<p>প্রভিডেন্ট ফান্ড ও কল্যাণ তহবিল পাবেন, চাকরি শেষে পেনশন পাবেন—এমন নিশ্চয়তা নিয়েই ২০১২ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ফারহানা পারভীন। কিন্তু নবম গ্রেডের এই কর্মকর্তার এখন নিয়মিত বেতন-ভাতা পাওয়া নিয়েই চিন্তিত থাকতে হচ্ছে। তিনি একা নন, বিনিয়োগ বোর্ড বিলুপ্ত হওয়ার পর বিডায় যাওয়া ৭৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সবাই পড়েছেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। তাঁদের মধ্যে নবম গ্রেডের অন্তত ১৪ জন সহকারী পরিচালক, ১০ জন বিনিয়োগ কর্মকর্তাসহ অফিস সহায়ক, গাড়িচালক ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর রয়েছেন।</p> <p>দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বেসরকারীকরণ কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ডকে বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) গঠন করা হয় ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর। জানা যায়, অবলুপ্ত বিনিয়োগ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভেতর এরই মধ্যে যাঁরা পিআরএলে গেছেন তাঁরা পেনশনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁরা পাসপোর্ট করতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। পাসপোর্ট অফিস থেকে বলা হচ্ছে ‘আপনি তো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।’</p> <p>জানা যায়, দুটি প্রতিষ্ঠান একীভূত করে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বিডা গঠন থেকেই জটিলতা শুরু। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বিডা যেহেতু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, তাই এর বেতন-ভাতাও দেওয়া হবে নিয়ম অনুযায়ী থোক বরাদ্দ থেকে, মহা-হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয় থেকে নয়।</p> <p>বিনিয়োগ বোর্ড যত দিন ছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ৭৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকেই বেতন-ভাতা পেতেন। এ ছাড়া আবাসন, কল্যাণ তহবিল, গৃহ নির্মাণ সুবিধা, অফিশিয়াল পাসপোর্ট, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা ছিল। তবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বেসরকারীকরণ কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থোক বরাদ্দ থেকে শুধু বেতন-ভাতা পেতেন।</p> <p>বিনিয়োগ বোর্ড থেকে বিডায় আসা ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, গত বছর জুনে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, জুলাই থেকে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মহা-হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয় থেকে বেতন-ভাতা পাবেন না। বেতন-ভাতা নিতে হবে বিডার থোক বরাদ্দ থেকে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা নিলে সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা থাকবে না—এমন আশঙ্কা থেকে শুরুতে অনেকেই বেতন-ভাতা গ্রহণ করেননি, বাড়ি থেকে টাকা এনে বা ধারদেনা করে সংসার চালিয়েছেন। চাকরিতে সমস্যা হতে পারে ভেবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী কালের কণ্ঠকে জানান, কত দিন এভাবে চলা যায়? তাই অনেকে নিরুপায় হয়ে বিডার থোক বরাদ্দ থেকে বেতন-ভাতা নেওয়া শুরু করেছেন। অবশ্য এখনো অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বিডার থোক বরাদ্দ থেকে বেতন-ভাতা তুলছেন না। বাড়ি থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ টাকা-পয়সা এনে সংসার চালাচ্ছেন।</p> <p>বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজস্ব খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জটিলতার বিষয়টি আমরা অবহিত। সুযোগ-সুবিধা পাওয়া তাঁদের অধিকার। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে তাঁদের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করেছি। আশা করছি শিগগিরই এর একটা সুরাহা হবে।’ এই জটিলতা নিরসনে এত সময় লাগছে কেন এমন প্রশ্নে কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘যদি দৃঢ়ভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজটি করা হয়, তাহলে খুব দ্রুত হয়ে যাবে। এর আগে টিঅ্যান্ডটি বোর্ড ভেঙে বিটিসিএল করা হয়েছিল। তখন এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছিল। পরে তা সমাধান হয়েছে। আশা করি এটাও হয়ে যাবে।’</p> <p>বিডার একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজস্ব খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন থোক থেকে বেতন তুলছেন। অথচ তাঁদের বেতন-ভাতা হওয়ার কথা মহা-হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয় থেকে। এটা তাঁদের যৌক্তিক অধিকার। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে এই কর্মকর্তারা বলেন, আবাসন, কল্যাণ তহবিল, গৃহ নির্মাণ ঋণ, পাসপোর্ট, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা সব তাঁরা ফেরত চান। তাঁরা আরো বলছেন, বেসরকারীকরণ কমিশন রাজস্ব খাতে ছিল না; কিন্তু বিনিয়োগ বোর্ড তো ছিল। দুটোকে এক করার পর বৈষম্য যে দেখা দিতে পারে বিষয়টি বিডা গঠনের সময় বিবেচনা করা হয়নি।</p>