<p>কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করেই আজ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে যাচ্ছে বিএনপি। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের ধারাবাহিক ওই বৈঠকে দলটির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লিখিত কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হবে।</p> <p>এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়টি। বলা হবে, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। এ জন্য সরকারকে যাতে কমিশনের পক্ষ থেকে তাগিদ দেওয়া হয় এ বিষয়টিই বিএনপি বৈঠকে তুলবে। তবে সহায়ক সরকারের রূপরেখা কমিশনকে তারা দেবে না।</p> <p>সূত্র মতে, এর বাইরে, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনকালে বিচারিক ক্ষমতা (ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার) দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি ২০০৮ সালের আগের সীমানা অনুযায়ী নির্বাচন করার প্রস্তাব এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতিরও বিরোধিতা করবে তারা।</p> <p>বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, মোটা দাগে এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হচ্ছে এগুলোই। এর বাইরে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কিছু ব্যাপারে তাঁরা সংশোধনীর প্রস্তাব দেবেন।</p> <p>মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধিদলটি আজ সকাল ১১টায় কমিশনে যাবে। কমিশন থেকে ১০ সদস্যের কথা বলা হলেও প্রতিনিধিদলের সদস্য সংখ্যা দু-একজন বাড়তে পারে। কমিশনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে দলটির সর্বশেষ বৈঠক গতকাল সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>মির্জা ফখরুল ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, আবদুল হালিম ও স ম জাকারিয়া এ দলে থাকবেন।</p> <p>প্রত্যাশা নেই যে কারণে...</p> <p>কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির অধিকাংশ নেতা জানিয়েছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসি কোনো উদ্যোগ নেবে না বা নিতে সক্ষম হবে না—এটি জেনেই তাঁরা যাচ্ছেন। কারণ হলো—বিএনপি নির্বাচন চায় না বা ভণ্ডুল করতে চায় এ বার্তা যাতে জনগণের কাছে না যায়। বিশেষ করে সরকার যাতে বলতে না পারে, বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায় না। দলটির নেতাদের মতামত হলো—নির্বাচনে যাওয়ার সব প্রক্রিয়া ও ধাপ তাঁদের অতিক্রম করা উচিত। ইসির সঙ্গে বৈঠক থেকে শুরু করে রাজনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি সংলাপের ব্যাপারেও এ জন্য দলটির নেতারা একমত। তাঁদের মনোভাব হলো—নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নির্বাচনমুখী সব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে হবে। কিন্তু সরকার উসকানি দিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করলে শেষ সময়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান ইসি, বিশেষ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ভূমিকায় বিএনপি সন্তুষ্ট নয়। তফসিল ঘোষণার আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দায়িত্ব ইসির নয়—তাঁর এমন বক্তব্যে দলটি ক্ষুব্ধ।</p> <p>তা ছাড়া সিইসির বিষয়ে আগে তেমন কোনো কিছু না জানলেও পরে তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। দলটি এও মনে করে, আগের রকিবউদ্দীন কমিশনের তুলনায় বর্তমান কমিশন আরো দুর্বল এবং চূড়ান্তভাবে তারা আওয়ামী লীগের পক্ষেই কাজ করবে। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় না থাকলে বা সহায়ক সরকারের দাবি পূরণ হলে এ কমিশনের পক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হবে না বলেই তাঁদের মূল্যায়ন। এ জন্যই ইসির ভূমিকার চেয়ে নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে—এটিই গুরুত্বপূর্ণ বিএনপির কাছে।</p> <p>স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে ইসির ওপর আমাদের আস্থা কম। কারণ ইতিমধ্যে কমিশনের কিছু বক্তব্যে আমাদের আশাভঙ্গ হয়েছে। তদুপরি ইসির ধারাবাহিক</p> <p>সংলাপের অংশ হিসেবে বিএনপি যাবে। কারণ গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচনের সব কর্মকাণ্ডকে বিএনপি মূল্য দেয়।’</p> <p>মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আমাদের আস্থা নেই, এটি পরিষ্কার। তার পরও আমরা যাচ্ছি; কারণ এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনো বিকল্প নেই।’ তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই কমিশন কিছু করতে পারবে—এমন ভূমিকা আমরা এখনো দেখিনি। সে জন্যই এদের কাছে প্রত্যাশা খুবই কম।’</p> <p> </p>