<p>ইতুরি থেকে ডিআর কঙ্গোর ইতুরি প্রদেশটি আয়তনে বাংলাদেশের অর্ধেকের চেয়ে বড়। এ প্রদেশের গভর্নর ড. আবদুল্লাহ পেনে এমবাকা জেফারসন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কাছে ড. আবদুল্লাহ নামেই পরিচিত। বিদ্যান এ মানুষটির ইতিহাস ও শিল্পকলার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ। গত ১৬ ডিসেম্বর শান্তিরক্ষীদের ইতুরি ব্রিগেডে যখন বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদ্যাপন হচ্ছিল তখন বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি নিজের শ্রদ্ধা ব্যক্ত করেন ড. আবদুল্লাহ। ইতুরি ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রি. জে. কাজী মোহাম্মদ কায়সার জানান, ড. আবদুল্লাহ তাঁকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর একটি ভালো পোর্ট্রেট তিনি তাঁর (গভর্নর) অফিসে রেখে দিতে চান। তাঁর সেই চাহিদা পূরণ হলো গত মঙ্গলবার রাতে।</p> <p>ইতুরির প্রাদেশিক রাজধানী বুনিয়ার এনদ্রোমোতে ইতুরি ব্রিগেডের হেড কোয়ার্টারে ওই রাতে বুনিয়ার ডেপুটি মেয়র, ডিআর কঙ্গোর সেনাবাহিনীর কমান্ডার, বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষী দলের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপহার হিসেবে গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর পোর্ট্রেট। ড. আবদুল্লাহর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ উপহার তুলে দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ওয়কার-উজ-জামান। এক শুভেচ্ছা সফরে মেজর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আগের দিনই ডিআর কঙ্গোতে পৌঁছায়।</p> <p>এ প্রতিনিধিদলের সম্মানে ইতুরি ব্রিগেডের পক্ষ থেকে আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেন গভর্নর ড. আবদুল্লাহ, ডেপুটি গভর্নর পেসিফিক কেতা, বুনিয়ার ডেপুটি মেয়র মাদাম জাসতিন, ডিআর কঙ্গোর ইতুরি অঞ্চলের সেনা কমান্ডার ব্রি. জে. জ্যঁ পিয়ারে এবং অপারেশন প্রধান ব্রি. জে. রুগেই সেনগাবো দেভিদ। এ ছাড়া মরক্কো, নরওয়ে, ফ্রান্সসহ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারাও এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।</p> <p>ড. আবদুল্লাহ সম্পর্কে ব্রি. জে. কাজী মোহাম্মদ কায়সার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তিনি (আবদুল্লাহ) ডিআর কঙ্গোর স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রয়াত নেতা পেট্রিক লুলুম্বার অনুসারী। প্রভাবশালী এই প্রাদেশিক গভর্নর যেদিন বঙ্গবন্ধুর পোর্ট্রেট চাইলেন সেদিন আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর চাহিদা পূরণের সুযোগ খুঁজছিলাম। সামরিক সচিব আসাতে সেই সুযোগ পেয়ে গেলাম।’</p> <p>মঙ্গলবার রাতের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে চাইলে ড. আবদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক দূরের দেশ থেকে এঁরা এসেছেন আমাদের দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা তাঁদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছি। এ ছাড়া তাঁরা অনেক দূরের দেশ থেকে পরিবার পরিজন ছেড়ে, নিজেদের সাংস্কৃতিক পরিবেশের বাইরে আমাদের দেশে এসে বছরের পর বছর মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন—এটি অনেক বড় বিষয়।’ শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি যদি বর্তমান সময়টিকে বিশ্লেষণ করি, তা হলে দেখতে পাই এখনো অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থার দ্রুত অবসান হওয়া দরকার।’</p> <p>ডিআর কঙ্গোর সেনাবাহিনী এফএআরডিসির ইতুরি অঞ্চলের কমান্ডার ব্রি. জে. জেন পিয়ারে বলেন, ‘আমি শান্তিরক্ষী বাহিনীর ইতুরি ব্রিগেডের চারজন ব্রিগেড কমান্ডারের সঙ্গে কাজ করেছি। এঁরা জাতিসংঘের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে কাজ করে যাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে ব্যক্তির পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু কাজের ধারা একই। আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অন্যান্য দেশের শান্তিরক্ষীদের তুলনায় বেশি ইন্টেলিজেন্ট এবং অ্যাক্টিভ।’</p> <p>বিভিন্ন সময় নিহত শান্তিরক্ষীদের প্রতি শ্রদ্ধা : জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বিশেষ করে বাংলাদেশিদের জন্য একটি শোকার্ত দিন ছিল ২০০৫ সালের ২৫ মার্চ। ওই দিন ইতুরি প্রদেশের দুর্গম একটি এলাকায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৯ শান্তিরক্ষী সদস্য সে দেশের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের অতর্কিত আক্রমণে নিহত হন।  এরপর ওই বছরের ১২ মে আরেকটি অ্যাম্বুশে নিহত হন এক বাংলাদেশি সৈনিক এবং ২০০৭ সালের ৮ এপ্রিল দুর্গম পথে এপিসি উল্টে নিহত হন আরেক বাংলাদেশি সৈনিক। এঁদের স্মরণে এনদ্রোমোতে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিসৌধ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক সচিব গত মঙ্গলবার সকালে ওই স্মৃতিসৌধে এসব শান্তিরক্ষীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।</p>