<p>মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার চালু হওয়ার আগে আশা ছিল ওই এলাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে যানজটের ভোগান্তি থেকে এটি মুক্তি দেবে মানুষকে। কিন্তু ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর প্রতিনিয়ত এর ওপরে-নিচে যানজট লেগে থাকায় সেই আশা হতাশায় রূপ নিচ্ছে। গাড়িচালক, যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ফ্লাইওভারে উঠলেও যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে, আবার নিচেও যানজট বেড়েছে।</p> <p>গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টায় নিউ ইস্কাটনে এসপিআরসি হাসপাতালের সামনে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে বসে ছিলেন ফার্মগেটমুখী আয়াত পরিবহনের একটি বাসের চালক আব্দুল হাই। বাসভর্তি যাত্রী নিয়ে এক জায়গায় তিনি প্রায় ২৫ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছিলেন কখন যানজট ছাড়বে। আয়াত পরিবহনের ওই বাসের মতো আরো শত শত যানবাহন বাংলামোটর থেকে নিউ ইস্কাটন পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল। চালক আব্দুল হাই কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলামোটর সিগন্যাল থেকে ইস্কাটনের এসপিআরসি হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। এই রাস্তায় আমার গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা প্রায় আট বছরের। বাংলামোটর থেকে কোনো দিন এ পর্যন্ত জ্যামে পড়তে হয়নি। কিন্তু এ সপ্তাহে প্রায় দিনই এ রকম জ্যামে পড়তে হচ্ছে। আগে বাংলামোটর সিগন্যাল থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ গজ পর্যন্ত জ্যাম লাগত। কিন্তু ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর থেকেই এই জট প্রায়ই এ রকম আকার ধারণ করে।’</p> <p>মৌচাক থেকে ফ্লাইওভারের যে অংশ নিউ ইস্কাটনে নেমেছে তার প্রায় পুরোটাতেই যানজট। ওই এলাকার মোটরসাইকেল মেকানিক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগে কখনো বাংলামোটর থেকে নিউ ইস্কাটন পর্যন্ত যানজট হতো না। ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর থেকেই ভয়াবহ যানজট হচ্ছে এ এলাকায়। এখন ফ্লাইওভারেও জট, নিচেও জট। এই ফ্লাইওভার আরো ভোগান্তি বাড়াচ্ছে।’</p> <p>মোটরসাইকেল নিয়ে ইস্কাটন ফ্লাইওভারের প্রায় দেড় শ গজ ওপরে অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি রামপুরা থেকে আগে আধাঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছতাম। ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর একদিন মালিবাগ-চৌধুরীপাড়া ফ্লাইওভার থেকে মৌচাক হয়ে ইস্কাটনে এসেছিলাম প্রায় এক ঘণ্টায়। এরপর আর ফ্লাইওভারে উঠিনি। আজ আবার ভুল করে ফ্লাইওভারে উঠেছি। এখানে বসে আছি আধাঘণ্টা ধরে। আরো আধাঘণ্টায় বাংলামোটরে পৌঁছাতে পারব কি না, সন্দেহ আছে।’ ওই অংশে দেখা যায়, নিউ ইস্কাটন থেকে ফ্লাইওভারের ওপরের যানজট মগবাজার ছেড়ে গেছে।</p> <p>বিকেল ৩টার দিকে মৌচাক থেকে শুরু করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন পর্যন্ত যানজটের ভয়াবহ চিত্র লক্ষ করা গেছে। ফ্লাইওভারের যে অংশটি রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নেমেছে, সেই অংশে যানজটের কারণেই এ জট সৃষ্টি হয়েছে। নিউ ইস্কাটন দিয়ে ফ্লাইওভারে উঠে যানজটে আটকে পড়া প্রাইভেট কারের চালক হুমায়ন আহমেদ বলেন, ‘ওঠার সময় বেশ সহজ ছিল। ফ্লাইওভারে মাঝামাঝি এসেই জট লাগছে। আমি প্রায় এক ঘণ্টায় এখানে এসে পৌঁছলাম।’</p> <p>মালিবাগ মোড়ে ফ্লাইওভারের নিচে সায়েদাবাদগামী বলাকা পরিবহনের একটি বাসের চালক মুরাদ মিয়া বলেন, ‘ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ চলায় কয়েক বছর মগবাজার, মৌচাক ও মালিবাগ এলাকায় ভয়াবহ যানজট হতো। আমরা ভেবেছিলাম ফ্লাইওভার চালু হলে সেই কষ্ট আর থাকবে না। কিন্তু এখন দেখছি উল্টো। এখন রাজারবাগ অংশে ফ্লাইওভার থেকে গাড়ি নামার সময় জট লাগছে। ওই জটের ধাক্কা মৌচাক পর্যন্ত আসছে। এক দিকে রামপুরা ও মগবাজারের দিক থেকে আসা গাড়ির চাপ, আবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ফ্লাইওভারের জটের কারণে মৌচাকের যানটজ ঠেকছে ওয়্যারলেস গেট পর্যন্ত।’</p> <p>দুপুরের পর ফ্লাইওভারের হলি ফ্যামিলি অংশ থেকে উঠে সোনারগাঁও হোটেলের দিকের অংশে দেখা যায় যানজট। সোনারগাঁও হোটেলের সামনে থেকে যানবাহনের জট গিয়ে ঠেকেছে ফ্লাইওভারের হাতিরঝিল অংশে। নিচের সড়কেও একই অবস্থা। কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আবদুল কাদের বলেন, ‘ফ্লাইওভার চালুর পর থেকে এ সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নিচের সড়কে আগে গাড়ির চাপ থাকত, তবে এতটা যানজট হতো না। এখন ফ্লাইওভারেও জট, নিচের সড়কেও জট।’</p> <p>শান্তিনগর এলাকায় সব সময়ই যানজট থাকে। গতকাল সকাল ১০টার একটু আগে ওই এলাকায় আরো প্রকট আকারের যানজট চোখে পড়ে। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্লাইওভারের শান্তিনগর এলাকার র‌্যাম্প দিয়ে গাড়ি সহজেই উঠতে পারছে। কিন্তু গাড়ি নেমে আসার সময় ভয়াবহ জ্যাম হচ্ছে। বেইলি রোড ও পুলিশ লাইনের দিকে শান্তিনগর সড়কের এ এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। এখন এ জটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফ্লাইওভার থেমে নেমে আসার জট।’ ওই এলাকার বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইকবাল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি সাধারণত রিকশা নিয়ে শান্তিনগর থেকে মত্স্য ভবনে আসি। এ জন্য সর্বোচ্চ ২০ মিনিট সময় ব্যয় হয়। ফ্লাইওভারের কারণে শান্তিনগর এলাকায় যানজট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করায় আজ প্রায় এক ঘণ্টা লেগেছে মত্স্য ভবনে পৌঁছতে।’</p> <p>ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন কিছু সমস্যা হলেও ফ্লাইওভার হওয়ার পর উপকারই বেশি। এই ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর সড়কে অনেক স্পেস তৈরি হয়েছে। নতুন জায়গা তৈরি হওয়ার পর কোনো কোনো জায়গায় যানবাহন হালকা হয়ে গেছে। এটা একটা সুবিধা। তবে ওঠানামার সময় কিছু সমস্যা হচ্ছে। এটা বাস্তবতা। এটা থাকবেই। তবে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। এ জন্য একটা নীতিমালা করা হয়েছে।’</p>