<p>২৮. (আল্লাহর দিকে অভিমুখী হেদায়েতপ্রাপ্ত লোক তারাই) যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই শুধু চিত্ত প্রশান্ত হয়। [সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮ (প্রথম পর্ব)]</p> <p>তাফসির : আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, যারা আল্লাহর অভিমুখী হয়, আল্লাহ তাদের হেদায়েত করেন। আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, তারাই সত্পথ লাভ করে, যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং আল্লাহর অস্তিত্বের স্থির বিশ্বাস তাদের মানসিক তৃপ্তি দেয়। যার অন্তর ঈমানের আলোয় দীপ্ত, তার মনে সব সময় আল্লাহর ভয় থাকে। ঈমানের দীপ্তিতে সে আল্লাহর বিশালত্ব ও শক্তিমত্তা অনুভব করতে পারে। ফলে আল্লাহর শক্তিমত্তা ও বিশালত্বের সামনে সব কিছুই তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। এ জন্য দেখা যায়, ঈমানদাররা মানসিক রোগে আক্রান্ত হন না। বিপদে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন না। অন্যদিকে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস না থাকার কারণে ধর্মহীন সমাজে বিষণ্নতা ও অন্যান্য মানসিক রোগ বেশি দেখা যায়।</p> <p>জিকির বা আল্লাহর স্মরণের তিনটি পদ্ধতি আছে—এক. আধ্যাত্মিক জিকির। অর্থাৎ যে জিকির কল্পনা ও চিন্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এর সঙ্গে জিহ্বার সামান্য স্পন্দনও হয় না। দুই. যে জিকিরে আত্মার কল্পনার সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বাও নড়বে। তবে তাও আওয়াজ অন্যরা শুনতে পাবে না। তিন. অন্তরে উদ্দিষ্ট সত্তার উপস্থিতি ও ধ্যান করার পাশাপাশি জিহ্বার স্পন্দনও হবে এবং সেই সঙ্গে শব্দও বের হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও আওয়াজ অধিক উচ্চ করা উচিত নয়।</p> <p>সরব ও নীরব জিকিরের মধ্যে কোনটি উত্তম, তার ফয়সালা অবস্থাভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। কারো জন্য জোরে, আর কারো জন্য আস্তে জিকির করা উত্তম।</p> <p>জিকিরের উত্তম পদ্ধতি : কোরআন ও হাদিসের বহু স্থানে আল্লাহর জিকির করার প্রতি বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জিকির আস্তে করবে, না জোরে করবে—এ নিয়েও সমাজে মতপার্থক্য দেখা যায়। সুরা আরাফের ৫৫ নম্বর আয়াত থেকে আস্তে জিকির করা উত্তম বলে প্রমাণিত হয়। হাদিসে দেখা যায়, খায়বর যুদ্ধে সাহাবায়ে কেরামের তাকবির ধ্বনি উচ্চেঃস্বরে হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মানুষ, নরম হও, বিনম্র আওয়াজে আল্লাহকে ডাকো...তোমরা বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না।’ (মুসলিম)</p> <p>হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘আগের মনীষীরা বেশির ভাগ সময় আল্লাহর জিকির ও দোয়ায় মশগুল থাকতেন; কিন্তু কেউ তাঁদের আওয়াজ শুনতে পেত না।’</p> <p>ইসলামে যেখানে উচ্চেঃস্বরে জিকির করতে বলা হয়েছে, সেখানে উচ্চেঃস্বরে জিকির উত্তম। যেমন—আজান, ইকামত, কোরআন তিলাওয়াত, নামাজের তাকবির, তাকবিরে তাশরিক ইত্যাদি উচ্চেঃস্বরে বলা উত্তম। অন্যান্য ক্ষেত্রে উচ্চেঃস্বরে জিকির করার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। এক. লোকদেখানো মনোভাব থাকতে পারবে না। দুই. নিজের জিকিরের শব্দে অন্যের নামাজ, তিলাওয়াত, প্রয়োজনীয় কাজকর্ম বা বিশ্রামে ক্ষতি করা যাবে না। তিন. জিকিরের এ পদ্ধতিকেই একমাত্র সঠিক পদ্ধতি হিসেবে জ্ঞান করা যাবে না।</p> <p> </p> <p>গ্রন্থনা : <strong>মাওলানা কাসেম শরীফ</strong></p>