ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

নতুন বছরে ঐতিহ্য সুরক্ষার শপথ নিন

  • এ কে এম শাহনাওয়াজ
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
নতুন বছরে ঐতিহ্য সুরক্ষার শপথ নিন

আমাদের মধ্যে একটি অদ্ভুত বৈপরীত্য রয়েছে। পৃথিবীতে যে কয়টি দেশ উজ্জ্বল ঐতিহাসিক তথা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধারণ করে গর্বিত, এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অথচ এ দেশের মানুষ সবচেয়ে কম ঐতিহ্যসচেতন। সাধারণ মানুষকে ঐতিহ্যসচেতন করে তোলার মতো শিক্ষিতজনেরও অভাব রয়েছে।

এর বড় কারণ আমরা ইতিহাস ও ঐতিহ্যচর্চা বিমুখ হয়ে পড়েছি। ইতিহাসের নানা পথ সম্পর্কেও আমাদের অস্পষ্টতা রয়েছে। ইতিহাস ও ঐতিহ্য সুরক্ষায় যাঁদের দায়িত্ব পালনের কথা তাঁরা সেই দায়িত্ব সব সময় পান না। ফলে ইতিহাসবিদের তকমাধারী কোনো কোনো প্রভাবশালী ইতিহাস-ঐতিহ্যের সর্ববিষয়ের নিয়ন্ত্রক হয়ে যান।
এটা অনেকটা হার্টের চিকিৎসায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগের দশা হয়ে পড়ে। সরকারের আমলা থেকে মন্ত্রী পর্যায় পর্যন্ত যাঁরা নীতি নির্ধারণ করেন, আর ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, তাঁদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণার অস্পষ্টতার কারণেও ঐতিহ্য সুরক্ষার চেয়ে ধ্বংসের পথই প্রশস্ত হচ্ছে বেশি।

কী ভয়ংকর বৈপরীত্য আমাদের। যেখানে উন্নত সভ্য দেশগুলো বিবেচনা করে একটি দেশের সবচেয়ে লাভজনক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ।

কারণ শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারলে তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের জন্য সম্পদে পরিণত হবে। অথচ এ দেশে বাজেটের ২-৩ শতাংশ বরাদ্দ থাকে শিক্ষা খাতে। শিক্ষকরা রুটি-রুজির দাবিতে অনশন করেন রাজপথে। এরই অনুষঙ্গে বলা যায়, সভ্য দেশগুলো জানে ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে পারলে যুগ যুগ ধরে নতুন প্রজন্ম পূর্বপুরুষদের গৌরবের ইতিহাস জেনে প্রাণিত হবে। আত্ম অহংকার তৈরি হবে।
এখান থেকেই উৎসারিত হবে দেশপ্রেম। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সারথি হবেন তাঁরা। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রকরা এসব ভাবতে চান না। তাঁরা চান হাতে হাতে ফল পেতে। কী করলে ক্ষমতার ভিত শক্ত হবে, উন্নয়ন দৃশ্যমান করে নির্বাচনের মাঠে ভোটারকে আবিষ্ট করে রাখা যাবে—এটিই হবে আরাধ্য। তাই অতিসম্প্রতি নির্দয়ের মতো রাজধানীর খামারবাড়ীর ঔপনিবেশিক যুগের কৃষি গবেষণার স্মারক সাক্ষী লাল ভবনটি ঐতিহ্যসচেতন মানুষের প্রতিবাদ আর আদালতের নির্দেশনা পাত্তা না দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো। বহুতল ভবন নির্মাণের গৌরবের কাছে ঐতিহ্যের অহংকার ম্লান হয়ে গেল। এখন আর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলা যাবে না এখানে উনিশ শতকে ফার্ম হাউস গড়ে তোলা হয়েছিল। কৃষিভিত্তিক এ দেশে উন্নত চাষাবাদের জন্য এখানে আধুনিক গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল সেই যুগে। এই লাল বাড়িটিতে প্রতিষ্ঠিত ছিল গবেষণার জন্য ল্যাবরেটরি।

এক দিনে তো নগর জীবনের উন্নয়ন ঘটেনি। পর্যায়ক্রমে এগিয়ে চলে সভ্যতা, আর এই পর্যায়গুলো হাজার বছর ধরে প্রজন্মের কাছে দৃশ্যমান করে প্রত্নসূত্রগুলো। স্থাপত্য, ভাস্কর্য, পোড়ামাটির অলংকরণ, মুদ্রা, শিলালিপি, তাম্রশাসন প্রভৃতির গায়ে জড়িয়ে থাকে হাজার বছরের এগিয়ে চলার ইতিহাস। এই প্রতীকী শক্তি ধ্বংস করার অর্থ ঐতিহ্যিক প্রেরণা থেকে প্রজন্মকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। কখনো লোভী চিন্তায়, আবার কখনো ঐতিহ্য জ্ঞানসম্পর্কিত মূর্খতার কারণে আমরা নানাভাবে মেতে থাকি ঐতিহ্য ধ্বংসে।

ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত বাংলাদেশের অন্যতম দুটি প্রত্ননিদর্শন পাহাড়পুর বিহার আর বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ। সম্ভবত ২০০০ সালে ইউনেসকোর অর্থ সহায়তায় এই দুই ঐতিহ্যিক স্থাপনার সংস্কার করা হয়। কোন বিশেষজ্ঞ কোন বিধিতে সংস্কারের নামে ধ্বংসে মেতেছিলেন আমি জানি না। পাহাড়পুর বিহার নানা ধরনের গৌরব ধারণ করে আছে। আট শতকের এই বিহারটি এর প্রত্ননিদর্শন দিয়ে নিশ্চিত করেছে যখন ইউরোপে প্রাইমারি শিক্ষার প্রাথমিক চর্চার সূচনাও হয়নি, তখন আমাদের দেশে গড়ে উঠেছিল আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিহারটির কেন্দ্রীয় মন্দিরের গা-জুড়ে ছিল প্রায় আড়াই হাজার পোড়ামাটির ফলকচিত্র। এগুলো শুধু আট শতকের শিল্পসৌকর্যের প্রকাশই করছিল না, চিত্রের মোটিফ ও বৈশিষ্ট্য বলে দিচ্ছিল বৌদ্ধ রাজাদের পরিচর্যায় সেই যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক সমাজ, যা বহন করেছে হাজার বছরের বাঙালি। কিন্তু এসব বিবেচনায় না রেখে, ঐতিহ্য সংরক্ষণের সাধারণ রীতি ও আইন অমান্য করে সংস্কারের নামে দেয়ালের গা থেকে তুলে ফেলা হয়েছিল পোড়ামাটির ফলক। রাখা হয়েছে পাঁচ ইঞ্চি ইটের টিনশেড গোডাউনে, যা দ্রুত নষ্ট হবে বা অন্য কোনো উপায়ে ‘সিস্টেম লস’ হয়ে যেতে পারে। এর বদলে লাখ লাখ টাকার টেন্ডারে ফলকের অনুকৃতি বা রেপ্লিকা বানিয়ে দেয়ালে লাগানো হয়েছে। আমাদের প্রতিবাদ-হৈচৈয়ের একপর্যায়ে কাজ বন্ধ হলে এখন ফলকহীন অর্ধনগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়পুর বিহার। অধুনা বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে সংস্কার করা হচ্ছে। জানি না এর পরিণতি কী হবে।

বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদটি সুলতানি শাসনযুগে গড়া। এমন অনন্যসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর মসজিদ দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না। এই মসজিদের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে আমদানি করা অনেক পাথরের স্তম্ভ বসানো ছিল। সুলতানি যুগে প্লাস্টারের ব্যবহার তেমনভাবে শুরু হয়নি। লাল ইটের চওড়া দেয়ালে ইমারত গড়া হতো। কিন্তু এবার সংস্কারের নামে মসজিদের অভ্যন্তর দেয়াল পুরো প্লাস্টারে আচ্ছাদিত করে সুলতানি যুগের বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে ফেলা হলো। ইট দিয়ে আচ্ছাদিত করে তোলা হলো পাথরের স্তম্ভ। শুনেছি এখন বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে আবার পূর্বরূপ ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি-দুটি নয়, আমাদের ঐতিহ্য ধ্বংসের এমন হাজারো উদাহরণ দেওয়া যাবে।

সম্প্রতি আবার ভয়ংকর দুঃসংবাদ এলো। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যিক ইমারতগুলো রক্ষা নিয়ে অনেক দিন থেকে রশি টানাটানি চলছিল। হাজারীবাগ থেকে শুরু করে গ্লোরিয়া পর্যন্ত আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার প্রত্ন ইমারত এখনো টিকে আছে। এগুলোর বেশির ভাগই ঔপনিবেশিক আমলের, আর কিছুসংখ্যক মোগল আমলের ইমারত। পুরান ঢাকাকে প্রত্নগুরুত্ব বিবেচনায় একটি ঐতিহাসিক শহর বলতে হবে। একসময় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পাঁচ শতাধিক ইমারত সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। এরপর ভবনের মালিকদের বিরোধিতা শুরু হয়। একপর্যায়ে নতুন তালিকা করার জন্য সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় নতুন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। আমি সেই কমিটিতে যুক্ত ছিলাম। প্রস্তাব রাখা হয়েছিল, নির্মাণ সৌকর্য বিবেচনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইমারত মালিকের সন্তুষ্টিমতো মূল্যে কিনে নিয়ে সংরক্ষণ করবে। আর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কোনো কোনো বাড়ির সামনের অংশটুকু সংরক্ষণ করে বাকি জায়গা অবমুক্ত করে দেওয়া হবে। এভাবে তালিকা ছোট করে ১০০-এর নিচে রাখা হয়েছিল। সম্প্রতি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে সরকার সত্তরের মতো বাড়ি তালিকায় রেখে গেজেট প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ বেশির ভাগ বাড়ি ভেঙে এখন পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নিঃশেষ করে দেওয়া যাবে।

এর প্রতিবাদে গত ২৩ ডিসেম্বর স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ ও ইতিহাসবিদদের সংগঠন যৌথভাবে নগরীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘স্বাধীনতা, ঐতিহ্য ও স্থাপত্য’ শিরোনামে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এখানে দেশের প্রথিতযশা স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসবিদ, নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সবাই এই ঐতিহ্য ধ্বংসকারী গেজেট বাতিল করে ঐতিহ্য রক্ষায় বাস্তব সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সরকারের কোনো কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে ঔপনিবেশিক আমলের ইমারত ভেঙে ফেলার কথা বলে থাকেন। তাঁদের বিবেচনায় এসব নাকি ইংরেজ শোষণের প্রতীক। এমন বালখিল্য বক্তব্য কোনো দায়িত্বশীল মানুষ দিতে পারেন না। এর প্রতিক্রিয়ায় গোলটেবিল বৈঠকে যৌক্তিকভাবেই একজন বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, এই যদি নীতি হয় তবে তো সংসদ ভবনও ভেঙে ফেলতে হবে। শোষক পাকিস্তানিদের সময় এই ইমারত নির্মাণ করা হয়েছিল। এটিও শোষণের প্রতীক!

শোষণ বা ভালোবাসা, সব ইতিহাসই ধারণ করে প্রত্ন ইমারত। প্রজন্মের কাছে সময়কে জীবন্ত রাখতে ঐতিহ্য রক্ষা করা জরুরি। ‘শোষণের’ প্রতীক ঔপনিবেশিক যুগের লাল দালান ভেঙে ফেলে কি আমরা ইতিহাসকে অস্বীকার করে বলব এ দেশে কখনো ইংরেজ শাসনযুগ ছিল না? আমি জানি না ইতিহাস ও ঐতিহ্যমূর্খ কাদের মাথায় এমন সব উর্বর চিন্তার চাষ হয়! মনে রাখতে হবে লাল দালান ইউরোপীয়দের নির্মাণ রীতিতে তৈরি নয়। মোগল-পূর্ব সুলতানি যুগে প্লাস্টার না থাকায় সেই সময়ের মসজিদগুলো ইটের রঙে লালচে। মোগলরা মার্বেলের পাশাপাশি লালচে বেলেপাথর ব্যবহার করত। তাই এসব ইমারত দেখতে কিছুটা লাল ছিল। ইংরেজ আমলে ইমারত নির্মাণে মোগল প্রভাব লক্ষ করা যায়। বাংলায় বেলেপাথর সহজলভ্য না হওয়ায় মোগল প্রভাবের কারণে ইটের ইমারতে লাল রঙের ব্যবহার করা হতো। সুতরাং বলা যায়, লাল ইমারতের জন্য সরকারি বিদ্বেষ তৈরির কোনো কারণ নেই।

আমি দেখেছি, পর্তুগালের এভোরা শহরকে কতটা যত্নে ঐতিহ্যিক শহর হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রাচীন ও মধ্যযুগের এই দুর্গনগরীর আদিরূপ বজায় রাখা হয়েছে। দুর্গের বাইরে আধুনিক শহরের বিস্তার ঘটেছে। দুর্গনগরীর ভেতরে গেলে মনে হবে টাইম মেশিনে যেন মধ্যযুগের নগরীতে ফিরে এসেছি। কিন্তু ভেতরে জীবন সচল। মানুষের ব্যবহারে রেখেই অতিযত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মধ্যযুগের বিশ্ববিদ্যালয় এখনো সচল এভোরা বিশ্ববিদ্যালয় নামে। স্কুল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, চার্চ, জাদুঘর পুরনো আদল নিয়ে সচল আছে। এসব কারণে পর্তুগালের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটননগরী হিসেবে জনপ্রিয় এভোরা।

আমার তো মনে হয় যথার্থ পরিকল্পনা নিতে পারলে পুরান ঢাকাকেও আমরা একটি ঐতিহাসিক অথচ জীবন্ত নগরী হিসেবে সংরক্ষণ করতে পারি। এতে অধিবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে লাভবান হতে পারে। পর্যটক আকর্ষক হতে পারে। মেধাবী পরিকল্পনায় ৪০০ বছর নয়, হাজার বছরের ঢাকা নগরীকে সেসব সময়ের আবহে রূপায়ণ করা যেতে পারে। কিন্তু আমাদের মতো দেশের বাস্তবতায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া এ ধরনের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ কঠিন। কিন্তু যে দেশে ঐতিহ্য গুঁড়িয়ে দিয়ে আধুনিক নগর বানানোর চিন্তা করা হয়, সে দেশে এসব চিন্তা স্বপ্নকল্পনারই নামান্তর।

হতাশ জাতি নিঃশেষ হয়ে যায়। মানুষই তো ঘুরে দাঁড়াতে পারে। অতীতের ব্যর্থতা ভুলে আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের বিধায়করা যদি এই নতুন বছরে জীর্ণ মনোজগৎ থেকে বেরিয়ে এসে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন এবং অনুধাবন করতে পারেন ঐতিহ্য রক্ষার গুরুত্ব, তবে আমরা সমৃদ্ধ অতীতের অহংকার নিয়ে দাঁড়াতে পারব।

লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

shahnawaz7b@gmail.com

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ