প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে প্রায় আবাদহীন হয়ে পড়েছিল উপকূলের বিভিন্ন জেলার কৃষিজমি। খুলনা জেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে তরমুজ চাষ। জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চার হাজার হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। শুধু খুলনা জেলা থেকেই ৫০০ কোটি টাকার বেশি তরমুজ বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
তরমুজের বাজার চার হাজার কোটি টাকার
- উপকূলের লবণাক্ত জমিতে লাল সোনা তরমুজ
- একক জেলা হিসেবে উৎপাদনে শীর্ষে খুলনা
সাইদ শাহীন (ঢাকা) ও এইচ এম আলাউদ্দিন (খুলনা)

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেছেন, চলতি সপ্তাহেই মৌসুমের তরমুজ সংগ্রহ ও বিক্রি শুরু হবে। তরমুজ আবাদে খরচের তিন গুণ আয় হয়। প্রতি একর জমিতে সব মিলিয়ে লাখ টাকার মতো খরচ হলেও বিক্রি হয় তিন লাখ টাকার ওপর, যা অন্য ফসলে খুব কমই হয়।
ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর মাটি-পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দক্ষিণাঞ্চলে ধান উৎপাদন কমতে থাকে। চিংড়িঘেরের প্রবণতা শুরু হলে ধানের উৎপাদন আরো কমে। লবণাক্ততায় শুকনো মৌসুমে কৃষিজমি পড়ে থাকত অনাবাদি।
খুলনার ২ নম্বর দাকোপ ইউনিয়নের কৃষক তরুণ মণ্ডল জানান, অন্যের জমি ইজারা নিয়ে তিনি তরমুজের চাষ করেন।
দেশে অফ সিজনে সোনালি বর্ণের বিদেশি গোল্ডেন ক্রাউন, ব্ল্যাকবেরি ও বাংলালিংক তরমুজের চাষ বাড়ছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির পাশাপাশি কৃষকরা তরমুজের চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। গ্রীষ্মকালীন বেরি তরমুজের চাষ করে কম খরচে অধিক লাভবান হচ্ছেন। মৌসুমি তরজুমের মতো বেশি ফলন না হলেও প্রতি হেক্টরে ৪০ টন তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথাগত তরমুজের চেয়ে ব্ল্যাকবেরি ও গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ দুই-তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করা যায়। বীজ বপনের দুই মাসের মাথায় ফল পাওয়া যায়। এই তরমুজ প্রতি বিঘায় এক লাখ টাকার বেশি মুনাফা দিচ্ছে কৃষকদের।
এভাবেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তরমুজের আবাদ। মৌসুম ও অমৌসুমে পাওয়া যাচ্ছে তরমুজ। ফসলোত্তর ক্ষতি বাদ দিয়ে দেশে তরমুজের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টন। সরকারি ও বাজারের তথ্য মতে, তরমুজের দাম ৫৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যেই ওঠানামা করে। প্রতি কেজির দাম ৫৫ টাকা করে হিসাব করলেও তরমুজের বাজার ছাড়িয়েছে তিন হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। আর গড় দাম ৬৫ টাকা হিসাবে নিলে বাজার চার হাজার ২২৫ কোটি টাকার। ফলে গড় হিসাবে দেশে তরমুজের বাজার এখন চার হাজার কোটি টাকার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জেলায় এবার ১২ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে। রবি জাতের এই তরমুজ চাষ ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে সংগ্রহ করা হয়। বাজারে ভালো দামের কারণে এবার কৃষক বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছি।’
এক মাসের মধ্যেই তরমুজ বিক্রি শেষ হবে। তবে এ অঞ্চলের দুটি উপজেলায় অফ সিজনে বেশ ভালো তরমুজের উৎপাদন হয়। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষকরা অফ সিজনে তরমুজ আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। সিডর, আইলা, আম্ফানসহ নানা প্রাকৃতিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মধ্যে বেড়ে ওঠা খুলনার উপকূলবাসীর জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে তরমুজ।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’