<p>ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জাতি অর্জন করে যে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, তা অর্থবহ করতে শুরু হয়েছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার কাজ। কিন্তু শুরুতেই বিপর্যয় ঘটে ১৫ই আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায়। তারপর গত ৪৭ বছরে বারবার আঘাত এসেছে স্বাধীনতার চেতনার ওপর। বিভিন্ন সময় গণতান্ত্রিক সরকারের নামে সামরিক ও স্বৈরাচাররা দখল নিয়েছে রাষ্ট্রক্ষমতার। প্রতিটি সরকারের আমলে গঠিত হয়েছে মন্ত্রিসভা। ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়ে এসে আবার বিদায় নিয়েছেন ওই সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীরা। তাঁদের বেশির ভাগই জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেননি।</p> <p>গতকাল নতুন সরকারের মন্ত্রীদের নাম ঘোষণায় বিস্ময় ছাপিয়ে আশান্বিত হয়ে উঠেছে আপামর দেশবাসী। এত দিন পর জনপ্রত্যাশা পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে উপহার দিয়েছেন তারুণ্যনির্ভর এক নতুন মন্ত্রিসভা। পুরনো ও ব্যর্থদের বিদায় দেওয়ায় মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছে। জাতি বিপুল আশা নিয়ে চেয়ে আছে নতুনদের প্রতি।</p> <p>শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে এরই মধ্যে। তাঁর নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা পূরণ করবে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা, বাংলাদেশকে উন্নীত করবে উন্নত দেশে—এই প্রত্যাশা জেগেছে মানুষের মনে। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশকে সমহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড় করাবেন শেখ হাসিনা, সেই বিশ্বাস দৃঢ় হয়ে উঠছে বাঙালির হৃদয়ে।</p> <p>একাদশ সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় জয়ের পর টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে একঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে নতুন সরকারের সূচনা করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল রবিবার বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ও দপ্তর জানিয়েছেন।</p> <p>আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে</p> <p>রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য শপথ নেবেন নতুন সরকারের সদস্যরা। বিদায়ী সরকারে থাকা হেভিওয়েট মন্ত্রীদের বেশির ভাগেরই জায়গা হয়নি এই নতুন মন্ত্রিসভায়। ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে আগে কখনো এভাবে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মন্ত্রিসভার</p> <p>সদস্যদের নাম ঘোষণা হয়নি। এ জন্য শপথের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু এবার শপথের আগের দিন শুধু মন্ত্রীদের নামই নয়, ঘোষণা করা হয়েছে তাঁদের দেওয়া মন্ত্রণালয়ের নামও। </p> <p>পরপর গত দুই মেয়াদে মহাজোট ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতাদের নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলেও তাঁর এবারের মন্ত্রিসভার সবাই আওয়ামী লীগের। ঠাঁই হয়নি শরিকদের। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়িয়েছে ৪৭ জনে। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী প্রথমবারের মতো সরকারের দায়িত্ব পালন করতে আসছেন। বিদায়ী সরকারে থাকা ৩৪ জনের নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান হয়নি।</p> <p>সরকারের ২৪ জন মন্ত্রীর মধ্যে ৯ জনই একেবারে নতুন। বিদায়ী সরকারে না থাকলেও আগে মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন এমন তিনজনকে শেখ হাসিনা ফিরিয়ে এনেছেন পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে। পুরনোদের মধ্যে যে সাতজন মন্ত্রী নতুন সরকারে টিকে গেছেন, তাঁদের ছয়জনই আগের দপ্তরে থেকে যাচ্ছেন। এ ছাড়া গত সরকারের পাঁচজন প্রতিমন্ত্রীর এবার পদোন্নতি হয়েছে। শেখ হাসিনার গত সরকারে অনির্বাচিত (টেকনোক্র্যাট) মন্ত্রী ছিলেন চারজন। তাঁদের মধ্যে দুজনকে এবারের সরকারেও রাখা হয়েছে। এ ছাড়া টেকনোক্র্যাট হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে এসেছেন একজন।</p> <p>প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই সরকারে আসছেন এই প্রথমবার। তিনজন শেখ হাসিনার গত সরকারেও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। আর একজন আগের সরকারে থাকলেও গত মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। শেখ হাসিনা তাঁর এবারের সরকারে তিন মন্ত্রণালয়ে তিনজনকে উপমন্ত্রী করেছেন। তাঁদের সবাই নতুন মুখ।</p> <p>প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : তাঁর আওতায় থাকছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।</p> <p>মন্ত্রী : আ ক ম মোজাম্মেল হক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়; ওবায়দুল কাদের, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; ড. আব্দুর রাজ্জাক, কৃষি মন্ত্রণালয়; আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য মন্ত্রণালয়; আনিসুল হক, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়; আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল), অর্থ মন্ত্রণালয়; তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; ডা. দীপু মনি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়; এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; এম এ মান্নান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়; নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, শিল্প মন্ত্রণালয়; গোলাম দস্তগীর গাজী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়; জাহিদ মালেক স্বপন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; সাধন চন্দ্র মজুমদার, খাদ্য মন্ত্রণালয়; টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; নূরুজ্জামান আহমেদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়; অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; শাহাব উদ্দিন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়; বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়; সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, ভূমি মন্ত্রণালয়; নূরুল ইসলাম সুজন, রেলপথ মন্ত্রণালয়; ইয়াফেস ওসমান (টেকনোক্র্যাট), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং মোস্তাফা জব্বার (টেকনোক্র্যাট), ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। </p> <p>প্রতিমন্ত্রী : কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প মন্ত্রণালয়; ইমরান আহমেদ চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; জাহিদ আহসান রাসেল, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; নসরুল হামিদ বিপু, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; আশরাফ আলী খান খসরু, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়; মুন্নুজান সুফিয়ান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়; জাকির হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়; শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; জুনাইদ আহেমদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়; স্বপন ভট্টাচার্য্য, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; জাহিদ ফারুক, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; মুরাদ হাসান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; শরীফ আহমেদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়; কে এম খালিদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়; ডা. এনামুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; মাহবুব আলী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (টেকনোক্র্যাট), ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।</p> <p>উপমন্ত্রী : হাবিবুন নাহার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; এ কে এম এনামুল হক শামীম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়।<br />  </p> <p><a href="http://www.kalerkantho.com/print-edition/special-kalerkantho/2019/01/07/723396" title="">৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা </a></p>