<p>দুঃখজনক সত্য এই যে বাংলাদেশ পথভ্রষ্ট হয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে, আস্তিকতা ও নাস্তিকতা নিয়ে শুধু বিতর্কে নয়, সহিংস অন্তর্বিরোধে মত্ত। বিরোধ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ও রাজনীতিতে সক্রিয় বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে। তাতে স্বার্থের ব্যাপার আছে। তাঁরা তাঁদের বিরোধকে জনসাধারণের মধ্যে বিস্তৃত করেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতাপন্থী ও ইসলামপন্থী—উভয় পক্ষেরই দৃষ্টি পশ্চাৎমুখী অতীতের দিকে। দুই পক্ষের মধ্যে জয়-পরাজয়ের অন্ধ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলছে। শেষ পর্যন্ত কারা জিতবে? কারা হারবে? কাদের স্বার্থ হাসিল হবে? জাতিকে সভ্যতা ও প্রগতির পথে উত্তীর্ণ হতে হলে দরকার এই জয়-পরাজয়ের বাইরে প্রগতির জন্য বৌদ্ধিক জাগরণ ও গণজাগরণ। সময়ের দাবি হিসেবে এটা সামনে এসেছে।</p> <p>যে অবস্থা চলছে তাতে বৌদ্ধিক জাগরণ ছাড়া শুধু গণজাগরণ কি সম্ভব? বৌদ্ধিক জাগরণ কী? গণজাগরণ কী? বাংলাদেশে এ প্রশ্নে কোনো ভাবনা-চিন্তা নেই। উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নেই। তাই এ বিষয়ে আমি আমার উপলব্ধি ব্যক্ত করার তাগিদ বোধ করছি। আমার বক্তব্য, দেশের নবীন ও প্রবীণ শিল্পী-সাহিত্যিক-রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশে। আমি বাংলাদেশের জন্য এবং সব জাতির জন্য উন্নত নতুন ভবিষ্যৎ আশা করি। তার জন্য নতুন চিন্তাধারা ও কর্মধারা দরকার।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2017/Print-2017/June/19-06-2017/kalerkantho_com-19-06-17-21.jpg" style="float:left; height:353px; margin:8px; width:400px" />আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ আজ যে সংকটে নিমজ্জিত, তা থেকে বিনা প্রস্তুতিতে খুব সহজে উদ্ধার লাভ আশা করছেন প্রায় সবাই। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও তার সম্পূরক আন্তর্জাতিকতাবাদ ইত্যাদি বিষয়ে চিন্তার পুনর্গঠন ও নবায়ন নিয়েও কেউ ভাবছেন না। ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কিংবা আস্তিকতা ও নাস্তিকতা নিয়ে বিরোধের মীমাংসা কিভাবে হবে? সংঘাত তো আসলে স্বার্থের, নৈতিক পতনশীলতা ও সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে গভীর কোনো চিন্তাই নেই। ইতিহাসের দিক দিয়েও সংকটকে কেউ বুঝতে চাইছেন না। বিশ্ব বাস্তবতার মধ্যে বাংলাদেশের বিশিষ্টতার বা স্বাতন্ত্র্যের কথাও কেউ ভাবছেন না। মানবিক গুণাবলি হারিয়ে যাচ্ছে। সংকট গভীর থেকে গভীরতর হয়ে চলছে। জনগণ হতোদ্যম, মনোবল হারা, ঘুমন্ত—গভীর নিদ্রায় মগ্ন!</p> <p>যাঁরা ক্ষমতাধর ও প্রভূত সম্পত্তির মালিক, আর যাঁরা এনজিও কিংবা সিএসওর কর্তা, তাঁরা কিন্তু সংকট স্বীকারই করেন না। বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিশ্বব্যবস্থা নিয়েই তাঁরা চলতে চান। প্রচলিত ব্যবস্থার চেয়ে উন্নত কোনো ব্যবস্থার চিন্তা রাজনৈতিক মহলে কিংবা লেখকদের মধ্যে নেই। তাঁরা মনে করেন, ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।</p> <p>আমার মনে হয়, সমাজের স্তরে স্তরে যে জুলুম-জবরদস্তি ও শোষণ-পীড়ন চলছে, তা থেকে সমাজের নিচের স্তরের ৯০ শতাংশ মানুষের মুক্তি লাভের কোনো সহজ উপায় নেই। বর্তমান ঐতিহাসিক পর্যায়ে বাংলাদেশের জনগণের জন্য এ হবে সবচেয়ে কঠিন কাজ। কঠিন কাজের জন্য অবশ্যই কঠিন প্রস্তুতি লাগবে। রাজনৈতিক ক্ষমতার ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বাইরে থেকে যাঁরা বিনা প্রস্তুতিতে, বিনা প্রচেষ্টায় সংকটের সমাধান আশা করছেন, তাঁরা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছেন। ধনিক-বণিকদেরও ভেবে দেখা দরকার, যে জীবন তাঁরা যাপন করছেন সেটাই জীবনের সবচেয়ে ভালো রূপ কি না। যাঁরা ক্ষমতাবান ও সম্পদশালী, তাঁরা ইচ্ছা করলে নিজেদের মনমানসিকতা উন্নত করে, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উন্নত করে অনেক ভালো জীবনের অধিকারী হতে পারেন।</p> <p>হাজার বছরের ইতিহাসে আমাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য গৌরবজনক নয়। তবে সংগ্রাম ও যুদ্ধের মধ্য দিয়ে নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অবশ্যই গৌরবজনক। প্রশ্ন হলো, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর আমরা কি গৌরবজনক ইতিহাস সৃষ্টি করে চলছি?</p> <p>বাংলাদেশে গণজাগরণ এখন খুব আশা করা হয়। যত্রতত্র গণজাগরণের কথা বলা হয়। কিন্তু গণজাগরণ এত সহজ ব্যাপার নয়। সেই ১৯০৫ সাল থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত একটানা প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ছিল আমাদের গণজাগরণের কাল। হিন্দু-মুসলমান বিরোধের অপঘাত সত্ত্বেও তখন সম্ভব হয়েছিল ইংরেজ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ, তারপর জমিদারি ব্যবস্থার বিলোপ সাধন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।</p> <p>সব আন্দোলন গণজাগরণের পরিচায়ক নয়। গণজাগরণে দেশব্যাপী জনগণের মহৎ সব মানবিক গুণাবলির জাগরণ ঘটে, জনগণ মহান কিছু অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয় ও সংগ্রামে লিপ্ত হয়—গণজাগরণে মহান নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়, উন্নত চরিত্রবলসম্পন্ন লেখক-শিল্পী আত্মপ্রকাশ করেন। হুজুগ আর গণজাগরণ কখনো এক নয়। হুজুগে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল হীন স্বার্থ হাসিলের জন্য উদ্দেশ্যমূলক প্রচার চালিয়ে জনসাধারণকে আন্দোলনে মাতায় এবং কৌশলে স্বার্থ হাসিল করে নেয়। গণজাগরণে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও তার চরিত্র হুজুগ থেকে ভিন্ন। হুজুগ ছাড়াও আছে ভাঁওতা-প্রতারণা। আমরা যদি বাংলাদেশে নতুন রেনেসাঁস ও তার ধারাবাহিকতায় নতুন গণজাগরণ সৃষ্টি করতে পারি, তাহলে বিশ্বব্যাপী নতুন ঐতিহাসিক কালের জন্য বাংলাদেশ অগ্রযাত্রী (Pioneer) হয়ে থাকবে।</p> <p>১৯৮০-এর দশক থেকে বাংলাদেশে তো হুজুগের পর হুজুগই সৃষ্টি করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের জন্য নিঃস্বার্থ আদর্শগত সংগ্রাম এসব? এ সময়ের ঘটনাবলিতে জনজীবনে মহৎ মানবিক গুণাবলির জাগরণ কোথায়? মহান লক্ষ্য কোথায়? গণতন্ত্র? সমাজতন্ত্র? জাতি গঠন? রাষ্ট্র গঠন? কোন ক্ষেত্রে কী অর্জিত হয়েছে? এ ধারার তত্পরতার মধ্য দিয়ে জনজীবনের জন্য ভালো কী হয়েছে? মানুষ তো অমানবিকীকৃত হয়ে চলছে! জাতীয় উন্নতির জন্য উৎপাদন ও সম্পদ বৃদ্ধির সঙ্গে আরো অনেক কিছু লাগে। অবস্থা এমন যে আদর্শ নেই, আদর্শ বোধও নেই; নীতি নেই, নীতিসন্ধিৎসা নেই; জাতীয় উন্নতির পরিকল্পনা নেই, কর্মসূচি নেই, দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীরা কাজ করছে দেশের সরকাররূপে।</p> <p>অবস্থা এমন যে সমাজে যার ক্ষতি করার শক্তি যত বেশি, তার প্রভাব-প্রতিপত্তি তত বেশি, মানুষের কল্যাণ করার শক্তি এ সমাজে কোনো শক্তি বলেই স্বীকৃতি পায় না। দেশে দার্শনিক-বৈজ্ঞানিক, শিল্পী-সাহিত্যিক কোথায় যাঁরা এসব উপলব্ধি করেন?</p> <p>নতুন গণজাগরণের পূর্বশর্ত হিসেবে প্রথমে দরকার নতুন রেনেসাঁসের সূচনা। রেনেসাঁস ও গণজাগরণ ছিল এ দেশে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে সবার কর্মফলে সেসব শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আগেকার রেনেসাঁস ও গণজাগরণকে ফিরিয়ে আনা কিংবা তার পুনরুজ্জীবন ঘটানো যাবে না। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় না। সৃষ্টি করতে হবে নতুন কালের নতুন রেনেসাঁস ও নতুন গণজাগরণ।</p> <p>নতুন রেনেসাঁসের জন্য চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তি খাটিয়ে অতীতের রেনেসাঁস ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য নতুন রেনেসাঁস—দুটি সম্পর্কেই যথাসম্ভব পরিচ্ছন্ন ধারণা অর্জন করতে হবে। কী ছিল, কী আছে, কী করা যাবে, কী করতে হবে—অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তার স্পষ্ট চিত্র সামনে রাখতে হবে। শুধু চিন্তা দিয়ে হবে না, বাস্তবায়নের জন্য কাজও করতে হবে। চিন্তা ও কাজ দুটিই অপরিহার্য—দুটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p>রেনেসাঁস বলতে বোঝায় নবজন্ম—সভ্যতা ও সংস্কৃতির নবজন্ম। কোনো জাতির জীবনে রেনেসাঁস দেখা দিলে সেই জাতিরই নবজন্ম ঘটে—জাতি নতুন প্রাণশক্তি লাভ করে। কোনো জাতির সভ্যতা-সংস্কৃতির মধ্যেই সেই জাতির আত্মপরিচয় নিহিত থাকে।</p> <p>বাংলা ভাষার দেশে উনিশ শতকের প্রথম পাদে রামমোহনের (১৭৭২-১৮৩৩) চিন্তা ও কর্মের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল রেনেসাঁস। তাতে প্রথমে হিন্দু সমাজে, পরে মুসলমান সমাজে জাগরণ দেখা দিয়েছিল। বেগম রোকেয়ার (১৮৮০-১৯৩১) চিন্তা ও কর্মের মধ্য দিয়ে মুসলমান সমাজে সূচিত হয়েছিল রেনেসাঁস। বাংলা ভাষার দেশে হিন্দু ধর্ম ও মুসলমান ধর্মের সমন্বয়ে একীভূত কোনো জীবনদর্শন কিংবা একীভূত জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। একই দেশে বসবাস করা সত্ত্বেও হিন্দু সম্প্রদায় ও মুসলমান সম্প্রদায় বিকশিত হয়েছে স্বতন্ত্র মন নিয়ে স্বতন্ত্র ধারায়। ইংরেজ আমলে সাম্প্রদায়িকতাবাদের আবর্তে পড়ে জাতীয়তাবাদী হতে দুই সম্প্রদায়ই ব্যর্থ হয়েছে। একাত্তরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত সময়ে ঢাকাকেন্দ্রিক জাতীয় সংস্কৃতিতে, জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতে বহমান ছিল রেনেসাঁসের স্পিরিট। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে সার্বিক বিশৃঙ্খলা ও সাম্রাজ্যবাদী পরিচালনার মধ্যে সে ধারা ক্ষীয়মাণ হয়ে পড়ে। তবে বাংলাদেশে ও পশ্চিম বাংলায় কিছু লেখকের চেতনায় রেনেসাঁসের স্পিরিট আজও বহমান আছে। তাঁরা ইতিহাসের পশ্চাদ্গতির পরিবর্তনের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারায় চিন্তা করেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশে স্বার্থান্ধ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে জাতীয়তাবাদও উবে গেছে। কথিত বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর কথিত বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ কোনোটির মধ্যেই একটুও জাতীয়তাবাদ নেই। কোনোটির মধ্যেই গণতন্ত্রও নেই, সমাজতন্ত্রও নেই। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু ধর্ম ও পুরনো সংস্কার-বিশ্বাসের পুনরুজ্জীবন কেন ঘটছে, সে প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে একটুও ইচ্ছুক নন। তাঁদের আক্রমণ কি একান্ত আদর্শগত? সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ? স্বার্থবুদ্ধি বলে কি তাদের মধ্যে কিছুই নেই? সংবিধানে অনেক কথা লেখা আছে। কিন্তু বাস্তবে কোনোটিই নেই। সমাজের স্তরে স্তরে ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, হিন্দু-মুসলমান-নির্বিশেষে বাঙালি ভুগছে জাতীয় হীনতাবোধে আর অদৃষ্টবাদে।</p> <p>আজ দরকার উন্নত চরিত্রের, প্রগতিশীল চিন্তার ও মহৎ ব্যক্তিত্বের অধিকারী কিছু লেখক, শিল্পী, কবি, নাট্যকার, চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ। অভীষ্ট এই ব্যক্তিদের কোথায় পাওয়া যাবে? কায়েমি স্বার্থবাদী লেখক, শিল্পী, কবি, নাট্যকার, চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদরা সারা দেশে সৃষ্টিশীলতা ও প্রগতির সব পথ সম্পূর্ণ বন্ধ করে রেখেছেন। ‘এখন দুঃসময়’, ‘সুবচন নির্বাসনে’, ‘সর্বনাশ চতুর্দিকে’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ইত্যাদি গ্রন্থ এই ঢাকা শহর থেকেই ১৯৭০-এর দশকের প্রথমার্ধে কেউ কেউ লিখেছিলেন। নাটক, সিনেমা প্রযোজনা করেছিলেন, তারা খারাপের সমালোচনা করেছিলেন গঠনমূলক মন নিয়ে। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে অনেক আশা নিয়ে তাঁরা এসব লিখেছিলেন। তাঁরা রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির উত্থান ও নবসৃষ্টি আশা করেছিলেন। বেসামরিক স্বৈরাচারের পর সামরিক স্বৈরাচার, তারপর আবার বেসামরিক স্বৈরাচার, আবার সামরিক স্বৈরাচার—এভাবে চলছিল, অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটছিল না। এখন কি অবস্থা উন্নতির দিকে?</p> <p>এখন বিজ্ঞানের ও শ্রমশক্তির কল্যাণে দখলের উৎপাদন অনেক বেড়েছে, পোশাকশিল্প লাভজনক, বাংলাদেশের শ্রমিকরা বিদেশে গিয়ে শ্রম বিক্রি করে আয় করছে—তাতে বাংলাদেশের সরকারও লাভবান হচ্ছে, বাংলাদেশের সৈনিকরা আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনীতে গিয়ে শান্তি রক্ষার কাজ করছে কি না বলা মুশকিল; তবে তারা অর্থ আয় করছে এবং তার ভাগ বাংলাদেশের সরকারও পাচ্ছে। এসবের ফলে বাংলাদেশের উচ্চ শ্রেণিতে সম্পত্তি ও ভোগবিলাসের সীমাহীন প্রাচুর্য দেখা যাচ্ছে। আর খেটে খাওয়া মানুষও অর্ধাহার-অনাহার থেকে কিছুটা মুক্ত হয়েছে। কিন্তু নৈতিক পতনশীলতা, সামাজিক অবক্ষয়, নারী নির্যাতন, হত্যা-আত্মহত্যা, গুম, মুক্তিপণ, জুলুম-জবরদস্তি ও অসাম্য দ্রুত বেড়ে চলছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতার মুখে যে ভাষা উচ্চারিত হয়, তাতে শ্লীলতা বজায় থাকে না।</p> <p>আমার মনে হয়, সাধারণ মানুষ যদি অন্যায়কে ঘৃণা করার ও ন্যায়কে সমর্থন করার কাজে উদ্যোগী হয়, তারা যদি মন্দের মধ্যে ভালো খোঁজ করে কিছু লেখক, শিল্পী, কবি, নাট্যকার, চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদকে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, তাহলে জাতির পতনশীলতা থেকে উত্থানের সূচনা হবে। সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। হুজুগ, ভাঁওতা-প্রতারণা ও মিথ্যার গ্রাস থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করলে এবং ন্যায়, সত্য, কল্যাণ ও সুন্দরের শরণ নিলে, ঐক্যবদ্ধ হলে—সেটাই হবে সাধারণ মানুষের মহত্ত্বের প্রমাণ।</p> <p> </p> <p><strong>লেখক : </strong>চিন্তাবিদ</p>