<p>মহান আল্লাহর দ্বিন প্রচার অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। তা ইহকাল ও পরকালের শান্তি ও সফলতা লাভের অন্যতম মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমার মধ্যে এমন একটা দল যেন থাকে, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, সৎকাজে আদেশ দেয়, অসৎ কাজে নিষেধ করে, এরাই সফলকাম।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৪)</p> <p>তবে এই সফলতা পেতে হলে দ্বিন প্রচারককে অবশ্যই পরিপূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দাওয়াতের কাজ করতে হবে। বিশুদ্ধ ঈমান-আকিদা পোষণ করতে হবে, যেগুলো ঈমানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, অন্যথায় নিজে ও অন্যকে বিভ্রান্ত করার সম্ভাবনা খুব বেশি, যা হিতে বিপরীত হতে পারে। পাশাপাশি একজন দ্বিন প্রচারককে মহান আল্লাহর জন্য নম্রতা অবলম্বন করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তুমি তোমার বাহুকে অবনত করো।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ২১৫)</p> <p>মহান আল্লাহ নবীজি (সা.)-কে এই নির্দেশনা দিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত সব ইসলাম প্রচারককে শিক্ষা দিয়েছেন। কারণ একজন সফল দায়ীর অন্যতম গুণ হলো সবার সঙ্গে নম্র আচরণ করা। সবাইকে সমান সম্মান করা, চাই সে সাদা হোক বা কালো, ধনী হোক বা গরিব, সবল হোক বা দুর্বল। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নম্রতা অবলম্বন করলে মহান আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা‌ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সদকা‌ করায় সম্পদের হ্রাস হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা সমুন্নত করে দেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৬)</p> <p>তা ছাড়া মানুষ কঠিন স্বভাবের মানুষদের বড় জোর ভয় করে, কিন্তু তাদের দাওয়াতে মন থেকে হকের পথে আসার সম্ভাবনা কম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা করো এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। আর কাজকর্মে তাদের সঙ্গে পরার্মশ করো। অতঃপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)</p> <p>এই কাজ করতে গেলে বহু ধরনের মানুষের কাছে যেতে হয়, যাদের চিন্তাধারা ও মন-মানসিকতা ভিন্ন, চরিত্র ভিন্ন। সবার শিক্ষাদীক্ষাও এক নয়। তাই দাওয়াতের কাজের সময় কোনো মূর্খ লোকের সম্মুখীন হলে, তাকে এড়িয়ে চলতে হবে। আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, মূর্খদের এড়িয়ে চলতে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং মূর্খদের এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৯৯)</p> <p>মহানবী (সা.) আল্লাহর এই নির্দেশ শতভাগ পালন করেছেন। তিনি মূর্খদের সঙ্গে কখনো তর্কে জড়াতেন না এবং ব্যক্তিগত বিষয়ে কখনো প্রতিশোধ নিতেন না। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, একবার আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হাঁটছিলাম। তখন তাঁর গায়ে একখানা গাঢ় পাড়যুক্ত নাজরানি চাদর ছিল। এক বেদুইন তাঁকে পেয়ে চাদরখানা ধরে খুব জোরে টান দিল। আমি নবী (সা.)-এর কাঁধের ওপর তাকিয়ে দেখলাম যে জোরে চাদরখানা টানার কারণে তাঁর কাঁধে চাদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। তারপর বেদুইন বলল, হে মুহাম্মদ, তোমার কাছে আল্লাহর দেওয়া যে সম্পদ আছে, তা থেকে আমাকে দেওয়ার আদেশ করো। তখন নবী (সা.) তার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন এবং তাকে কিছু দান করার আদেশ করলেন। (বুখারি, হাদিস : ৬০৮৮)</p> <p>মহান আল্লাহ সবাইকে ধৈর্য ও নম্রতার সঙ্গে দাওয়াতের কাজে আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।</p> <p> </p>