<p>পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর জেলা সদরে যেতে চিরিরবন্দর উপজেলা সড়কের দুই পাশে নানা প্রজাতির প্রায় ১০ হাজার গাছ রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অর্জুন রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। ঔষধি গুণ থাকায় এই গাছের বাকলে চোখ পড়েছে এক শ্রেণির মানুষের। তারা বাকল তুলে নেওয়ায় গাছগুলো মরতে বসেছে।</p> <p>স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে স্থানীয় উপকারভোগী সংগঠনের সহযোগিতায় প্রায় ১৬ বছর আগে পার্বতীপুর-দিনাজপুর সড়কে গাছগুলো রোপণ করা হয়। বন বিভাগের অধীন ওই সড়কের দিনাজপুর সদর থেকে চিরিরবন্দরের বেকিপুল হয়ে কারেন্টহাট পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটারে এর বিস্তৃতি। গাছগুলো ইতিমধ্যে বিশাল আকার ধারণ করেছে। গাছগুলো দেখভাল করে দিনাজপুর সদর বিটের অধীন পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া রেঞ্জ। তবে অর্জুন একটি হারবাল গাছ হওয়ায় কিছু মানুষ প্রতিদিন গাছের ছাল-বাকল তুলে নিচ্ছে।</p> <p>সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন অংশজুড়ে শোভাবর্ধন করছে গাছগুলো। চলাচলকারী মানুষজন গাছের শীতল ছায়ায় জিরিয়ে নিচ্ছে। অর্জুনগাছের শরীরজুড়ে রয়েছে ক্ষত চিহ্ন। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে যে যার মতো করে বাকল কেটে নিচ্ছে। প্রতিকূল অবস্থায় গাছগুলো টিকে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া কিছু অসাধু ব্যক্তি অর্জুনগাছ রাতের অন্ধকারে কেটে নিচ্ছে।</p> <p>ওই সড়কের বেকিপুল এলাকার ব্যবসায়ী মাহবুবার রহমান (৩৮) বলেন, ‘এলাকার মানুষ সবাই জানে অর্জুন উপকারী গাছ। এ জন্য অনেকে এর ছাল-বাকল তুলে নিয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতকারীরা অনেক গাছ কেটে নিয়েছে। বন বিভাগের উচিত এগুলো পাহারা দেওয়া।’</p> <p>উপকারভোগী সংগঠনের সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘রোপণ করার সময় অনেকেই অন্য প্রজাতির গাছ রোপণ করার কথা বলেছিল। কিন্তু ঔষধি অর্জুনগাছ লাগানো হয়। ওই গাছই এখন সবার উপকারে আসছে। পাহারা দেওয়ার পরও স্থানীয় লোকজন অপরিকল্পিতভাবে অর্জুনের ছাল তুলে নিচ্ছে। এটা দুঃখজনক।’</p> <p>অর্জুন নিয়ে এক গবেষণায় জানা যায়, এ প্রজাতি ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়া অঞ্চলে বিস্তৃত। তবে অর্জুন বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় জন্মাতে দেখা যায়। এর বাকল ধূসর থেকে গোলাপি সবুজ রঙের হয়। অর্জুন একটি চিরহরিৎ ও দ্রুত বর্ধনশীল গাছ, যার উচ্চতা প্রায় ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। এর স্থানীয় নাম অর্জুন। এর গোত্র কমব্রিটয়েসি। পাতা দেখতে সরল, প্রতিমুখ অথবা উপপ্রতিমুখ। পত্রফলকের আকৃতি আয়তাকার থেকে উপবৃত্তাকার আয়তাকার। গোড়া গোলাকার। উপরিভাগ সবুজ। নিম্নভাগ হালকা বাদামি। আকার চার থেকে ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।</p> <p>এই গাছ সম্পর্কে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘অর্জুনের বাকল ও ফলের বিভিন্ন অংশের ঔষধি গুণ রয়েছে। পাশাপাশি এর কাঠ নৌকা, বাড়ি নির্মাণ, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও কৃষিকাজের যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর পাতা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়।’</p> <p>এর উপকারিতা সম্পর্কে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ফরিদুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এ গাছের বাকলের ভেষজ গুণ রয়েছে। হৃদরোগের ফলদায়ক হিসেবেও অর্জুনের গুণাগুণ প্রমাণিত। বিশেষ করে অর্জুনের বাকল পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে দুর্বলতা, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগের উপকার হয়। এ ছাড়া ক্ষত ও রক্তশূন্যতায় অর্জুন উপকারী।’</p> <p>দিনাজপুর সদর বিটের মধ্যপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রনজিবুল আমিন রঞ্জু বলেন, ‘স্থানীয় উপকারভোগী সংগঠনের সদস্যদের এগুলো দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গাছের বাকল কেটে না নিতে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে আলোচনা করা হয়। তা সত্ত্বেও নির্বিচারে কেউ কেউ রাতের আঁধারে গাছের বাকল তুলে নিচ্ছে। সম্পূর্ণ বাকল তুললে গাছ শুকিয়ে মারা যায়। আংশিক বাকল তুললে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে গাছের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হয়।’</p>
