<p>উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চলছে গ্রীষ্মকালীন মরিচের ভরা মৌসুম। গাছে গাছে কাঁচা, আধাপাকা ও টকটকে লাল রঙের পাকা মরিচ শোভা পাচ্ছে। কৃষক পরিবার এখন মরিচ উত্তোলন ও শুকানোয় দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছে। বাজারে এবার মরিচের দাম গেল বছরের তুলনায় তিন গুণ বেড়েছে। এতে কপাল খুলেছে চাষিদের। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার তাঁরা ঝাল মরিচে লাল হয়ে উঠবেন।</p> <p>চাষিরা জানান, গত বছর প্রতি মণ শুকনা মরিচ চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দরে বিক্রি হলেও এ বছর তা জাতভেদে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার মরিচের তেমন রোগবালাইও হয়নি। তাই ফলন হয়েছে ভালো। প্রতি বিঘা জমিতে ১২ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত শুকনা মরিচ উৎপাদন হয়েছে। এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষাবাদে কৃষকের খরচ হয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘা জমিতে এবার বাজারদর অনুযায়ী মরিচ বিক্রি করে কৃষকের পকেটে মুনাফা ঢুকবে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। তিন গুণ দামে মরিচ চাষিরা এবার যেন লালে লাল।</p> <p>পঞ্চগড়ে উৎপাদিত বাঁশগাইয়া, আকাশি, জিরাসহ বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের মরিচের রং যেমন পাকা, তেমনি ঝালেও কড়া। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসেন এ জেলার মরিচ কিনতে। পরে তা পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মরিচ চাষে এবারের মতো মুনাফা কোনোবার দেখেননি প্রান্তিক এ জেলার চাষিরা। অন্য ফসলের তুলনায় এবার মরিচ চাষে হাসি ফুটেছে হাজারো চাষির মুখে। তবে বাজারদর তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় কিনে খেতে কষ্ট হচ্ছে সাধারণ ভোক্তার।</p> <p>পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা এলাকার মরিচ চাষি সাদেকুল হক প্রধান বলেন, ‘এবার আমি তিন বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি খরচ ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় মরিচ হয়েছে ১২ থেকে ১৫ মণ। প্রতি মণ শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। কাঁচা মরিচ চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। এতে প্রতি বিঘায় আমাদের দেড় লাখ টাকারও বেশি লাভ আসছে।’</p> <p>আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের এলাকার পানি মরিচ চাষের জন্য খুব উপযোগী। এবারের মতো মরিচের দাম আমরা কখনো পাইনি। মোটা মরিচ ১২ হাজার টাকা এবং চিকন মরিচ ১৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারত থেকে এলসি মরিচ এলে এই দাম কমে যাবে।’</p> <p>পঞ্চগড় বাজারে ক্রেতা শামসুল হক বলেন, ‘মরিচের যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে আমাদের এখন মরিচ ছাড়াই রান্না করতে হবে। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও আমাদের বারোটা বেজে যাচ্ছে।’</p> <p>মরিচ ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার মরিচের চাষাবাদ কম হয়েছে। এ ছাড়া বাইরে থেকে মরিচ আসছে না। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের স্টকও শেষ হয়ে গেছে। তাই দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আমরা পঞ্চগড়ে হাটবাজার থেকে মরিচ কিনে তা ঢাকা, শ্যামবাজার, ভৈরব, সিলেট ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাই।’ </p> <p>পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘জেলার পাঁচ উপজেলায় আট হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। এসব জমি থেকে প্রায় ২২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ বছর মরিচ চাষ করে চাষিরা তিন গুণ দাম পাচ্ছেন, যা অন্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি।’</p> <p> </p>