বই পড়ার জন্যই লাইব্রেরি। সাধারণত তা সবার জন্যই থাকে উন্মুক্ত। ব্যতিক্রম ছাড়া কারো ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতেও সাধারণত অন্যদের বই পড়ার সুযোগ থাকে। অথচ পুরান ঢাকার নর্থব্রুক হল চত্বরে গড়ে ওঠা দেশের অন্যতম পুরনো নর্থব্রুক হল লাইব্রেরিতে চলছে আজব নিয়ম।
প্রাচীন নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি
বই পড়তে অনুমতি লাগে ডিসিসির
আপেল মাহমুদ

একতলাবিশিষ্ট লাইব্রেরি ভবনটি কয়েক বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়ালে একটি সাইনবোর্ড সেঁটে দেওয়া হয়েছে।
লাইব্রেরিতে গিয়ে জরাজীর্ণ ভবনটি দেখে মনে হলো, ভবনটি ডিসিসির নিদারুণ অবহেলার শিকার। প্রায় ১৫০ বছরের প্রাচীন ভবনটি কোনো কালেই সংস্কার করা হয়নি। ফলে দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ছাদ চুইয়ে পড়ছে পানি। বর্ষার স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ভবনটি বলতে গেলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পুরনো ও দুষ্প্রাপ্য হাজার হাজার বইপুস্তক আলমারিসহ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেগুলোর কী হাল সে ব্যাপারে দেখভালের প্রয়োজন বোধ করছেন না করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ও ফরাশগঞ্জের আদি বাসিন্দা মোহাম্মদ আজিম বখশ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নর্থব্রুক হল লাইব্রেরিটি দেশের অন্যতম সেরা লাইব্রেরি। অনেক দুষ্প্রাপ্য বইয়ের আধার লাইব্রেরিটি চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে গেল। একসময় দেশি-বিদেশি পর্যটক ও গবেষকরা রাতদিন এখানে বসে জ্ঞানচর্চা করতেন। বর্তমান সময়ে এসে লাইব্রেরিটির শত শত মূল্যবান বই, জার্নাল ও পত্র-পত্রিকা উইয়ের পেটে চলে গেছে। তবে সদিচ্ছা থাকলে এখনো নষ্ট হয়ে যাওয়া বইপুস্তকগুলো পুনর্প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কিন্তু সিটি করপোরেশন এ ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।’
নর্থব্রুক হল চত্বরে কথা হলো প্রবীণ অধ্যাপক মনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি লাইব্রেরির বর্তমান অবস্থা দেখে হতবাক। বললেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। গবেষণার জন্য একটি বই দরকার হলে সেটা পাওয়ার জন্য আমি কলকাতা, আগরতলা এমনকি পাটনার খোদাবক্স লাইব্রেরিতে গিয়েও পাইনি। অবশেষে নর্থব্রুক হল লাইব্রেরিতে এসে সেটি পেয়ে যাই। ত্রিপুরা মহারাজবংশের প্রাচীন ইতিহাসসংবলিত বইটি পাওয়ার পর আমার গবেষণার কাজটি শেষ করতে পেরেছিলাম।’
নর্থব্রুক হল লাইব্রেরিটি স্থানীয় বিদ্যোৎসাহীদের অর্থানুকূল্যে গড়ে উঠেছিল ১৮৮২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এর আগে ১৮৮০ সালের দিকে বাংলার বড়লাট নর্থব্রুক ঢাকা সফরে এলে তাঁর স্মৃতি জাগরূক রাখার লক্ষ্যে এখানে একটি পাবলিক মিলনায়তন গড়ে তোলা হয়। এটির নামকরণ করা হয় তাঁর নামানুসারে নর্থব্রুক হল। ঢাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ওই হলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করতে আসতেন। এ কারণে এই হল প্রাঙ্গণে একটি লাইব্রেরি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন নগরীর খ্যাতনামা কয়েকজন ব্যক্তি। তাঁরা গাঁটের পয়সা খরচ করে সেখানে দুষ্প্রাপ্য বইপুস্তক, জার্নাল ও পত্র-পত্রিকার একটি বৃহৎ লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। নর্থব্রুক হল চত্বরে এটা গড়ে ওঠার কারণে এর নামকরণ হয় নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি।
ঐতিহাসিক তথ্য সূত্রে জানা যায়, লাইব্রেরিটি গড়ে তোলার জন্য ভাওয়ালের রাজাদের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। রাজা কালীনারায়ণ রায়ের ছেলে রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় একাই লাইব্রেরির জন্য পাঁচ হাজার টাকা দান করেন। এরপর ত্রিপুরার মহারাজা এক হাজার, জয়দেবপুরের বলিয়াদীর জমিদার রাজেন্দ্র কুমার রায় এক হাজার এবং মহারানী স্বর্ণময়ী দেবী ৭০০ টাকা দান করেন। তাঁদের পাশাপাশি ঢাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী এবং জমিদার শ্রেণিও লাইব্রেরির জন্য অনেক টাকা দান করে। ওই টাকা দিয়ে কলকাতা, ত্রিপুরা, দিল্লি, বিলেত কিংবা ইউরোপ থেকে অনেক ইংরেজি রেফান্সের বই ও জার্নাল আমদানি করা হয়েছিল। এ কারণে লাইব্রেরিটি স্থানীয় লোকজন ছাড়াও বিদেশিরা ব্যবহার করত।
ফরাশগঞ্জের প্রায় শতবর্ষী হরিচরণ কর্মকার জানান, ব্রিটিশ আমলে লাইব্রেরিটি মূলত তৎকালীন পূর্ববঙ্গের জমিদারদের অর্থায়নে গড়ে ওঠে। তাঁদের সংগ্রহ থেকে অনেক পুরনো এবং মূল্যবান বই-জার্নাল সেখানে দান করা হয়েছিল। এমনকি তাঁদের দানেই লাইব্রেরিটির আলমারিসহ আনুষঙ্গিক আসবাব তৈরি করা হয়। বইয়ের পাতায় জমিদারদের সিলমোহর এবং আলমারির গায়ে তাঁদের নাম খোদাই করা ছিল। কিন্তু অব্যবস্থা আর অনাদরে সেই সব মূল্যবান বই ও আসবাবের বেশির ভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে।
লাইব্রেরিয়ান জাহিদুল আলম বলেন, পুরনো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে অনেক বইপুস্তক নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় চার হাজার বই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব বই ঠিক করার জন্য অনেক টাকা দরকার। এ ধরনের বাজেট সিটি করপোরেশনের না থাকায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে বাজেট পাওয়া গেলে লাইব্রেরি ভবন পুনর্নির্মাণ ও বইপুস্তকগুলো ঠিক করা সম্ভব হবে।
সম্পর্কিত খবর

ইউনিসেফের শোক
শিশুদের গোপনীয়তা রক্ষা ও দায়িত্বশীল সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ চলাকালে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত ও হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি বেঁচে যাওয়া শিশুদের পরিচয় ও গোপনীয়তা রক্ষা এবং দায়িত্বশীলভাবে সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল মঙ্গলবার শোক প্রকাশ করে ইউনিসেফ বাংলাদেশে তাদের ফেসবুক পেজে একটি বিবৃতি পোস্ট করে। বিবৃতিতে বলা হয়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতিসংঘের পতাকা অর্ধনমিত রেখে জাতির সঙ্গে শোক দিবস পালন করছে ইউনিসেফ।
আহতদের দ্রুত ও সম্পূর্ণ সুস্থতা কামনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানি হয়েছে, যার মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। আমরা আমাদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি সেই সব পরিবারের সদস্যদের প্রতি, যাঁরা তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

‘বোনের কাছে আমার লাশটা পৌঁছে দিয়ো’
বিশ্বজিৎ পাল বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মা সমিরন বেগম মারা গেছেন প্রায় ১৫ বছর আগে। একমাত্র ভাই থাকেন প্রবাসে। বাবা অসুস্থ। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।
শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন মাসুকা (৪০)। বিমান দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন।

মাইলস্টোনে অনভিপ্রেত ঘটনা নিয়ে যা বলল আইএসপিআর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর উত্সুক জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় উদ্ধারকাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। একদল উত্সুক জনতার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানিয়েছে আইএসপিআর।
আইএসপিআর জানায়, গত সোমবার দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়।
উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে দুর্ঘটনাস্থলে উত্সুক জনতার ব্যাপক ভিড় দেখা দেয়, যা ইভাকুয়েশন ও রেসকিউ কার্যক্রমকে বারবার ব্যাহত করে।
আইএসপিআর আরো জানায়, উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে বিকেলের দিকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু উত্সুক জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় উদ্ধারকাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।
ফলে একদল উত্সুক জনতার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়, যা এক পর্যায়ে একটি অনভিপ্রেত ঘটনার অবতারণা করে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে থেকে পেশাদারি ও সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধের সঙ্গে কর্তব্য পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

শেওড়াপাড়ায় আবাসিক ভবনে আগুন, ৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শেওড়াপাড়ার একটি চারতলা আবাসিক ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে আগুন লেগে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে আধাঘণ্টার মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ১৪ মিনিটে দক্ষিণ শেওড়াপাড়ার ৫৩২ নম্বর ভবনের আগুনের তথ্য পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৬টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।