<p>দেশে বর্তমানে ৩০টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থাকলেও সরকারিভাবে একটি ডেন্টাল কলেজ (ঢাকা ডেন্টাল কলেজ) রয়েছে। সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর মধ্যে মাত্র আটটিতে ডেন্টাল ইউনিট আছে। এসব ইউনিটের মধ্যে ২৮ বছর আগে চালু হওয়া চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ দুটির ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জে নতুন করে একটি সরকারি ডেন্টাল কলেজ হতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৫৭ বছর পর সরকারিভাবে দেশে তিনটি ডেন্টাল কলেজ হবে। যেকোনো সময় আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ডেন্টাল কলেজের নাম ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।</p> <p>এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য  অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসাশিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবদুর রশিদ গতকাল সোমবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজে রূপান্তরের জন্য সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর্যায়ে আছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জেও সরকারি একটি ডেন্টাল কলেজ হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, দেশে ৩০টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং ৬৯টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। সরকারিভাবে বর্তমানে একটি মাত্র ডেন্টাল কলেজ আছে।</p> <p>গত বছর চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। গত বুধবার চট্টগ্রাম সফরকালে নগরীর সার্কিট হাউসে এক সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানান, খুব তাড়াতাড়ি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।</p> <p>রাজশাহী ও চট্টগ্রামে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এ দুটি বিভাগীয় শহরে এবার দুটি সরকারি ডেন্টাল কলেজ হতে যাচ্ছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে ১০৫টি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে একটি সরকারি ও পাঁচটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ। এদিকে সর্বশেষ গত বছরের ১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজে রূপান্তর করার বিষয়ে অতিরিক্ত সচিবের (চিকিৎসাশিক্ষা) সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট দুটি ১৯৮৯ সালে শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৩টি ব্যাচ বের হয়েছে কলেজ দুটি থেকে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটটি সাবেক রাজশাহী সদর হাসপাতাল ক্যাম্পাসে পরিচালিত হচ্ছে। ওই ক্যাম্পাসে প্রায় ২ দশমিক ৭৫ একর জায়গা রয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম, ক্লাস ও হাসপাতাল পরিচালনার জন্য একটি দোতলা ভবন আছে। এ ছাড়া রাজশাহী ডেন্টাল কলেজের নামে ছয় তলা ভিতের ওপর অপর একটি চার তলা ভবনের নির্মাণকাজ ২০১০ সালে শেষ হয়েছে; যার মোট আয়তন ৩২ হাজার ২৯৬ বর্গফুট। বর্তমানে ওই ভবনে ডেন্টাল কলেজের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। ক্যাম্পাসে আরো ভবন নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা আছে। ডেন্টাল ইউনিটে প্রতি ব্যাচে ৫৯ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং ১৬ জন শিক্ষক ও চিকিৎসক কর্মরত। আরো ১১৬টি শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃষ্টির প্রস্তাবনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।</p> <p>অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে একটি পাঁচ তলা ভবনে পরিচালিত হচ্ছে; যার মোট ফ্লোর আয়তন ৩০ হাজার বর্গফুট। অপর একটি ভবন, যার ফ্লোর আয়তন ১৩ হাজার বর্গফুট। এটি মেরামত সাপেক্ষে ডেন্টাল কলেজের জন্য ব্যবহার করা যাবে। ইউনিটে প্রতি ব্যাচে ৬০ জন বিডিএস শিক্ষার্থী এবং ২৩ জন শিক্ষক ও চিকিৎসক কর্মরত। আরো ১১৬ জন শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।</p> <p>সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ঢাকার মিরপুরে ১৯৬০ সালে সরকারি ঢাকা ডেন্টাল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। এরপর দেশে আর কোনো সরকারিভাবে ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দন্ত চিকিৎসাসেবা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২২ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সভায় চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছেন। এরপর দফায় দফায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে এ লক্ষ্যে সভা হয়েছে।</p> <p>২০১৬ সালের ১০ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ ঘোষণার লক্ষ্যে ওই দুই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর একই বছরের ৩১ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ইতিবাচক মতামত পাঠিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ চালু হলে দন্ত চিকিৎসাসেবার পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ প্রদান আরো আধুনিক ও উন্নততর হবে। আন্ত বিভাগ, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে কাজের পরিসর বাড়বে। গবেষণা ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ট্রেনিং সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। ফলে ডেন্টাল সার্জনদের কাজের মান ও রোগীদের সেবার মান বাড়বে। চিকিৎসক, নার্স, ডেন্টাল টেকনোলজিস্টসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। স্নাতকোত্তর কোর্স ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।</p> <p>অন্যদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মাসুম হাবিব গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এসংক্রান্ত মতামত পাঠান। এতে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ হিসেবে চালু করা হলে বর্তমান ইউনিট অপেক্ষা অনেক বেশি চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাবে। রাজশাহী শহরে ১৯৮৯ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিট প্রতিষ্ঠা লাভের পর রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গবাসীকে দন্ত চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছে। ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনে গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয় ওই মতামতে।</p>