<p> দেশের বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দূর নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালু ও বন্ধের কৌশল উদ্ভাবনের খবর পাওয়া গেলেও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মোবাইল নিয়ন্ত্রিত সার্কিট ব্রেকারের মাধ্যমে সেচযন্ত্র চালু ও বন্ধের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের খবর পাওয়া গেছে। কৃষকরা এখন ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের ম্যাসেজে জানতে পারবেন তাঁর সেচযন্ত্রটি বন্ধ বা চালু রয়েছে কিনা।<br /> <br /> শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের পুঠিয়া গ্রামের হতদরিদ্র মহির উদ্দিনের ছেলে মীর সাহেব উদ্দিন (১৮) ও একই উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের শেলাচাপড়ি পুর্বপাড়া গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে কামরুল ইসলাম (১৭) এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। মীর সাহেব উদ্দিন ও কামরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অর্থাভাবে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত তাদের লেখাপড়া করার সুযোগ হয়েছে।<br /> <br /> পরে বাধ্য হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে এ দুই তরুণ শাহজাদপুরে মোবাইল ও ইলেকট্রিক মিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ নেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তারা বিদ্যুৎচালিত বিভিন্ন ধরনের মোটর, ফ্যান, বাতিসহ নানা ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দূর নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা চালান। এক পর্যায়ে তারা ইলেকট্রিক সার্কিট ব্রেকার ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইলেকট্রিক সেচযন্ত্র পরিচালনার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন।<br /> <br /> শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের পুঠিয়া গ্রামের মহির উদ্দিনের ছেলে মীর সাহেব উদ্দিন ও রূপবাটি ইউনিয়নের শেলাচাপড়ি পুর্বপাড়া গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে কামরুল ইসলাম অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার পর দারিদ্রের কারণে আর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। অসহায় পিতার আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট দেখে তারা দুই বন্ধু শাহজাদপুরের এক মেকানিকের কাছে মোবাইল ও ইলেকট্রিক বিষয়ের ওপর প্রাথমিক ধারণা নিয়ে এলাকায় কাজ শুরু করেন। বেশ কিছুদিন এভাবে কাজ করতে গিয়ে তারা লক্ষ্য করেন কৃষকরা তাদের জমিতে সেচ দিতে ইলেকট্রিক সেচযন্ত্র চালাতে গিয়ে ঘনঘন বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে নাজেহাল হন।<br /> <br /> লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায়ই ইলেক্ট্রিক মোটর ও সার্কিট ব্রেকার পুড়ে যাওয়ায় এ দুই তরুণের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে কিভাবে সেচযন্ত্রের মোটর ও সার্কিট ব্রেকার রক্ষা করা যায়। বেশ কিছুদিন চেষ্টার পর তারা নিজেরাই একটি সার্কিট ব্রেকার তৈরি করেন। এই সার্কিট ব্রেকারের মাধ্যমে মোবাইল ফোন দিয়ে সেচযন্ত্র চালু ও বন্ধের কৌশল রপ্ত করেন তারা। দুই বন্ধু এই যন্ত্র দুটি উদ্ভাবনের পর বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্রে সংযোগের জন্য তারা এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য অনেক কৃষকের কাছে গিয়ে ধরণা দেন। গত শুক্রবার গ্যাদন আলীর ইলেক্ট্রিক সেচযন্ত্রে এই ডিভাইস যুক্ত করে পরীক্ষামূলকভাবে  তারা সফলতা অর্জন করেন।<br /> <br /> গ্যাদন আলী জানান, তিনি এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই তার সেচযন্ত্র  বন্ধ ও চালু করতে পারছেন। এখন তাঁর বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রে বিদ্যুৎ চলে গেলে বা  আসলে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজের মাধ্যমে তা জানতে পারছেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারছেন। ফলে তাঁকে আর এখন রাতদিন সেচঘরে বসে থাকতে হচ্ছে না।<br /> <br /> সবজিচাষি গ্যাদন আলী মনে করেন, নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষক তাদের বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে যেমন রক্ষা করতে পারবে তেমনি একজন পাহাড়াদারের মাধ্যমে একাধিক সেচ মালিক তাদের সেচযন্ত্রটি ঘরে বসেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। দুই উদ্ভাবক তরুণ জানান, তাদের এই প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। এ ব্যাপারে শাহজাদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হালিমুল হক মিরু সরেজমিনে সেচযন্ত্রটি পরিদর্শন করে বলেন, এ দুই উদ্ভাবককে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে তাদের উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি কৃষি ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।<br />  </p>