‘ইসলামী ব্যাংকগুলো একীভূত করে বড় দুটি ইসলামী ব্যাংক গড়ে তোলা হবে। ব্যাংক খাতের সংস্কার চলমান রাখতে রাজনৈতিক সমর্থন প্রয়োজন। রাজনীতির পালাবদল হলেও এসব সংস্কার চলতে হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে হবে।’ গভর্নরের এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আবার আলোচনায় এসেছে ব্যাংক একীভূতকরণ বা মার্জার।
আবারও আলোচনায় ব্যাংক মার্জার
মো. জয়নাল আবেদীন

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকগুলো একীভূত করে বড় দুটি ইসলামী ব্যাংক গড়ে তোলার মতো কোনো অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা অবসায়ন এবং মার্জারের আইন নেই। আমানতকারীরা কিভাবে টাকা ফেরত পাবেন, কত টাকা পাবেন, কত দিনে পাবে, কারা নতুন পরিচালক হবেন—এমন অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। আইন না থাকার কারণেই অবসায়ন করেও সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসতে হয়েছে পিপলস লিজিংয়ের বেলায়।
পিপলস লিজিংকে অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ২০১৯ সালে কম্পানিটির লেনদেন বন্ধ করা হয়েছিল। পরে এ অবসায়নের উদ্যোগের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ একটি পক্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালত অবসায়নের উদ্যোগ বাতিল করে কম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেন। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি যাতে ভালোভাবে আবার কার্যক্রম শুরু করতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) প্রয়োজনীয় সহায়তার আদেশ দেন। আদালতের ওই আদেশের ভিত্তিতি বিএসইসির সম্মতিক্রমে শেয়ারবাজারে কম্পানিটির লেনদেন আবার চালুর উদ্যোগ নেয় ডিএসই। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পেরে ২০২৪ সালে ফের চালু করা হয় কম্পানিটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া ব্যাংক মার্জারের উদ্যোগ আপাতত বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করার কাজ করছে সংস্থাটি। তবে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ বা বন্ধও হয়ে যেতে পারে একাধিক ব্যাংক।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মতে, ‘আইডিবি চার্টারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশের সব ব্যাংক ক্রমান্বয়ে ইসলামী ব্যাংক হতে বাধ্য। বাংলাদেশে শুধু দুটি শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক চলবে—আমি তার বিপক্ষে।’
গত বছরের ৪ এপ্রিল ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগেই বেসরকারি পদ্মা ব্যাংককে শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা আসে। ব্যাংক দুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়ে সমঝোতা চুক্তিও করে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর পরিবর্তন এসেছে পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে। পদ্মা ব্যাংকের নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হলেও এখন এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ হতে রাজি নয় পদ্মা।
৪ এপ্রিল প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্ক (পিসিএ) নামের একটি নীতিমালাও জারি করা হয়। ব্যাংক কমানোর এমন উদ্যোগের উদ্দেশ্য ভালো হলেও পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে পুরো প্রক্রিয়াই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। ওই সময় ব্যাংক মার্জারের সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ভীত গ্রাহকদের আমানত তোলার হিড়িক এবং ব্যাংকের পরিচালকসহ প্রভাবশালীদের চাপের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেষ পর্যন্ত পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক এমডি ও জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার আনিস এ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দেশে আসলে এত ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। অডিট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু ব্যাংক আসলেই মার্জ করে দেওয়া উচিত। তবে কাজটি সময়সাপেক্ষ। অন্তত দুই বছর প্রয়োজন। আগের সরকার ব্যাংক মার্জারের উদ্যোগ নিলেও তা পরিকল্পিত ছিল না। তাই তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন বর্তমান সরকার যদি মার্জের কথা ভাবে তাহলে এই প্রক্রিয়ার জন্যই আলাদা একটি টাস্কফোর্স গঠন করা দরাকার।’
এদিকে ভিন্নমত দিয়েছেন ড. মুস্তফা কে মুজেরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ব্যাংক মার্জারের মতো এমন শক্ত পদক্ষেপ দ্রুত নেওয়া উচিত। এটি সঠিকভাবে আমরা যদি না নিতে পারি তাহলে দুর্বল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ দীর্ঘসূত্রতায় আবদ্ধ হবে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।’
উল্লেখ্য, গত দেড় দশকে সীমাহীন লুটপাটের শিকার হয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। ঋণের নামে ডজনখানেক ব্যাংক থেকে এস আলম, বেক্সিমকোসহ গুটিকয় শিল্পগোষ্ঠী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। লুটপাটের শিকার হওয়া ব্যাংকগুলোর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ১৪ ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তীব্র তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা ব্যাংকগুলোকে নগদ আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। উল্টো খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন গুণ।
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স