<p>মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে প্রতিষ্ঠা করা হয় মাদকাসক্ত নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে যাত্রা শুরু করে ওয়েসিস। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আড়াই শতাধিক মাদকাসক্ত তরুণ-তরুণীকে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছে কেন্দ্রটি।</p> <p>মনোমুগ্ধকর ও নান্দনিক পরিবেশে উন্নত ব্যবস্থাপনায় দেশের সবচেয়ে অত্যাধুনিক এই কেন্দ্রে দিন দিন রোগী বাড়ায় এটি আরো বিস্তৃত ও সমৃদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ মনে করছে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় ওয়েসিস আরো বড় আকারে সুন্দর পরিবেশে হওয়া দরকার। যে পরিবেশে তারা (মাদকাসক্তরা) শিক্ষা নিতে পারে এবং সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য মানিকগঞ্জে বৃহত্তর পরিসরে জায়গা নেওয়া হয়েছে।</p> <p>তবে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পের কেন্দ্রটির পাশাপাশি এবার মানিকগঞ্জের কালীগঙ্গা নদীর পাশে রিসোর্টের আদলে এটি করা হবে। এখানে পাঁচ শতাধিক শয্যা তৈরি করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার নেপথ্যের কারিগর বর্তমানে ওয়েসিসের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।</p> <p>যেমন হবে ওয়েসিসের নতুন যাত্রা : রিসোর্টের আদলে নিরাময়কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। মানুষ বিনোদনের জন্য যেমন কোথাও ঘুরতে যায়—সেখানকার পরিবেশও তেমনই থাকবে। প্রকৃতি, পরিবেশ, স্থল ও নদী সব কিছু মিলিয়ে একটি সুন্দর পরিবেশ হবে। সেখানে খেলার মাঠ, উন্মুক্ত জায়গা ও সুইমিং পুল থাকবে। পাশে কালীগঙ্গা নদীতে নৌকাভ্রমণের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি মাদকাসক্তদের আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পের ওয়েসিস কেন্দ্র থেকে মানিকগঞ্জে আবার মানিকগঞ্জ থেকে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে আনা হবে। এভাবে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে পুরনো জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে, যে জীবন সে হারিয়ে ফেলেছিল।</p> <p>ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওয়েসিসের বর্তমান চিকিৎসাপদ্ধতি এবং সামনে যা থাকবে, তা সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক মানের। তবে এটিকে আরো সমৃদ্ধ করতে আমাদের প্রচেষ্টা চলছে। আমরা মনে করি, মাদক নিরাময়ের ক্ষেত্রে এই প্রচেষ্টা বড় ভূমিকা রাখবে।’</p> <p>ওয়েসিসের লক্ষ্য ও সফলতা : প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওয়েসিস কতদূর তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পেরেছে—এমন প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘জনগণের প্রতি পুলিশের যে মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা, সেই চিন্তা থেকে ওয়েসিসের যাত্রা শুরু। এটি একটি ভর্তুকি প্রতিষ্ঠান। আমরা চাই প্রকৃতপক্ষে যারা মাদকাসক্ত, তারা যেন এর মাধ্যমে সঠিক পথে ফিরে আসে। একই সঙ্গে মাদকাসক্ত নিরাময়ের অন্য যে প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর জন্য যেন ওয়েসিস উদাহরণ হতে পারে, এরই মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এখানে আসা রোগীর সফলতা শতভাগ। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমান কেন্দ্রের ৬০টি শয্যা প্রায় সময় পূরণ হয়ে যায়। এ জন্য আরো বৃহত্তর পরিসরে মানিকগঞ্জে যাত্রা শুরু হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ওয়েসিসে যারা সেবা নিতে এসেছে, চিকিৎসা শেষে ফিরে যাওয়ার পরেও তাদের মনিটর করা হয়।</p> <p>যা বলছেন দায়িত্বরতরা : প্রতিষ্ঠানটির শুরু থেকেই এখানে কাজ করছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোর্তজা হাসান। তিনি বলেন, ‘এখানে যেসব রোগী আসে, তাদের বেশির ভাগ হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ হরেক মাদকে আসক্ত। এ ক্ষেত্রে প্রকারভেদে তাদের বিভিন্ন চিকিৎসা দেওয়া হয়।’ ওয়েসিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সুশান্ত নারায়ণ দে বলেন, ‘আমাদের এখানে ২৪ ঘণ্টা  বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে বিনা মূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়াসহ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একজন রোগীর জন্য যা যা দরকার সবই আছে। টেলিমেডিসিন সেবা মিলবে ০১৯৩০৪০৪০৪০-এই নম্বরে।’</p> <p> </p>