<p>আরেকটি বাল্যবিয়ে রুখে দিল ময়মনসিংহের আলোচিত সংগঠন ‘ঘাসফড়িং’-এর সদস্যরা। স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীরা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে গতকাল রবিবার একটি বাল্যবিয়ের আসরে হাজির হয়ে অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য করে। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মেয়েকে বিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকা দেন অভিভাবকরা। ঘটনাটি নান্দাইল উপজেলার মধ্য রসুলপুর গ্রামের।</p> <p>স্থানীয় সূত্র জানায়, রবিবার রসুলপুরে একটি বিয়ের আয়োজন চলছিল। কনে ওই গ্রামের খোরশেদুল ইসলামের মেয়ে রুমা আক্তার (১৪)। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী খালবালা বালিকা বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া রুমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের বাশহাটি গ্রামে। বর একটি সোয়েটার কারখানার শ্রমিক। স্কুলে যাতায়াতের পথেই কনে দেখে তারা বিয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করে। কনের বয়স কম হওয়ায় বিয়ের আয়োজন গোপন করার কৌশল গ্রহণ করে দুই পক্ষ। কনেবাড়ির উঠানে গতকাল রান্নার প্রস্তুতি চলছিল। দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের। এ অবস্থায় সংবাদ পেয়ে ঘাসফড়িংয়ের সদস্য লিজুয়ানা তাবাসসুম স্কুলে যাওয়ার পথে গতকাল সকালে উপস্থিত হয় সেখানে। কনের মা-বাবাকে বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু তা মানতে রাজি হয়নি কনেপক্ষ। উল্টো তাকে ‘খবরদারি’ না করার জন্য শাসিয়ে দেন।</p> <p>পরিস্থিতি বুঝে লিজুয়ানা নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে পৌঁছে ঘাসফড়িং সদস্যদের একত্রিত করে। লিজুয়ানা তাবাসসুম, জীবন নিসা খানম, স্নেহা বর্মণ, সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া, জান্নাতুল ইসলাম প্রান্তি ও জান্নাতুল আক্তার নামের সাত সদস্য এ বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে তত্পরতা শুরু করে। তারা সবাই নান্দাইল পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী।</p> <p>সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া জানায়, পুরো ঘটনা জেনে সবাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান তখন ময়মনসিংহে একটি সভায় অবস্থান করায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রুমানা আক্তারকে নির্দেশনা দেন।</p> <p>বেলা ২টার দিকে ঘাসফড়িং টিম পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ পৌঁছে রসুলপুর গ্রামে। তখন কনের মা-বাবা বিয়ের আয়োজন ফেলে পালানোর চেষ্টা চালান। এরপর একটি ঘর থেকে ডেকে বের করে আনা হয় কনে রুমাকে। তাকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বোঝানো হয়। মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার নির্দেশে তখন মেয়ের মা ও নানা-নানির উপস্থিতিতে অঙ্গীরকারনামা তৈরি করা হয়। ১৮ বছর পূর্ণ না হলে রুমার বিয়ে দেবেন না বলে অভিভাবকরা মুচলেকা দেন। এরপর ঘাসফড়িং সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।</p> <p>এর আগে বেশ কয়েকটি বাল্যবিয়ে রুখে দিয়ে আলোচনায় রয়েছে স্কুলছাত্রীদের সংগঠন ঘাসফড়িং। গতকাল পেয়েছে তারা আরেকটি সাফল্য।</p>