<p>৪. স্মরণ করো, ইউসুফ তার পিতাকে বলেছিল, হে আমার পিতা! আমি ১১টি নক্ষত্র, সূর্য ও চন্দ্র দেখেছি। দেখেছি ওরা আমার প্রতি সিজদাবনত অবস্থায় আছে। [সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৪ (প্রথম পর্ব)]</p> <p>তাফসির : আগের কয়েকটি আয়াতে ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনার ভূমিকা বর্ণনা করা হয়েছিল। এ আয়াত থেকে তাঁর ঘটনার বিবরণ শুরু। এটি শুরু হয়েছে একটি স্বপ্নের ঘটনা বর্ণনার মধ্য দিয়ে। স্বপ্নটি ছিল ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। কোনো কোনো স্বপ্নে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে সুসংবাদ দেওয়া হয়। অনেক সময় মানুষ শয়তানের পক্ষ থেকে স্বপ্ন দেখে, যা হতাশা ও দুঃখ-দুর্দশায় পরিপূর্ণ থাকে। কখনো কখনো মানুষের ব্যক্তিগত চিন্তা, দৈনন্দিন আচার-আচরণ ও কাজকর্ম তার স্বপ্নে প্রতিফলিত হয়। তবে ওলি-আউলিয়া ও পবিত্র ব্যক্তিরা যে স্বপ্ন দেখেন, তা সত্য। এসব স্বপ্নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে ঘটবে এমন কিছুর পূর্বাভাস দেওয়া হয়। ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নও ছিল এমনই তাৎপর্যমণ্ডিত স্বপ্ন। অনেক সময় স্বপ্নের মাধ্যমেও সঠিক দিকনির্দেশনা লাভ করা যায়। পরহেজগার ব্যক্তিরা এ ধরনের দিকনির্দেশনা লাভ করে থাকেন।</p> <p>তাফসিরে মাজহারিতে কাজি সানাউল্লাহ (রহ.) লিখেছেন, স্বপ্নের তাৎপর্য হলো, নিদ্রা অথবা সংজ্ঞাহীনতার কারণে মানুষ যখন দেহের বাহ্যিক কাজকর্ম থেকে মুক্ত হয়ে যায়, তখন সে কল্পনাশক্তির পথে কিছু আকৃতি দেখতে পায়। এটাই স্বপ্ন। স্বপ্ন তিন প্রকার। দুই ধরনের স্বপ্ন সম্পূর্ণ অবাস্তব ও ভিত্তিহীন। এক ধরনের স্বপ্ন মৌলিকত্বের দিক থেকে বাস্তব। কিন্তু এর মধ্যেও নানা উপসর্গ যুক্ত হয়ে এগুলোকে অনেক সময় অবান্তর ও অবিশ্বাস্য করে তোলে। বিভিন্ন সময় মানুষ জাগ্রত অবস্থায় যেসব বিষয় ভাবে ও দেখে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা-ই স্বপ্নে নানা আকারে ভেসে ওঠে। আরেক ধরনের স্বপ্ন হলো, শয়তান আনন্দদায়ক কিংবা ভয়াবহ কিছু দৃশ্য বা ঘটনাবলি স্মৃতিতে জাগিয়ে দেয়। এসব স্বপ্নের কোনো বাস্তবতা নেই। এমন স্বপ্নদর্শনকে ‘মনের সংলাপ’ ও ‘শয়তানের বিভ্রান্তি’ বলা হয়। তৃতীয় ধরনের স্বপ্ন সত্য। তা আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘ইলহাম’ বা বিশেষ নির্দেশনা বলেও গণ্য। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে আনন্দ বা সুসংবাদ দিয়ে থাকেন। প্রিয় বান্দাদের অনেক অদৃশ্য ও জটিল বিষয়ের জ্ঞান দান করে তাদের মন, মগজ ও কর্মতৎপরতা জাগিয়ে রাখেন। হাদিস শরিফের ভাষ্য মতে, মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন একটি সংযোগবিশেষ। এর মাধ্যমে সে তার পালনকর্তার সঙ্গে কথা বলার গৌরব অর্জন করে। ইউসুফ (আ.) স্বপ্ন দেখেছেন যে ১১টি নক্ষত্র, সূর্য ও চন্দ্র তাঁর জন্য সিজদাবনত হয়েছে। এর ব্যাখ্যা হলো, অল্প সময়ের ব্যবধানে ইউসুফ (আ.) উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবেন। একপর্যায়ে তাঁর ১১ ভাই ও মা-বাবা সবাই তাঁর অনুগত হবেন। ইয়াকুব (আ.)-এর মোট ১২ পুত্রসন্তান ছিল। এর মধ্যে ইউসুফ (আ.) ও বিনয়ামিন ছিলেন এক মায়ের, বাকিরা ছিল অন্য মায়ের সূত্রে। ইয়াকুব (আ.) আশঙ্কা করছিলেন, ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নের কথা তার সত্ভাইয়েরা জেনে গেলে তারা হিংসাকাতর হয়ে উঠবে। শয়তানের প্ররোচনায় তারা ইউসুফ (আ.)-এর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপও নিতে পারে। শেষ পর্যন্ত তাঁর আশঙ্কা সত্যি হয়েছিল।</p> <p> </p> <p>গ্রন্থনা : <strong>মাওলানা কাসেম শরীফ</strong></p>