দেশে বর্তমানে ৩০টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থাকলেও সরকারিভাবে একটি ডেন্টাল কলেজ (ঢাকা ডেন্টাল কলেজ) রয়েছে। সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর মধ্যে মাত্র আটটিতে ডেন্টাল ইউনিট আছে। এসব ইউনিটের মধ্যে ২৮ বছর আগে চালু হওয়া চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ দুটির ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে।
চট্টগ্রাম রাজশাহী গোপালগঞ্জ
তিনটি সরকারি ডেন্টাল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত
নূপুর দেব, চট্টগ্রাম

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসাশিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবদুর রশিদ গতকাল সোমবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজে রূপান্তরের জন্য সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত বছর চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। গত বুধবার চট্টগ্রাম সফরকালে নগরীর সার্কিট হাউসে এক সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানান, খুব তাড়াতাড়ি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
রাজশাহী ও চট্টগ্রামে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এ দুটি বিভাগীয় শহরে এবার দুটি সরকারি ডেন্টাল কলেজ হতে যাচ্ছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে ১০৫টি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট দুটি ১৯৮৯ সালে শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৩টি ব্যাচ বের হয়েছে কলেজ দুটি থেকে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটটি সাবেক রাজশাহী সদর হাসপাতাল ক্যাম্পাসে পরিচালিত হচ্ছে। ওই ক্যাম্পাসে প্রায় ২ দশমিক ৭৫ একর জায়গা রয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম, ক্লাস ও হাসপাতাল পরিচালনার জন্য একটি দোতলা ভবন আছে। এ ছাড়া রাজশাহী ডেন্টাল কলেজের নামে ছয় তলা ভিতের ওপর অপর একটি চার তলা ভবনের নির্মাণকাজ ২০১০ সালে শেষ হয়েছে; যার মোট আয়তন ৩২ হাজার ২৯৬ বর্গফুট। বর্তমানে ওই ভবনে ডেন্টাল কলেজের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। ক্যাম্পাসে আরো ভবন নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা আছে। ডেন্টাল ইউনিটে প্রতি ব্যাচে ৫৯ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং ১৬ জন শিক্ষক ও চিকিৎসক কর্মরত। আরো ১১৬টি শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃষ্টির প্রস্তাবনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে একটি পাঁচ তলা ভবনে পরিচালিত হচ্ছে; যার মোট ফ্লোর আয়তন ৩০ হাজার বর্গফুট। অপর একটি ভবন, যার ফ্লোর আয়তন ১৩ হাজার বর্গফুট। এটি মেরামত সাপেক্ষে ডেন্টাল কলেজের জন্য ব্যবহার করা যাবে। ইউনিটে প্রতি ব্যাচে ৬০ জন বিডিএস শিক্ষার্থী এবং ২৩ জন শিক্ষক ও চিকিৎসক কর্মরত। আরো ১১৬ জন শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ঢাকার মিরপুরে ১৯৬০ সালে সরকারি ঢাকা ডেন্টাল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। এরপর দেশে আর কোনো সরকারিভাবে ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দন্ত চিকিৎসাসেবা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২২ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সভায় চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছেন। এরপর দফায় দফায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে এ লক্ষ্যে সভা হয়েছে।
২০১৬ সালের ১০ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ ঘোষণার লক্ষ্যে ওই দুই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর একই বছরের ৩১ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ইতিবাচক মতামত পাঠিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ চালু হলে দন্ত চিকিৎসাসেবার পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ প্রদান আরো আধুনিক ও উন্নততর হবে। আন্ত বিভাগ, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে কাজের পরিসর বাড়বে। গবেষণা ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ট্রেনিং সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। ফলে ডেন্টাল সার্জনদের কাজের মান ও রোগীদের সেবার মান বাড়বে। চিকিৎসক, নার্স, ডেন্টাল টেকনোলজিস্টসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। স্নাতকোত্তর কোর্স ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
অন্যদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মাসুম হাবিব গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এসংক্রান্ত মতামত পাঠান। এতে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ হিসেবে চালু করা হলে বর্তমান ইউনিট অপেক্ষা অনেক বেশি চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাবে। রাজশাহী শহরে ১৯৮৯ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিট প্রতিষ্ঠা লাভের পর রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গবাসীকে দন্ত চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছে। ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনে গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয় ওই মতামতে।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’