<p>সমাজসেবা অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আবেদন করেও যথাসময়ে সহায়তা পাচ্ছে না জটিল রোগে আক্রান্ত অসহায় ব্যক্তিরা। বেশির ভাগ রোগীর নামে এই সরকারি অনুদানের চেক আসে তাদের মৃত্যুর পর।</p> <p>সমাজসেবা অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে অসহায় রোগীদের জন্য ‘ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগ ও স্ট্রোকে প্যারালাইজড (পক্ষাঘাতগ্রস্ত) রোগীর আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন করছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রত্যয়ন ও জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্দিষ্ট আবেদনের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয় এ প্রকল্প থেকে। জেলা সমাজসেবা ও উপজেলা সমাজসেবা অফিস বা অনলাইন থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে এসব রোগী সাধারণত আবেদন করে থাকে।</p> <p>জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ সেসব পর্যালোচনা করে প্রতি মাসের সভায় সেগুলো চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়। তবে যারা সচেতন ও সচ্ছল রোগী তারা স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে তদবির করিয়ে সহজেই সহায়তা নিয়ে আসে। অসচ্ছল, অসহায় ও অসচেতন রোগীর তদবির করার কেউ না থাকায়, তাদের সহায়তা পেতে দেরি হয়। সহায়তা পাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় বেশির ভাগ রোগীর।</p> <p>সূত্র মতে, ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ সমাজল্যাণ পরিষদের চূড়ান্ত করা ৯২টি আবেদন, ১৫ নভেম্বর ৫৬টি, ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি ৫৭টি, ৩১ জুলাই ৩৪টি ও ৩১ মে ৬২টি আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। আবেদনগুলোতে ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিসসহ কঠিন রোগাক্রান্ত সহায়তা চাওয়া লোকজনও রয়েছে। কিন্তু আবেদনগুলোর সহায়তার একটিও এখনো এসে পৌঁছেনি। আদৌ পৌঁছবে কি না, জানে না স্থানীয়রা।</p> <p>সমাজসেবা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রতিটি হাসপাতালের বিপরীতে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে বরাদ্দ দিলে রোগীরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রত্যয়ন সাপেক্ষে দ্রুত সহায়তা পেতে পারত। এতে জটিল রোগীদের প্রতীক্ষা কমত। কেন্দ্রীয়ভাবে লোকবলের সমস্যাসহ নানা কারণে সহায়তা পেতে দেরি হয়। ফলে বেশির ভাগ রোগীর সহায়তা পাওয়ার আগেই মৃত্যু হয়। কেন্দ্রে জেলা পর্যায় থেকে পাঠানো আবেদনগুলো সময়মতো খুললে এ অবস্থা হতো না।</p> <p>অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সহায়তা আবেদনকারীদের নামে ২২টি চেক এসেছিল। কিন্তু চেক আসার আগেই তাদের ২০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। দিরাই উপজেলার চন্দপুর গ্রামের মাহমুদা বেগম ও রাজলক্ষ্মী দাস চৌধুরী, ছাতকের কামারগাঁও গ্রামের ছালেখা খাতুন, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুনপাড়ার রীনা রানী ভৌমিক, ছাতকের জাতুয়া গ্রামের মোছা. বেগম ও তাহিরপুরের মধুয়ারচরের আবু ছায়েদ—এ ছয় রোগী মারা গেছেন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ নামগুলোতে ইস্যুকৃত ছয়টি চেক গত ১০ এপ্রিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। তাঁদের (মৃত) উত্তরাধিকার বরাবর চেকগুলো ইস্যু করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো উত্তরাধিকারীদের নামে কোনো চেক আসেনি।</p> <p>তাহিরপুরের মধুয়ারচর গ্রামের মৃত আবু ছায়েদের স্ত্রী আক্তারা খাতুন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে চিকিৎসা করিয়েছিলাম স্বামীকে; কিন্তু বাঁচাতে পারিনি। বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে খবর জেনে সমাজসেবা অফিসে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তদবির করার কেউ না থাকায় আবেদনের দেড় বছর অর্থাৎ স্বামীর মৃত্যুর এক বছর পরে চেক এসেছে। এখন চেকের উত্তরাধিকারী হিসেবে আবেদন করেছি, কবে পাব জানি না।’</p> <p>ছাতকের আবেদনকারী মৃত ছালেকা খাতুনের মেয়ে ফুলমালা বেগম বলেন, ‘আমাদের তদবিরের কোনো লোক নেই। মা মারা যাওয়ার পর আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। একদিন সমাজসেবা অফিসের লোকজন খবর দিলে তাঁদের আমার মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি জানাই। তাঁরা আমাকে উত্তরাধিকারী হিসেবে চেকের জন্য মনোনয়ন করে পাঠিয়েছেন। কবে চেক আসবে জানি না।’</p> <p>সুনামগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ইব্রাহিম আল মামুন মোল্লা বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে এ বিষয়ে কিছু করার নেই। আমরা আবেদন পাওয়ার পর জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ এবং সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিই। তবে বেশির ভাগ মানুষই মৃত্যুর পর সহায়তার চেক পেয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে সমাজসেবার মাধ্যমে বরাদ্দ দিলে রোগীরা প্রত্যয়ন সাপেক্ষে সহজে ও দ্রুত চেক পেতে পারত।’</p> <p>সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ‘আমার কাছে যারা সহায়তা পেতে আসে আমি যাচাই সাপেক্ষে তারা কিভাবে</p> <p>সহজে সহায়তা পেতে পারে, সেই চেষ্টা করি। তবে স্থানীয়ভাবে যে আবেদনগুলো যায়, তা নানা জটিলতার কারণে পাশ হতে সময় লাগে।’ এখন মন্ত্রণালয় দ্রতই জটিল রোগীদের সহায়তার বরাদ্দ দিয়ে থাকে বলে জানান তিনি।</p>