<p>রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় দুই মামলা একসঙ্গে চলতে কোনো বাধা নেই। রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত আদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে সোমবার রংপুর পিবিআই থেকে এ তথ্য জানা যায়। মামলা দুটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রংপুর পিবিআইকে।</p> <p>আদালতের আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় পুলিশ ইতোপূর্বে তাজহাট থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। পরবর্তীতে আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী অপর একটি মামলা করেন। উভয় মামলা বর্তমানে পিবিআই-এর তদন্তে রয়েছে।</p> <p>রংপুর পিবিআই-এর পুলিশ সুপার ২৭ আগস্ট দুই মামলার করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা চেয়ে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে উভয় মামলা একই তদন্ত কর্মকর্তা এবং একইসঙ্গে তদন্তের আদেশ দেন রংপুরের কোতোয়ালি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক।</p> <p>আদেশে বলা হয়েছে, ‘পিবিআই পুলিশ সুপারকে এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হল যে, পরবর্তীতে দায়ের হওয়া মামলায় তদন্তের স্বার্থে প্রদত্ত আদেশ প্রতিপালনপূর্বক তদন্ত কার্য সম্পাদন করবেন এবং সুরতহাল ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যা পূর্বোক্ত মামলায় বস্তু সাক্ষ্য হিসেবে সন্নিবেশিত তার হবহু কপি অত্র মামলায় বস্তুসাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করবেন।’</p> <p>আদালতের এ আদেশে শহীদ আবু সাঈদের ভাই রমজান আলীর করা হত্যা মামলায় চালাতে আর বাধা নেই মর্মে আদেশ হওয়ায় মামলার গতি ফিরে পাবে এমন আশা প্রকাশ করেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা।</p> <p>আবু সাঈদ হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামিম আল মামুন, অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান রোকন এবং অ্যাডভোকেট রায়হান কবির বাদী পক্ষে নিয়োজিত প্যানেলের আইনজীবীরা আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে তদন্ত শেষে আসামিদের দ্রুত বিচারের দাবি করেন। এখন পর্যন্ত শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানা যায়।</p> <p>দুই মামলার তদন্ত একসঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, যেহেতু দুটি মামলাই জিআর। তাই এটির তদন্ত সাংঘর্ষিক হবে না।</p> <p>মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রংপুর পিবিআই-এর পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, দুই মামলার তদন্ত কিভাবে চলবে এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত বলেছেন দুই মামলার একসঙ্গে তদন্তে বাধা নেই।  </p> <p>১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।</p> <p>আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় ১৭ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় আসামি করা হয়েছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের।</p> <p>অপরদিকে ১৮ আগস্ট রংপুর মেট্রোপলিটন আমলি আদালতে হত্যা মামলা করেন আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী। ওই মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।</p> <p>উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- তৎকালীন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুরের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান, সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরান হোসেন, থানার ওসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের এএসআই সৈয়দ আমীর আলী ও সুজন চন্দ্র রায়কে।</p> <p>এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামিম মাহফুজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মণ্ডল, গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ, বেরোবি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।   </p> <p>অন্যদিকে আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্য বিশিষ্ট তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিল। আন্দোলনকারী সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর অনাস্থা পোষণ করায় কমিটির সদস্যরা ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন।</p> <p>পদত্যাগ করা সদস্যরা হলেন- কমিটির আহ্বায়ক ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মতিউর রহমান, সদস্য সচিব ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমান এবং সদস্য ও রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকী।</p>