<p>আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারের পবিত্র ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি বিভিন্ন আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা (নতুন মুখ) নিজেদের এলাকায় ঈদ করেছেন। নির্বাচনের বাকি এখনো প্রায় দেড় বছর থাকলেও ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নামে পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে।</p> <p>ভিআইপি নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ঈদে ছিলেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। নেতাদের বাড়িতে ছিল মেজবানসহ বিভিন্ন আতিথেয়তা। সব মিলিয়ে এবারের ঈদুল আজহায় ছিল এক ধরনের নির্বাচনী আমেজ। তবে এ আমেজে সরকারি দলের নেতাদেরই বেশি তৎপরতা ছিল। তাঁরা নিজ নিজ এলাকা চষে বেড়ান। ঈদের নামাজ আদায়ের পর সময় কাটিয়েছেন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে।</p> <p>রমজানের ঈদের চেয়ে কোরবানির ঈদে জনপ্রতিনিধি ও নেতারা এলাকায় ছিলেন। যাঁরা দেশের বাইরে ছিলেন তাঁদের পক্ষেও প্রচার ছিল। </p> <p>ঈদের আগে-পরে গত পাঁচ দিন নেতাদের বাড়িতে ছিল কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীর ভিড়। আর নেতারাও গেছেন নিজেদের এলাকায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে।</p> <p>প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি নির্বাচনী কমিশনের নিবন্ধন থেকে বাদ পড়া জামায়াতে ইসলামীর নেতারাও ছিলেন মাঠে। তাঁরাও আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি এবারের কোরবানি ঈদে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন পোস্টার ও ঈদ শুভেচ্ছার মাধ্যমে।</p> <p>আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপির নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই)। ঈদুল আজহার আগের দিন শুক্রবার দুপুরে তিনি নির্বাচনী এলাকায় গ্রামের বাড়িতে যান। ঈদের দিন সকালে মিরসরাইয়ের ধুম গ্রামের ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায়ের পর বাড়িতে যান তিনি। সেখানে ছিল মিরসরাইয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দলীয় নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীর ভিড়। এদিকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।</p> <p>এ ব্যাপারে মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য শেখ আতাউর রহমান গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মোশাররফ ভাই এবার পাঁচটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। ঈদের দিন চার-পাঁচ হাজার নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ী তাঁর বাড়িতে আসেন।’ তাদের নিজে আপ্যায়িত করেছেন। বাড়িতে আগত সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। ঈদের দিন গরিব, অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণ করেন। এ ছাড়া ঈদের পরদিন তিনি নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে নিজে গিয়ে দেখা করেছেন। রবিবার দুপুরে মিরসরাই থেকে মন্ত্রী চট্টগ্রাম নগরের বাসভবনে যান। সেখান থেকে আজ (সোমবার) সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।’</p> <p>প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ঈদের দিন সকালে নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। তিনি চট্টগ্রাম-৯ (নগরের কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ঈদের নামাজের পর খুলশীর বাসভবনে আসা দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।</p> <p>প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর এপিএস নিয়াজ মোরশেদ নিরু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদের দিন স্যারের (মন্ত্রী) বাসভবনে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল। বাসভবনে যারাই গেছে, সবাইকে কোরবানির মাংস, রুটি, পরোটাসহ বিভিন্ন খাবারে অ্যাপ্যয়িত করা হয়। নির্বাচনী এলাকার সর্বস্তরের মানুষকে তিনি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।’</p> <p>শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন এমপি ঈদের নামাজ আদায় করেছেন বাড়ির মা-বাবার কবরের পাশের মসজিদে। তাঁর নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১০ (নগরের ডবলমুরিং-হালিশহর)। নামাজের পর তিনি দিনভর বাড়িতে অবস্থান করে আগত হাজারো নেতাকর্মীর সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পাঁচটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। বাড়িতে আসা সবাইকে আপ্যায়িত করেছেন।</p> <p>নির্বাচনী আমেজের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আফছারুল আমীন বলেন, ‘নির্বাচন তো এখনো ১৪ মাস বাকি রয়েছে। প্রতিবছর দুই ঈদেই আমার বাড়িতে ও নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য নানা আয়োজন থাকে। সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের অবহিত করেছি এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরেছি।’</p> <p>মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী হজ করার পর এখন সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। তাঁর ছেলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী মহীবুল হাসান নওফেল ঈদে বাড়িতে ছিলেন। মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘ঈদের দিন নওফেল নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে নামাজ আদায় করেন। এরপর নগরের চশমা হিলের বাসভবনে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ঈদে দুটি গরু কোরবানি দেন। চার-পাঁচ হাজার মানুষের জন্য মেজবানের আয়োজন করা হয়। এবারের ঈদে লক্ষ করা গেছে বর্তমান ও সাবেক বিভিন্ন এমপির পক্ষে তাঁদের কর্মী-সমর্থকরা ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার ও ব্যানার ছাপিয়েছে। এতে নির্বাচনের আমেজ দেখা গেছে।’</p> <p>সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ঈদের আগের দিন শুক্রবার সকালে বাসভবনে পা পিছলে পড়ে বাম পায়ে আঘাত পান। তিনি বাসায় বিশ্রামে আছেন। অসুস্থতার খবর পেয়ে ঈদের আগে-পরে দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল বাসভবনে। মেয়রের এপিএস রায়হান ইউসুফ বলেন, ‘এবার ঈদে মেয়র সাহেব প্রায় ১২ লাখ টাকায় কেনা চারটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য কয়েকটি ছাগল কোরবানি দেওয়া হয়েছে। গত চার দিন ধরে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল।’</p> <p>চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। তিনি চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবারের ঈদে তাঁর পক্ষে নেতাকর্মীরা নির্বাচনী এলাকায় তাঁকে প্রার্থী চেয়ে পোস্টার-ব্যানার সাঁটিয়েছে। শাহাদাতের এপিএস মো. মারুফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘তিনি দুটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। স্যারের বাসভবনে ঈদের দিন যাঁরাই শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেছেন তাঁদের সবাইকে ডাল, মাংস, পরোটা, বাকরখানিসহ বিভিন্ন খাবার পরিবেশন করেন।’</p> <p>সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম চট্টগ্রাম-১০ আসনের নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। কাট্টলী মোস্তফা হাকিম কলেজ মাঠে ঈদের নামাজ আদায়ের পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে তিনি সময় দেন। তিনি এবার ছয়টি গরু কোরবানি দিয়েছেন। নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এখনো অনেক দেরি আছে। আমার বাড়িতে সব সময় মানুষের ভিড় থাকে। এবারের ঈদেও সবাই এসেছেন। আমিও সবার সঙ্গে দেখা করতে গেছি।’ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাবেক নায়েবে আমির। এবারের ঈদে চট্টগ্রাম-১০ আসনের সর্বস্তরের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর পোস্টারে ছেয়ে গেছে। তবে ওই পোস্টারে দলীয় ও নিজের কোনো পদবি উল্লেখ করেননি সাবেক এই সংসদ সদস্য।</p> <p>এ ছাড়া চট্টগ্রাম-৯ আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও একই আসনে সিডিএ চেয়ারম্যান মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম-৮ আসনে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আসনে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, চট্টগ্রাম-১১ আসনে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চুসহ বিভিন্ন আসনে নেতা এবং নেতার পক্ষে তাদের অনুসারীরা পোস্টার ও ব্যানার দিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, ঈদ শুভেচ্ছার আড়ালে এবারের ঈদে অনেক নতুন মুখও প্রচার চালান।</p> <p>এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমি কোনো ব্যানার ও পোস্টার দিইনি। আমার ছবিসংবলিত ব্যানার ও পোস্টার বিভিন্ন এলাকায় দেখে অনেকে আমাকে ফোন করছেন। তবে আমি চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে এবার দলের (আ. লীগ) মনোনয়নপ্রত্যাশী।’ তিনি জানান, এবার তিনটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। গতকালও নেতাকর্মীদের ভিড় ছিল।</p>