পথিমধ্যে দেখলেন একটি শিশু ডাস্টবিন থেকে একটা মৃত মুরগি উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটি কেন উঠিয়েছ? শিশুটি বলল, আমাদের ঘরে কয়েক দিন যাবৎ অনাহার চলছে, খাবারের কিছুই নেই, তাই এটি খাওয়ার জন্য নিচ্ছি। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ বিন মোবারক (রহ.) সফরসঙ্গীদের লক্ষ করে বলেন, থামো! কাফেলার যারা নফল হজে রওনা হয়েছে তারা কেউই হজে যাবে না। যে সম্পদ আমরা হজে ব্যয় করতাম, সব এই বসতির অসহায় দরিদ্রের পেছনে ব্যয় করব। (তারিখে ইবনে কাসির ১০/১৭৮)</p> <p>এ বিবেচনায় আমি মনে করি, সব ধরনের নফল ইবাদতের চেয়ে ফিলিস্তিনিদের পেছনে ব্যয় করা বেশি উত্তম ও সওয়াবের কাজ। তাই ধনী-গরিব কেউই যেন এতে পেছনে না থাকি। সবাই সাহায্য প্রদানে অংশগ্রহণ করি।</p> <p><strong>এ দোয়া বিফলে যাবে না</strong></p> <p>প্রকৃত পক্ষে মুমিনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো আল্লাহর দরবারে দোয়া-মুনাজাত। কুনুতে নাজিলা আমাদের অনেক মসজিদেই চলছে। তা জারি রাখা উচিত। তবে এই নিয়ম করলে ভালো হবে, এক মাস লাগাতার কুনুতে নাজিলা পড়ব, এরপর কিছুদিন বন্ধ রেখে আবার এক মাস চালু রাখব। এভাবে ধারাবাহিকভাবে চলবে। এর সঙ্গে আমাদের কোনো নামাজ যেন মুজাহিদদের জন্য দোয়া ছাড়া অতিবাহিত না হয়। ইনশাআল্লাহ, এই দোয়া বিফলে যাবে না।</p> <p><em>ফিলিস্তিন বিষয়ে মুফতি তাকি উসমানির সাম্প্রতিক ভাষণ ভাষান্তর করেছেন মুফতি মাহমুদ হাসান</em></p> <p> </p>