<p>আলোকিত ১০ তরুণ-তরুণী। ওঁদের মধ্যে আছেন সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের সন্তানও। বিস্তর বাধা অতিক্রম করে স্বপ্ন দেখেছেন, আলোকিত হয়েছেন। সেই স্বপ্ন আর আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য তরুণের মধ্যেও। কেউ কাজ করেছেন সামাজিক উন্নয়নে, কেউ বা সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার উন্নয়নে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা স্বপ্নবান, উদ্যমী, আত্মবিশ্বাসী ১০ তরুণ-তরুণী ও তাঁদের সংগঠন এবার পেল জয় বাংলা ইয়থ অ্যাওয়ার্ড।</p> <p>আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য তাঁদের এই পুরস্কার দিয়েছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) ও ইয়াং বাংলা। বিজয়ী সংগঠন ও উদ্যোক্তার হাতে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার বিকেলে অ্যাওয়ার্ড তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।</p> <p>পুরস্কারপ্রাপ্তদের একজন হান্না হেমরম। গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত মেয়েরা ফুটবল খেলবে, জায়গা করে নেবে জাতীয় দলে, অনেকের কাছেই তা সুদূরকল্পনা। সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে আসেন সুবিধাবঞ্চিত তরুণী হান্না। মেয়েদের ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে রংপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রাঙ্গাটুঙ্গি ইউনাইটেড উইমেন ফুটবল একাডেমি। ২৩ সদস্যের এই নারী ফুটবল ক্লাবটি নিবিড় প্রশিক্ষণ ও টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় দলে খেলেন এই ক্লাবের দুজন সদস্য। নারীর ক্ষমতায়ন</p> <p>ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে এই অঞ্চলে বড় ভূমিকা পালন করছে ক্লাবটি।</p> <p>সিলেটের সাংস্কৃতিক সংগঠন থিয়েটার মুরারি চাঁদ। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে বিশ্বাসী এই সংগঠন। স্বপ্নবান তরুণ গোলাম মাহদীর নেতৃত্বে ২০১৩ সালে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ১৭৫ জন। সংগঠনটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে সিলেট কেসি কলেজের অডিটরিয়াম ও শহীদ মিনার সংস্কারে অবদান রেখেছে। সংগঠনটির প্রযোজনায় ১২টি পথনাটকসহ ১৮টির বেশি নাটক সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মঞ্চস্থ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রাণিত হয়ে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য গোলাম মাহদী ও তাঁর সংগঠন পেয়েছে জয় বাংলা ইয়থ অ্যাওয়ার্ড।</p> <p>ঠাকুরগাঁওয়ের সামাজিক সংগঠন ‘আই পজিটিভ’-এর পথচলা শুরু ২০১১ সালে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমাজ গঠনের ইচ্ছা থেকে আলোকিত তরুণ শফিক পারভেজ পরিচিত কয়েকজনকে নিয়ে সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করেন। শিশু-কিশোর ও তরুণ-যুবাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, চেতনা, বিশ্বাস ও ভিত্তি ছড়িয়ে দেওয়া তাদের মূল কাজ। শফিক পারভেজ বিশ্বাস করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবে দেশের তরুণসমাজ। আর এ কারণেই তাঁর সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুক্ত আলোচনা, প্রতিযোগিতা ও সেমিনারের আয়োজন করে থাকে। এর পাশাপাশি আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ক্যারিয়ার প্ল্যান বিষয়ক সেমিনার, মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ, পরামর্শ প্রদানসহ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে আই পজিটিভ। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনেও নানা কাজ করছে সংগঠনটি। নতুন প্রজন্মকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, নৈতিক মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সামাজিক উন্নয়ন বিভাগে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মো. শফিক পারভেজ ও তাঁর সংগঠন।</p> <p>জয় বাংলা ইয়থ অ্যাওয়ার্ড প্রদান ও আলোকিত তারুণ্যকে উৎসাহ দিতে সাভারে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইয়থ সেন্টারে আয়োজিত হয় দুই দিনের অনুষ্ঠান। শেষ দিনে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিজয়ী সংগঠন ও উদ্যোক্তাদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি শুভেচ্ছা পুরস্কার দেওয়া হয় ২০টি সংগঠন ও উদ্যোক্তাদের।</p> <p>তিনটি বিভাগে ১০টি সেরা সংগঠনকে দেওয়া হয় জয় বাংলা ইয়থ অ্যাওয়ার্ড—সমাজ উন্নয়ন কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কার্যক্রম ও ক্রীড়া উন্নয়ন কার্যক্রম। সামাজিক উন্নয়নের জন্য পুরস্কার পায় সেরা পাঁচটি সংগঠন। সেগুলো হলো যশোরের স্বপ্ন দেখো সমাজকল্যাণ সংস্থা, বরিশালের ইয়থ সোসাইটি, কুমিল্লার দুর্বার ফাউন্ডেশন, সিলেটের কাকতাড়ুয়া ও ঠাকুরগাঁওয়ের আই পজিটিভ। সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার পেয়েছে তিনটি সংগঠন। সেগুলো হলো রাঙামাটির জুমফুল থিয়েটার, সিলেটের থিয়েটার মুরারিচাঁদ ও বগুড়ার চৌপাশ নাট্যাঞ্চল। ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য পুরস্কার পায় দুটি সংগঠন ঠাকুরগাঁওয়ের রাঙাটুঙ্গি ইউনাইটেড উইমেন ফুটবল একাডেমি ও গাজীপুরের হুইলচেয়ার ক্রিকেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।</p> <p>সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘অ্যাওয়ার্ডজয়ী তরুণদের দেখে ও তাঁদের বিজয়ের গল্প শুনে আমার ভীষণ গর্ব হচ্ছে। তাঁদের দেখে আমি নিজেও অনুপ্রাণিত।’ তরুণরাই আগামীর নেতৃত্ব দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল না। কোনো স্বপ্ন ও আদর্শ ছিল না। স্বাধীনতার চেতনা না থাকলে তরুণদের মাঝে দেশপ্রেম ও আত্মবিশ্বাস থাকে না। তরুণদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ফিরে এসেছে। তাই তারা আত্মবিশ্বাসী। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে, সোনার বাংলা গড়তে তরুণরা নিরলসভাবে কাজ করছে। তাদের সাফল্যকে যেন কেউ ব্যাহত না করে তার জন্য সজাগ থাকতে হবে।’</p> <p>আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে জয় বলেন, ‘আট বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। এই অল্প সময়ের মধ্যে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে এখন বলা হয় শাইনিং স্টার।’</p> <p>সুধীসমাজের সমালোচনা করে জয় বলেন, ‘কিছু লোক আছেন যাঁরা ছবি তুলে বিদেশে বাংলাদেশকে দেখিয়ে এনজিওর নামে টাকা আনতেন। এটা ছিল তাঁদের ব্যবসা। তাঁরা কি প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো কাজ করেছেন? তাঁরা কি মেয়েদের ফুটবল খেলা শিখিয়েছেন? তাঁরা তো টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।’</p> <p>বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সারা দেশের প্রান্তিক জনগণের জন্য যেসব সংগঠন ও তরুণ-তরুণী নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁদের গল্পগুলো তুলে আনার চেষ্টা থেকে এই পুরস্কারের আয়োজন করা হয়েছে। এ কাজের মধ্য দিয়ে এরই মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার তরুণ-তরুণী সরাসরি ইয়াং বাংলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এই পুরস্কার পেল তাদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। তারা আরো বড় পরিসরে কিভাবে কাজ করতে পারে সেই সহায়তাও দেওয়া হবে।</p> <p>অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয় বিজয়ী ১০ সংগঠনসহ সেরা সংগঠনের প্রধানদের হাতে একটি করে ল্যাপটপ, ক্রেস্ট ও স্মার্ট ফোন তুলে দেন। এর আগে গত শুক্রবার তাঁদের হাতে ইয়াং বাংলা ও সিআরইর পক্ষ থেকে সনদ তুলে দেওয়া হয়।</p> <p>জয় বাংলা ইয়থ অ্যাওয়ার্ড আবেদনপত্র আহ্বানের পর সারা দেশের ৪৪টি শহর ও ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো হয়। আবেদন জমা পড়ে এক হাজার ৩০০ প্রতিষ্ঠান থেকে। প্রাথমিকভাবে ১০০ প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করা হয়। সেখান থেকে শীর্ষ ৫০টি প্রতিষ্ঠান রাখা হয়। পরের পর্যায়ে নির্বাচন করা হয় ৩০টি সংগঠনকে। শেষ দিনে গতকাল ৩০ প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে ১০টিকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।</p> <p> </p>