<p>সাভারে বহিরাগতদের সঙ্গে সংঘর্ষে বেসরকারি সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সিফাত উল্লাহ হত্যার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রধান আসামি মামুন সাকিল ওরফে বাপ্পীও রয়েছে। সোমবার রাতে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।</p> <p>সোমবার দুপুরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খাগান বাজার এলাকার সিটি ইউনিভার্সিটির সামনে ওই সংঘর্ষ হয়। সিফাত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাভার ক্যাম্পাস) টেক্সটাইল বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মকবুল হোসেন ছাত্রাবাসে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রেম ও আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জের ধরে সিফাত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম চলছে সিফাতের বিভাগেরই শিক্ষার্থী শাহেদ হোসেনের। তবে বিশ্ববিদ্যালটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বাপ্পীও ওই তরুণীর প্রতি দুর্বল ছিল। এ নিয়ে শাহেদের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটিও হয়েছে। বহিরাগত অস্ত্রধারী সহযোগীদের নিয়ে ক্যাম্পাস এলাকায় মহড়া দিত বাপ্পী, শাহেদকে খুঁজে বেড়াত। এ অবস্থায় সোমবার বাগিবতণ্ডার একপর্যায়ে বাপ্পী ও তার সহযোগীরা এলোপাতাড়ি গুলি করলে সিফাত নিহত হন।</p> <p>পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, আশুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা শাওনসহ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সশস্ত্র মহড়া দিয়েছিল বাপ্পী। চাঁদাবাজি ও দখলে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। শাহেদ ও তার বন্ধুদের হটিয়ে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছিল তারা।</p> <p>সিফাত হত্যার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সিটি ইউনিভার্সিটি (সাভার) ক্যাম্পাসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় মামলা করেছেন। বাপ্পীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে এজাহারে। এ ছাড়া আরো ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ঘটনার পর সোমবার রাতেই জড়িত অভিযোগে বাপ্পীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্যরা হলো বহিরাগত সোহেল (২২), মোশারফ হোসেন (২৪) ও এজানুর রহমান বিটু (২৩)। আজ বুধবার তাদের আদালতে হাজির করা হতে পারে বলে জানা গেছে।</p> <p>ঘটনার পর ক্যাম্পাস ও সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিটি ইউনিভার্সিটি আগামী শনিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসের মূল ফটকে বন্ধের নোটিশ দিয়ে গতকাল সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।</p> <p>ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সর্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুল হাসান ফিরোজ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রেম নিয়ে বিরোধের জেরে শাহেদের সঙ্গে বাপ্পীর কোন্দল চলছিল। এ নিয়ে গত রবিবার শাহেদ ও বাপ্পীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে বাপ্পী নিজেকে আশুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা দাবি করে শাহেদকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরদিন বাপ্পীর নেতৃত্বে ৮-১০টি মোটরসাইকেলে করে বহিরাগতরা ইউনিভার্সিটির সামনে এসে শাহেদকে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী বের হয়ে এলে প্রথমে উভয় পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। হঠাৎ বাপ্পীর সহযোগীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে ও হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় সিফাত উল্লাহসহ দুই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে হাসপাতাল নেওয়ার পর চিকিত্সকরা সিফাতকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত বাসুদেবকে এনাম মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়।</p> <p>গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিরুলিয়ার খাগান এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সিটি ইউনিভার্সিটির সামনে দোকানপাট বন্ধ রেখেছে ব্যবসায়ীরা। এলাকাবাসী জানায়, বাপ্পীর বাবার নাম জালাল উদ্দিন। তারা আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার বাসিন্দা। বাপ্পীর মোবাইল ফোনের অ্যাক্সেসরিজের দুটি দোকান রয়েছে কাঠগড়ায়।</p> <p>সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাপ্পী বখাটে হিসেবে পরিচিত। তার গ্রুপের কাছে সব সময় অস্ত্র থাকে। ওরা চাঁদাবাজিও করে। বাপ্পী প্রায়ই ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করত। নিজেকে ছত্রলীগ নেতা পরিচয় দিলেও আসলে ছাত্রলীগে তার কোনো পদ নাই। সে শাহেদের প্রেমিকার সঙ্গে প্রেম করতে চায়। বাধা দেওয়ায় শাহেদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব বাধে। শাহেদ ও তার বন্ধুদের মেরে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিতে চেয়েছিল সে।’</p> <p>স্থানীয়রা জানায়, মামলার দ্বিতীয় আসামি আশুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাওন। তার সঙ্গেই বাপ্পীর ঘনিষ্ঠতা বেশি। ছাত্রলীগের পদ পেয়েই শাওন এলাকায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে নানা অপকর্ম শুরু করে। সোমবার সে ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের নিয়ে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায়।</p> <p>সাভার মডেল থানার বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই তারিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে সিফাতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ফিরে গেছে স্বজনরা। মামলার অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।</p>