<p>১৪ বছর পর পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার নাম পাল্টে ইন্দুরকানি করায় বিএনপি-জামায়াত অনুসারীরা নাখোশ হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী জিয়ানগর উপজেলার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান।</p> <p>অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফার লেখা ‘পিরোজপুরের ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, হিন্দু থেকে ইন্দু শব্দের উৎপত্তি। জমি পরিমাপের স্থানীয় একক কানি। এই দুটি শব্দ মিলে ইন্দুরকানি। এ অঞ্চলটি আগে হিন্দু অধ্যুষিত ছিল। এখানে প্রথম যে নৌ থানাটি ছিল, তার নাম ছিল ইন্দুরকানি।</p> <p>গত ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় পিরোজপুরের সপ্তম উপজেলা জিয়ানগরের নাম পরিবর্তন করে ইন্দুরকানি থানার নামে নামকরণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ সফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। তিনি নাম পরিবর্তনের কারণ উল্লেখ করে বলেন, ‘একই যায়গায় থানার নাম ইন্দুরকানি হলেও উপজেলার নাম ছিল জিয়ানগর। ফলে দুটি পৃথক নাম হওয়ায় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। আর এই বিভ্রান্তি দূর করতে থানা ও উপজেলার নাম একই করে ইন্দুরকানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’</p> <p>এ খবর জেনে গত মঙ্গলবার বিকেলে ইন্দুরকানি বাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল বের করে। পরে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন।</p> <p>স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পিরোজপুর সদর উপজেলার পত্তাশী, পাড়েরহাট ও বালিপাড়া এ তিনটি ইউনিয়নের ৯২ দশমিক ৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে জিয়ানগর নামে একটি নতুন প্রশাসনিক উপজেলা গঠন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ উপজেলা ২ শাখা থেকে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। এ আদেশের বলে ২০০২ সালের ২১ এপ্রিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ইন্দুরকানি কলেজ মাঠে এক বিশাল জনসভায় ইন্দুরকানি থানাকে জিয়ানগর উপজেলা নামে উদ্বোধন করেন। এর আগে ১৯৮০ সালের ২৮ জুলাই সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বরিশাল জেলার পিরোজপুর মহকুমার পিরোজপুর থানার ইন্দুরকানি নৌ থানাকে পূর্ণাঙ্গ থানায় রূপান্তরিত করা হয়।</p> <p>এদিকে গত বছর জিয়ানগর ডিগ্রি কলেজের নাম পরিবর্তন করে ইন্দুরকানি কলেজ নামকরণ করা হয়। তবে শুরু থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ব্যানার, পোস্টার, সভা সমাবেশে সব সময় ইন্দুরকানি নামটি ব্যবহার করে আসছেন। বর্তমান সরকার ২০১৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ এ উপজেলার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে তোড়জোড় শুরু করে। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে টানা তিন মাস ধারাবাহিক রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে সারা দেশে জিয়ানগর উপজেলা নামটি উঠে আসে। আর তখন থেকে এ উপজেলায় অন্যান্য এলাকার তুলনায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়ে। এমনকি ২০০৮ সালে এখানে ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ হওয়ার আট বছর পেরিয়ে গেলেও অন্তর্বিভাগে সেবা চালু হয়নি।</p> <p>এদিকে গত সোমবার নাম পরিবর্তনের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ উপজেলাজুড়ে বিষয়টি আলোচনার শীর্ষবিন্দুতে পরিণত হয়। নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে বিএনপি জামায়াত অনুসারীরা নাখোশ হলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। অনেকে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।</p> <p> </p> <p>অন্যদিকে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলে, নাম পরিবর্তনের কারণে উপজেলাবাসীকে বিভিন্ন কাগজপত্রের জন্য সাময়িক ভোগান্তিতে পড়তে হবে। তবে উপজেলা হিসেবে আগের নামটিতে একজন রাজনৈতিক নেতার নামের গন্ধ থাকলেও ‘ইন্দুরকানি’ রুচিসম্মত নয়।</p> <p>এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘এখানে জনমতের প্রতিফলন হয়নি। আর সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ার তো সুযোগ নেই। তবে আমাদের উন্নয়নকাজ যাতে ব্যাহত, বাাধাগ্রস্ত না হয়, অন্যান্য উপজেলার মতো এ উপজেলায়ও সরকারি বরাদ্দ দেন এবং এ উপজেলার সঙ্গে যেন বিমাতাসুলভ আচরণ না করেণ, এটাই কাম্য।’</p> <p>উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল লতিফ হাওলাদার বলেন, ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সংসদ সদস্য থাকাকালে ২০০২ সালের ২১ এপ্রিল এটিকে জিয়ানগর উপজেলা হিসেবে নামকরণ করেন। তিনি ইচ্ছা করলে সে সময় এ উপজেলাকে সাঈদী নগর করতে পারতেন। জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আর তাঁর নামেই এ উপজেলার নামকরণ করা হয়েছিল। উপজেলা গঠনের পর সে সময় এখানে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ হয়। তবে বর্তমান সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে জিয়ার নাম বাদ দেওয়ার জন্যই উপজেলার নাম বদল করেছে। নাম পরিবর্তন হওয়ায় এ উপজেলার ৮০ ভাগ মানুষ অখুশি।’</p> <p>পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা শিগগির এ নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে সিদ্ধান্ত নেব। নাম পরিবর্তনের বিষয়টি সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতি।’</p> <p>অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃধা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জিয়ানগর নামকরণের সময় আমাদের আপত্তি থাকলেও তারা তাদের ক্ষমতাবলে জিয়ার নামে উপজেলার নামকরণ করেন। তাই দীর্ঘদিন পরে হলেও উপজেলার নাম পরিবর্তন করায় আমরা খুশি।’</p>