চট্টগ্রাম নগরের চট্টেশ্বরী সড়ক লাগোয়া বড় নালাটির ধার ঘেঁষেই চলতে হয় শত শত মানুষকে। সড়কের পাশেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আছে বহু আবাসিক এলাকাও। নালাসংলগ্ন সড়কে চলাচলে তাই ভিড়ের কারণে বা অন্য কারণে পড়ে গেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকছেই।
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতায় প্রাণহানি
১৩ হাজার কোটির তিন প্রকল্পে ধীরগতি, দুই সংস্থায় সমন্বয়হীনতা
- সাড়ে আট বছরে খাল-নালায় পড়ে ১৩ জনের প্রাণহানি
নূপুর দেব, চট্টগ্রাম

সর্বশেষ গত শুক্রবার নগরের কার্পাসগোলায় ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে হিজড়া খালে পড়ে ছয় মাসের সেহরিশের প্রাণহানি ঘটে। খালটিতে পড়ার ১৪ ঘণ্টা পর কয়েক কিলোমিটার দূরে চাক্তাই খালের চামড়া গুদাম এলাকা থেকে সেহরিশের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই করুণ প্রাণহানি নিয়ে আবারও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর তদারকি তেমন জোরদার নয়।
গতকাল রবিবার সকালে নগরের চশমাহিলের পাশে চশমাখাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খালের পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এসব বাঁশের ফাঁক দিয়েই লোকজন ভেতরে ঢুকছে। সেখানে চলাচলকারী রহিম উদ্দিন বলেন, খালে কয়েক বছর আগে অটোরিকশা পড়ে দুজন মারা গিয়েছিল। খালের পাশে শক্ত প্রতিরোধক া গড়ে না তুলে কিছু বাঁশ দিয়ে দায়সারা কাজ করা হয়েছে। প্রশ্ন করা হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর চেয়ারম্যান বলেন, সিডিএর সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খালের মধ্যে ২৪টির কাজ শেষ হয়েছে। গত শুক্রবার যেখানে দুর্ঘটনা (হিজড়া খাল) ঘটেছিল ওই খালসহ ১২টি খালের কাজ শেষ হয়নি। তবে ওই স্থানে বাঁশ দিয়ে বেষ্টনী দেওয়া ছিল। কিন্তু কে বা কারা সেখান থেকে বাঁশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল। সিডিএর সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কাজ যেখানে হচ্ছে সবখানে রিটেইনিং ওয়াল ও রেলিং দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেছেন, গত শুক্রবারের দুর্ঘটনাটি দুঃখজনক।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেল বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। সিডিএ ৩৬টি খালের কাজ যেখানে করছে সেখানে আমরা (চসিক) কাজ করছি না। এর বাইরে নালা-নর্দমা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও একটি নতুন খাল (বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত) করছি আমরা। তবে রাস্তার পাশে খাল-নালা-নর্দমা যেখানে আছে সেসব স্থানে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়ার জন্য প্রকল্প নেওয়া হবে।
প্রকল্প বেহাল : নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনটি মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে দুটি সিডিএ ও একটি চসিকের অধীনে। সিডিএর বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হয়ে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প ২০১৭ সালের জুনে নেওয়া হয়। দুই হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প আট বছরে শেষ হয়নি। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। আগামী জুন থেকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল খনন, পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়নে সিডিএর আরো এক প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে আট হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্পও প্রায় আট বছর আগের। এটিরও মেয়াদ শেষ হবে আগামী জুনে। প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ শতাংশ। অন্যদিকে চসিকের বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২.৯ শতাংশ দৈর্ঘ্য ও ৬৫ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট নতুন খাল খনন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের জুন মাসে নেওয়া এই প্রকল্পে এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে ওই তিন মেগাপ্রকল্পে গড়ে ৮০ শতাংশ কাজ হয়েছে।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’