গেল বছর বর্ষা মৌসুমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে এক জরিপের মাধ্যমে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪৪টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার জন্য অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এরপর চিকুগুনিয়ার বিস্তার আরো ব্যাপক হয়ে উঠেছিল। এ নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সেদিকে নজর রেখে এবার শুকনা মৌসুমে এডিস মশার প্রভাব খুঁজতে শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শুকনাকালেই চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর ১৯ রেড জোন!
তৌফিক মারুফ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা জানান, আসন্ন বর্ষায় পরিস্থিতি আরো খরাপ হয়ে ওঠার আশঙ্কাই বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা কালের কণ্ঠকে বলেন, জরিপের সময় দেখা গেছে, শুধু ডাবের খোসা, ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার বা ছোটখাটো পাত্রই নয়, নির্মাণাধীন বা পরিত্যক্ত ভবন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের পরিত্যক্ত পরিবহনের মতো নতুন স্বচ্ছ পানি জমাট থাকার ক্ষেত্র চিহ্নিত হচ্ছে, যেখানে এডিস মশার লার্ভা বা প্রজননঘাঁটি সৃষ্টি হচ্ছে।
সানিয়া তহমিনা আরো বলেন, ‘বৃষ্টি-ঠাণ্ডা-গরম অর্থাৎ তাপমাত্রার ওপরও মশার প্রজনন এবং বিস্তারের বিষয়টি নির্ভর করে। আমাদের দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ এডিস মশার প্রজনন সহায়ক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ডা. আকতারুজ্জামান সোহেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা আসন্ন বর্ষার দিকে খেয়াল রেখেই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে শুকনা মৌসুমে এডিসের অবস্থা কেমন থাকে, তা দেখতে চেয়েছিলাম। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে দেখতে পেলাম ৯২টি ওয়ার্ডের ১০০টি এলাকার মধ্যে ১৯টিতে এডিসের বিস্তার এতই বেশি যে এসব এলাকা সহজেই চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ হওয়ার উপযুক্ত। আর সেখান থেকে বর্ষায় ওই পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হতে পারে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মশা নিয়ে মানুষের যত উৎকণ্ঠা আছে সে অনুসারে মানুষের মধ্যে মশার উৎস নিধনে তেমন কোনো সচেতনতা নেই। ফলে অনেক বাসাবাড়ি বা স্থাপনাতেই এডিস মশা বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ দেখতে পেয়েছি। সেই সঙ্গে ছিল লার্ভা ও পিউপার উপস্থিতি, যা থেকেই মূলত বড় মশার বিস্তার ঘটে। শুধু বাসাবাড়ি নয়, পরিত্যক্ত ও নির্মাণাধীন ভবন, পরিত্যক্ত গাড়ি, টায়ারসহ নানা ধরনের পরিত্যক্ত জিনিসপত্র এডিস মশার ঘাঁটিতে পরিণত হয়ে আছে।’
মশা-লার্ভা ঘুরচক্কর!
ওই জরিপের মাধ্যমে আরেকটি বিষয় বড় হয়ে উঠেছে বিশেষজ্ঞদের সামনে। আগে মুরগি না ডিম—এ ঘুরচক্করের মতো দেশে তৈরি হয়েছে মশা ও লার্ভা নিয়ে আরেক ঘুরচক্কর! মশার উত্পাত থেকে বাঁচতে মশা মারা নিয়েই চলে যত হৈ-হুল্লোড়। বাজার সয়লাব স্প্রে আর কয়েলে। সরকারের দিক থেকেও সাধারণ মানুষ আশা করে মশা নিধনের দৃশ্যমান কার্যক্রম। তবে মশার আগে লার্ভার দিকে যেন কোনো নজরই নেই সাধারণ মানুষ কিংবা কর্তৃপক্ষের। নামমাত্র কিছু কার্যক্রম চলে। ফলে উড়ন্ত মশা নিধন হলেও লার্ভা থেকে ঠিকই আবার মশা জন্ম নিয়ে ভরে যায় সব দিক। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সঙ্গে মশা আর লার্ভা নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে, নয়তো কখনো কার্যকর সাফল্য পাওয়া যাবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহাবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মশা যেহেতু মানুষকে কামড়ায়, তাই সবাই সাধারণত মশা নিধনেই বেশি নজর রাখে। কিন্তু এই মশার চেয়ে যে লার্ভা নিধন বেশি জরুরি, তা মানুষ বুঝতে পারছে না। লার্ভা হয়তো কামড়াতে পারে না বলেই এমন অসচেতনতা হতে পারে।’
ওই কীটতত্ত্ব বিজ্ঞানী বলেন, দেশেই লার্ভা নিধনে লার্ভিসাইড আর বড় মশা নিধনে অ্যাডাল্টিসাইড রয়েছে। যদি নিয়ম মেনে লার্ভিসাইড প্রয়োগ করা যায়, তবে মশা এমনিতে কমে যাবে। মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে যে সংস্থাগুলো আছে, তাদের এই বিষয়ে আরো বেশি নজর দেওয়া উচিত।
অন্যদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর সূত্র জানায়, গত বছর এক গবেষণায় দেখা যায় যে পুলিশের হাতে আটক যেসব যানবাহন ও অন্যান্য সামগ্রী খোলা জায়গায় রাখা হয়েছে, সেখানে বৃষ্টির পানি জমা আছে। এ ছাড়া নৌবন্দর, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরেও একইভাবে খোলা জায়গায় পড়ে থাকা যানবাহন, কনটেইনার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে বৃষ্টির পানি জমে মশার প্রজনন সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি ভবনের ছাদ ও কার্নিশে বৃষ্টির পানি জমতে পারে। গাছের কোটর ও বড় পাতার ভাঁজে পানি জমতে পারে। ব্যক্তিগত বাগান, খামার, পার্ক, রাস্তার পাশের ঝোপঝাড় ও গাছপালায় বিভিন্নভাবে স্বচ্ছ পানি জমার পরিবেশ থাকতে পারে, যা এডিস মশার উপযুক্ত প্রজননক্ষেত্র। তাই এসব ব্যাপারেও সর্তক থাকা প্রয়োজন।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার কারণে এডিস মশা নিয়ে আলোচনা বেশি। তবে দেশে মোট ১২৩ প্রকার মশা রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিপ্তরের এক সভায় জানান, সবাই এডিসসহ সাধারণত চার থেকে পাঁচ প্রকারের মশা নিয়েই বেশি আলোচনা করে থাকে। অন্য অনেক মশার ক্ষতিকারক দিক ও গতিবিধি এখন পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স